“আইনের অসঙ্গতি এবং আমাদের দায়” (পর্ব-১)

Home Page » বিবিধ » “আইনের অসঙ্গতি এবং আমাদের দায়” (পর্ব-১)
বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০



(ফাইল ছবি) আবু তাহের তাহসান

আবু তাহের তাহসানঃ  আমাদের ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের প্রধান উদ্দেশ্য (যদি দেশের প্রচলিত অপরাধ সংক্রান্ত আইন বিশ্লেষণ করে বলি) হচ্ছে একজনকে শাস্তি দিয়ে অন্যজনের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, শিক্ষা দেয়া, যেনো অন্য ব্যক্তি একই অপরাধ করতে ভয় পায় এবং করার আগে ভাবে এবং এভাবেই সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। যাকে আইনবিজ্ঞানের ভাষায় Deterrent Theory বলা হয়।

ব্যক্তির প্রতিশোধপরায়ন মনোভাবকে নিয়ন্ত্রণ করে ব্যক্তির/ভিক্টিমের পক্ষে রাষ্ট্র অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা। অপরাধের মানদণ্ড নির্ধারণ এবং শাস্তি প্রদানের জন্য দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (এই সালে প্রণীত) আমাদের দেশের মূল আইন। আজকে এই আইনের দুইটা ধারা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

দণ্ডবিধির ৫১০ ধারায় বলা আছে, যদি কোন ব্যক্তি নেশাগ্রস্থ হয়ে প্রকাশ্যে অসদাচারণ (কোন স্থানে গমন বা অনধিকার প্রবেশ কিংবা কাউকে বিরক্ত) করেন, তবে সেই ব্যক্তির ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা দশ(১০) টাকা পরিমাণ জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

দণ্ডবিধির ৬৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি কোনো অপরাধের শাস্তি হিসেবে শুধু অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হয় এবং উক্ত অর্থদণ্ড আদায় করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে,

৫০ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অনাদায়ের জন্য দুই মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন, ১০০ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অনাদায়ের জন্য চার মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন

এবং তার ঊর্ধ্বে অর্থদণ্ড অনাদায়ের জন্য ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের যে উদ্দেশ্য শুরুতেই বলা হয়েছে তার সাথে উপরে উল্লেখিত দুইটি ধারা মিলান। যদি শাস্তি দিয়ে অন্যজনের কাছে নজির সৃষ্টি করাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই সে শাস্তি বাস্তবসম্মত হতে হবে। ২৪ ঘন্টার পরিবর্তে ১০ টাকা জরিমানা কিংবা ৪০ টাকার পরিবর্তে দুই মাসের কারাদণ্ড, এই বিষয়গুলো বর্তমান সময়ের সাথে যায়? আপনি কাউকে ১০ টাকা জরিমানার ভয় দেখিয়ে প্রকাশ্যে মাতলামি করা থামাতে পারবেন, নাকি অন্য ব্যক্তি যেনো মাতলামির অপরাধ না করে তার জন্য নজির সৃষ্টি করতে পারবেন??

১৮৬০ সালে যখন দণ্ডবিধি প্রণয়ন করা হয়, তখনকার সময় অনুসারে ১০ টাকা জরিমানা কিংবা ৪০-৫০ টাকার পরিবর্তে দুই মাসের কারাদণ্ড সময়োপযোগী ছিল। কিন্তু ২০২০ এ কি এটা রিফর্ম করা উচিৎ না?? ব্রিটিশ শাসনামলে প্রণীত এরকম প্রতিটা আইনে অসঙ্গতি আছে এবং আইনগুলো হালনাগাদ করা প্রয়োজন যদি আপনি এই আইন দিয়ে সমাজে এবং সমাজের মানুষের উপর ইম্প্যাক্ট ফেলতে চান। কিন্তু এই হালনাগাদের দায়িত্ব/কর্তব্য কার?? আমাদের রাষ্ট্রের ৩টা বিভাগ রয়েছে। আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ এবং বিচারবিভাগ। আইন বিভাগের একমাত্র এবং প্রধান কাজ আইনপ্রণয়ন। শাসনবিভাগ সেই আইন বাস্তবায়ন করবে এবং বিচারবিভাগের কাজ হচ্ছে আইনবিভাগ প্রণীত আইন দ্বারা অপরাধের বিচার করা। এখন কোন বিচারচক যদি ৪০ টাকা অনাদায়ে ২ মাস কারাদণ্ড প্রদান করেন, কিংবা প্রকাশ্যে মাতলামি করে অন্য মানুষকে বিরক্ত করা অপরাধীকে ১০ টাকা অর্থদণ্ড দেন, তাহলে আপনি ট্রল করবেন, হাসাহাসি করবেন। কিন্তু আমাদের আইনপ্রণেতারা (সংসদ সদস্যগণ) ৫০ বছরেও কেনো এই পুরানো আইন হালনাগাদ করলেন না, সেটা কেউ প্রশ্ন করবেন না। আমাদের সমস্যাগুলোর জন্য আমরা সমানভাবে দায়ী না হলেও, দায়মুক্ত না।

লেখকঃ আবু তাহের তাহসান,লেকচারার, আইন বিভাগ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ 

বাংলাদেশ সময়: ১২:০৩:৫৩   ৮২৭ বার পঠিত   #  #  #




বিবিধ’র আরও খবর


ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ, সরানো নিয়ে প্রশ্ন
১৮ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক
দেখা হবে কতো দিনে: রাধাবল্লভ রায়
মধ্যনগর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শেখ কামালের জন্মদিন পালন
দেশের ১৫ জেলায় ঝড়বৃষ্টির আভাস
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
ড. ইউনূসের মামলা বাতিল আবেদন শুনানি ১১ আগস্ট
সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৩৪; স্বপন চক্রবর্তী
রোহিঙ্গা যুবক নুর বারেক আটক ,২০ লাখ টাকা উদ্ধার
ইসফাহান নেসফে জাহান

আর্কাইভ