মোঃ সুমন হোসেন : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের উদ্যোগে রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১২টায় ডিএনসিসির নগর ভবনে মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে ইজারাদাররা ইজারার চেক হস্তান্তর করেন। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বাস টার্মিনাল দুটিকে এক বছরের জন্য মোট ১২ কোটি এক লাখ ২০ হাজার টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে।
এসময় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল দুটি থেকে সেভাবে কোনো রাজস্ব আদায় করা যায়নি। আমি এসে দেখেছি এখানে অনেক আগে থেকেই গলদ ছিল। একজনকে আদায়কারীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সেখানে একটা ক্লজ ছিল - হরতাল বা বিভিন্ন কারণে যখন পরিবহন বন্ধ থাকবে, তখন ডিএনসিসিকে কোনো টাকা দিতে হবে না। এই সিদ্ধান্তগুলো ভুল ছিল। তারা তাদের পাওনা টাকা তো দেয়নি, বরং সিটি করপোরেশনের কাছে টাকা দাবি করেছে।
তিনি বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার জন্য এই ধরনের অসম চুক্তি করা হয়েছিল। আমি বলেছি এ ধরনের অসম চুক্তি আমরা মেনে নিতে পারি না। এর ফলে সিটি করপোরেশন রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই আমরা উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দিয়েছি। আমরা যখন ইজারা দিতে গেলাম, আমাদের কর্মকর্তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, কারো কথা শোনার দরকার নাই। নিয়ম অনুযায়ী দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দেয়া হবে।
গত এক যুগে এই দুই বাস টার্মিনাল থেকে দেড়শ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা যেত উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, এখন ইজারাদারদেরকে বাস টার্মিনালগুলোতে সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শর্ত দেয়া হয়েছে। অন্যথায় ইজারা বাতিল হবে। আগের বিশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখা যাবে না। এই যে নতুন সিস্টেমের প্রচলন হতে যাচ্ছে, এভাবে আস্তে আস্তে রাজধানীতে পরিবর্তন আসবে।
ডিএনসিসি জানিয়েছে, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের আমলে নামমাত্র মূল্যে টার্মিনাল দুটি থেকে রাজস্ব আদায়ের জন্য আদায় সহযোগিতাকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এক যুগেও এই আদায়ের জন্য নির্ধারিত টাকার পরিমান বাড়ানো হয়নি। এছাড়া আদায় সহযোগিতাকারীরা নানান অযুহাতে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় চার কোটি টাকা নগর কর্তৃপক্ষকে জমা দেয়নি।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ১১ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত এক বছরের জন্য লালমাটিয়াস্থ রাফি ট্রেডার্স লিমিটেডকে বাৎসরিক সাত কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকায় গাবতলী টার্মিনাল ইজারা দেয়া হয়েছে। টার্মিনালের বিদ্যুৎ ও পানির বিল ইজারাদার পরিশোধ করবে।
এর আগে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের আদায় সহযোগিতাকারী হিসেবে অবিভক্ত সিটি করপোরেশন থাকাকালে ২০০৯ সালের ৪ মে দৈনিক এক লাখ ১৭ হাজার টাকা হিসেবে জসিম উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়া হয়। সে সময় ভ্যাট, আয়কর, বিদ্যুৎ ও পানির বিল ডিএনসিসি পরিশোধ করত। গত বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তার কাছে ডিএনসিসির বকেয়া পাওনা ছিল দুই কোটি ৭৭ লাখ ৯৭ হাজার ৮৭৩ টাকা।
মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের রাজস্ব আদায়ের জন্য ইব্রাহিমপুরের গাজী রাইয়ান এন্টারপ্রাইজকে ২৬ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ২৫ জানুয়ারি ২০২২ এই এক বছরের জন্য চার কোটি ৬২ লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়। এছাড়া এই টার্মিনালের বিদ্যুৎ ও পানির বিল ইজারাদারকে পরিশোধ করতে হবে।
মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের আদায় সহযোগিতাকারী হিসেবে অবিভক্ত সিটি করপোরেশন থাকাকালে ২০০৯ সালের ১০ মে দৈনিক ৫০ হাজার ৫০০ টাকা হিসেবে মেসার্স সহিদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজকে নিয়োগ দেয়া হয়। ভ্যাট, আয়কর, বিদ্যুৎ ও পানির বিল ডিএনসিসি থেকে পরিশোধ করা হতো। গত বছরের ৩১ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির কাছে ডিএনসিসির বকেয়া পাওনা ছিল এক কোটি ২০ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা।
চেক হস্তান্তরকালে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) মিজানুর রহমান, প্রধান, ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা সগীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:২০:৫৪ ৫৪১ বার পঠিত #ইজারা #গাবতলী-মহাখালী আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল #ডিএনসিসি #মেয়র