বঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ ইরানের ‘কাভোশগার’ বা অনুসন্ধানী নামক রকেটযোগে মহাকাশে বানর পাঠানোর খবর বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
জার্মান টেলিভিশন ডয়েচেভেলে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইরানের বিজ্ঞানীরা বানরবাহী এই রকেটটিকে ‘অত্যন্ত সফলভাবে’ ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঁচুতে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।
বিবিসি টেলিভিশনও বলেছে, ইরানের বিজ্ঞানীরা এর আগেও বিস্ময় সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। কারণ, ইরান ২০০৯ সালে প্রথমবারের মত নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ‘উমিদ’ বা ‘আশা’ নামক উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছিল। ইসলামী ইরানের কর্মকর্তারা ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর আশা করছেন - এ কথা উল্লেখ করে বিবিসি আরো বলেছে, পাশ্চাত্যের ব্যাপক চাপ ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তেহরান বিশ্ববাসীর বিস্ময় সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে।
রাশিয়া টুডে টেলিভিশনও এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইরানের বিজ্ঞানীরা বানরবাহী রকেটটিকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঁচুতে অত্যন্ত সফলভাবে পাঠিয়ে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। আর এই রকেটটিতে থাকা বানরটি জীবিত অবস্থায় আবারও ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসায় ইরান সহজেই মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতির পথ সুগম করতে পারবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সও তেহরান থেকে পাঠানো এক রিপোর্টে বলেছে, মহাকাশ গবেষণায় ইরানের রকেট উতক্ষেপণের এই অসাধারণ সাফল্য অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেশটির সক্ষমতা বা সাফল্য তুলে ধরছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থাও তেহরান থেকে পাঠানো এক রিপোর্টে বলেছে, ইরানের বিজ্ঞানীরা ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২০ কিলোমিটার উঁচুতে বানরবাহী রকেট পাঠিয়েছে ও তা জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে। আর এরফলে ২০২০ সালের মধ্যে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশটি বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করল। ইরান এর আগেও মহাকাশে জীবিত প্রাণী পাঠানোর প্রকল্পে সফল হয়েছিল, একথা উল্লেখ করে ফরাসি বার্তা সংস্থা আরো বলেছে, এই সাফল্য মহাকাশকে করায়ত্ত করার ক্ষেত্রে ইরানের প্রথম পদক্ষেপ এবং দেশটির অন্যান্য পরীক্ষার জন্যও পথ দেখিয়ে দিল এই সাফল্য। একই ধরনের মন্তব্য করেছে রুশ টেলিভিশন।
উল্লেখ্য, মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি হিসেবে পিশগাম বা অভিযাত্রী নামের বায়ো-ক্যাপসুলে করে গতকাল (সোমবার) মহাকাশে বানর পাঠিয়েছে ইরান। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র জন্মদিন ও ইসলামী বিপ্লবের ৩৪ তম বিজয়-বার্ষিকীর প্রাক্কালে এ সাফল্য অর্জন করল ইরান। এর মাধ্যমে ইরান মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে সাফল্যের আরেকটি চূড়া অতিক্রম করল। বিশ্বের হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশ মহাকাশে জীবন্ত প্রাণী পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।
এদিকে মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে ইরানের সর্বশেষ এই সাফল্যের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটির চিরশত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরাইল। ইরান মহাকাশ প্রযুক্তিকে পরমাণু অস্ত্র বহনের মত সামরিক কাজে ব্যবহার করতে পারে বলে মার্কিন ও ইহুদিবাদী কর্মকর্তারা দাবি করে আসছেন। কিন্তু ইসলামী ইরান এসব দাবি নাকচ করে দিয়ে বলছে, তার পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। ইরান পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটিতে স্বাক্ষর করেছে। এ ছাড়াও দেশটি মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৫৯ সালে ২৪ টি দেশের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয়েছিল এ কমিটি।
বাংলাদেশ সময়: ৮:১১:০৬ ৫১৩ বার পঠিত