বঙ্গ-নিউজ ডটকম: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল এবং দলটির নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করার জন্য মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান জামায়াত।
পাকিস্তান জামায়াতের আমির সৈয়দ মুনাওয়ার হাসান বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, “জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ আক্রান্ত হচ্ছে। নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে এবং তাদেরকে যাবজ্জীবন সাজা, এমনকি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে।”
সৈয়দ মুনাওয়ারকে উদ্ধৃত করে পাকিস্তানের দি নিউজ লিখেছে, আদালতের এই রায়কে ‘অসাংবিধানিক, আংশিক ও পক্ষপাতদুষ্ট’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ভারতপন্থী হাসিনা ওয়াজেদ সরকারের’ প্রতিহিংসা রোধে বিশ্বের সব দেশ, গণতান্ত্রিক শক্তি ও মুসলিম রাষ্ট্রসমূহকে ভূমিকা রাখার আবেদন জানিয়েছেন পাকিস্তান জামায়াতের আমির।
এক রিট আবেদনের রায়ে বাংলাদেশ হাই কোর্ট বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে।
এই রায়ের ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, কেননা আইন অনুযায়ী, কেবল নিবন্ধিত দলই বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।
মুনওয়ার তার বিবৃতিতে বলেন, “এতোদিন তথাকথিত ট্রাইব্যুনাল এ কাজ করলেও এখন একই কাজে নেমেছে হাই কোর্ট। নির্বাচন থেকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে দূরে রাখতেই নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।”
উপমহাদেশের বিতর্কিত ধর্মীয় রাজনীতিক আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালের ২৬ অগাস্ট জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে দলটির যাত্রা শুরু হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত ও এর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ। জামায়াতের তখনকার পূর্ব পাকিস্তান শাখার আমির গোলাম আযমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে সে সময় বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটানো হয় বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ঘোষিত রায়গুলোতে উঠে এসেছে।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে ফিরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমিরের দায়িত্ব নেন গোলাম আযম। একাত্তরে যুদ্ধাপাধের দায়ে চলতি মাসেই এক রায়ে তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল।
ট্রাইব্যুনালের এই বিচারকে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলায় পাকিস্তান সরকারেরও সমালোচনা করেছেন জামায়াত আমির মুনাওয়ার।
তার ভাষায়, পাকিস্তান সরকারের এই অবস্থান ‘জঘন্য অন্যায়’ ও ‘পুরোপুরি অনাকাঙ্ক্ষিত’।
তিনি দাবি করেন, “বর্তমানে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জামায়াতের পক্ষে দাঁড়ালেও মূলত ভারতের আদেশে দলটিকে জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখতে এবং ধ্বংস করতে চায় শেখ হাসিনা সরকার।”
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো- তারা বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছেন এবং একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন’ বানচাল করতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সমর্থন করেছেন। পাকিস্তানকে ‘ঐক্যবদ্ধ রাখার সংগ্রামের জন্যই’ বাংলাদেশে জামায়াত নেতাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
পাকিস্তানের দুনিয়ানিউজ ডট টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “সাবেক জামায়াত আমির গোলম আযম ও তার সহযোগীদের ওপর হাসিনা সরকারের আক্রমণের বিরুদ্ধে শুধু মৌখিক প্রতিবাদ নয়, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কবল থেকে তাদের মুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববাসী, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তান জামায়াতের আমির।
মুনাওয়ার দাবি করেছেন, গত চার দশক ধরে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে, যার কারণে দলটি ভাল জনসমর্থনও পেয়েছে।
“জামায়াত বাংলাদেশের ক্ষমতায়ও ছিল। তাই দলটিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে এবং এর নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে দেয়া ঢাকা হাই কোর্টের রায় গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারকে হত্যার সামিল।”
বাংলাদেশ সময়: ০:২০:৩৮ ৫৮৭ বার পঠিত