আমি আমার ক্লাশে সবসময় পাঠ্য বইয়ের বাইরে কিছু ‘জেনারেল নলেজ’ পর্ব সংরক্ষিত করে রেখে দেই আমার শিক্ষার্থীদের জন্য এবং তারা তাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করে ৷ সেখানে আমি ওদের প্রথমেই জিজ্ঞাসা করি,আপনারা কি লাইব্রেরীতে যান এবং পাঠ্য বইয়ের বাইরে কি কোনো বই পড়া হয়? তখন তাদের রেসপন্স দেখে আমি মনে মনে খুব আহত হই কারন দেখতে পাই প্রতি একশজনের মধ্যে মাত্র আট/দশ জন হাত তুলছে ৷ আর যখন প্রশ্ন করি , ‘বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের ইতিহাস বা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-ভাষা আন্দোলন, উপমহাদেশের ইতিহাস’ মূলক বই পড়ছেন কারা কারা? তখন মাত্র দু’চারজন এর হাত দেখতে পাই ৷ এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন আর তা হছ্ছে, আমাদের দেশের অর্থাৎ বাংলাদেশের বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় (পাবলিক ও প্রাইভেট)-এর লাইব্রেরীগুলোতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ,কৃষ্টি-সংস্কৃতি,ইতিহাস,ঐতিহ্য ও ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাস, উপমহাদেশে বিট্রিশ শাসনামলের ইতিহাস ইত্যাদি বইগুলো নেই বললেই চলে৷ ব্যাপারটি আমার নলেজে এই কারনে এসেছে যে, আমি আমার সর্বমোট ষোল বছরের শিক্ষকতা জীবনে ফুলটাইম প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছি যথাক্রমে দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও বর্তমানে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউট)এ৷এছাড়া এই ষোল বছরে ভিজিটিং বা পার্টটাইইম শিক্ষক হিসেবেও পড়িয়েছি ও পড়াছ্ছি বেশ কয়েকটি ইউনিভার্সিটিতে এবং তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইউনিভার্সিটিগুলো হছছে: স্টামফোর্ড ইউনভারসিটি বাংলাদেশ, আর্মি ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (বিউপির অধিভুক্ত), বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ৷এছাড়া কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেকে গবেষনায় যুক্ত রেখেছি৷ আমরা যখনই যে ইউনিভার্সিটিতে পড়াই, তখনি সেখানে ক্লাশের ফাঁকে ফাঁকে আমাদের লাইব্রেরীতে পড়তে বা বই ইস্যু করতে যেতে হয় এবং সে সময়টাতে আমি অত্যন্ত সচেতনভাবে উক্ত লাইব্রেরীর সংগৃহীত বইগুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকি৷ সেইসব পর্যবেক্ষন পর্যালোচনা করলে সামারি এটাই দাড়ায়, যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাইব্রেরীগুলোই যেখানে সেদেশের নিজস্ব কৃষ্টি,সংস্কৃতি, ইতিহাস সংরক্ষণে উদাসীন, সেখানে দাড়িয়ে আমরা কি করে আশা করতে পারি যে, আমাদের নতুন প্রজণ্ম সঠিকভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসটি জেনে বেড়ে উঠছে !নতুন প্রজন্মের এই অজ্ঞতা, গুরুজনে অভক্তি, নীতিহীন কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া, মাদকাশক্তি ও অন্যান্য সামাজিক অপরাধে লিপ্ত হওয়ার জন্য আসলে তারা দায়ী নয়,দায়ী আমাদের পারিপ্বার্শিক সমাজব্যবস্হা ৷আর এ কারনেই ‘নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক আমার এ কলামটিতে আমি ‘ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও উপমহাদেশের ইতিহাস ’ নিয়ে আমাদের বাঙালি বু্দ্ধিজীবিদের বিভিন্ন বক্তব্য,বই ও অন্যান্য রচনাবলীকেও একসঙ্গে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা খুব সহজেই এই বইগুলো সংগ্রহ করে এ বিষয়ে সঠিকটাই জেনে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে পারে ৷
তাই বাঙ্গালির ডিটেইলস ‘ভাষা-আন্দোলন’ এর ইতিহাসটুকু জেনে নেয়ার এ পর্যায়ে আমরা আমাদের দেশবরেন্য লেখক,বুদ্ধিজীবি, শিক্ষক ও সাংবাদিকগণ ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও সামগ্রিক ইতিহাস’ সম্পর্কে কে কি বলেছেন বা কোন কোন বই রচনা করেছেন,সে সম্পর্কে জেনে নেবো যাতে করে আপনি,আমি,তুমি,সে এবং অন্য সকল শ্রেনীর পাঠকগণ ব্যক্তিগতভাবে বইগুলো সংগ্রহ করে পড়ে নিতে পারে এবং আমাদের সরকার থেকে শুরু করে সকল স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অথোরিটিগণ এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে তাদের লাইব্রেরীগুলোকে সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে ৷এছাড়াও এই রচনাগুলোর উপর ভিত্তি করে আমাদের নাটক,গীতিনাট্য,চলচ্চিত্রগুলো নির্মিত হতে পারে অতি সহজেই৷ তবেই আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ভান্ডার আমাদের নিজস্ব আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে৷ স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও আমাদের সে ভান্ডার আজও অন্ধকারে নিমজ্জিত ৷ এ স্হবির অবস্হা হতে আমাদের মুক্তি দরকার৷
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের তালিকা :
গল্প/উপন্যাস :
উত্তরকাল — আমজাদ হোসেন (অ্যাডর্ন পাবলিশার্স), মা– আনিসুল হক(সময় প্রকাশনী),আমার বন্ধু রাশেদ — মুহম্মদ জাফর ইকবাল(কাকলী প্রকাশনী), তালাশ - -শাহীন আখতার(মাওলা ব্রাদার্স),চিলেকোঠার সেপাই–আখতারুজ্জামান ইলিয়াস(দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড) , সোনাঝরা দিন–তাহমিমা আনাম (সাহিত্য প্রকাশ),জোছনা ও জননীর গল্প–হুমায়ূন আহমেদ(অন্য প্রকাশ),সৌরভ–হুমায়ূন আহমেদ (স্টুডেন্ট ওয়েজ),জাহান্নাম হইতে বিদায়–শওকত ওসমান(স্টুডেন্ট ওয়েজ),ওঙ্কার–আহমদ ছফা(স্টুডেন্ট ওয়েজ),১৯৭১–হুমায়ূন আহমেদ(মাওলা ব্রাদার্স),অনীল বাগচীর একদিন–হুমায়ূন আহমেদ, দেয়াল–হুমায়ূন আহমেদ, আগুনের পরশমণি–হুমায়ূন আহমেদ(হাতেখড়ি প্রকাশনী),শ্যামল ছায়া–হুমায়ূন আহমেদ(স্টুডেন্ট ওয়েজ),নেকড়ে অরন্য–শওকত ওসমান(স্টুডেন্ট ওয়েজ),দুই সৈনিক–শওকত ওসমান (স্টুডেন্ট ওয়েজ),একাত্তরের পথের ধারে–শাহরিয়ার কবির, একাত্তরের যীশু–শাহরিয়ার কবির,আকাশ বাড়িয়ে দাও –মুহম্মদ জাফর ইকবাল,কাচ সমুদ্র–মুহম্মদ জাফর ইকবাল,বীর প্রতীকের খোঁজে–আনিসুল হক(সময় প্রকাশন),একাত্তর উপাখ্যান–সাইদ হাসান দারা(সময় প্রকাশন),ক্যাম্প–মুহম্মদ জাফর ইকবাল(অনন্যা প্রকাশনী),নিষিদ্ধ লোবান–সৈয়দ শামসুল হক(অনন্যা প্রকাশনী),হাঙর নদী গ্রেনেড–সেলিনা হোসেন,বিশ্বাসঘাতকগণ–আফসান চৌধুরী(দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড),হায়েনার খাঁচায় অদম্য জীবন–মন্টু খান(মুক্তধারা প্রকাশনী ),জননী সাহসিনী ১৯৭১–আনিসুল হক, নতুন দিগন্ত সমগ্র–আব্দুর রউফ চৌধুরী(পাঠক সমাবেশ)———–(চলবে) ৷
তথ্যসূত্র: বুকস, ইন্টারনেট
লেখক: ফারহানা আকতার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক গবেষক এবং কলামিস্ট ৷
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩৬:১২ ৮৫৭ বার পঠিত # #নতুন প্রজণ্ম #ফারহানা আকতার #বাংলাদেশ #ভাষা আন্দোলন #মুক্তিযুদ্ধ