এ মাটিতেই তার জন্ম, এই ভৈরব-কুলিয়ারচরের মানুষের পক্ষেই পাঁচবার গেছেন জাতীয় সংসদে।ভৈরববাসীর প্রিয় ‘জিল্লু ভাই’ শুক্রবার শেষবার জন্মস্থানের মানুষের মাঝে এলেন; প্রাণহীন, কফিনবন্দি হয়ে।
হাজী আসমত কলেজের মাঠে জানাজা ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানকে তারা বিদায় জানালো ফুল আর অশ্রুজলে।
বুধবার বিকালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর থেকে তার মরদেহ দেশে আনার পর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাষ্ট্রপতির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
আর শুক্রবার সকালে তাকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নিয়ে আসা হয় জানাজার জন্য।
সকাল ৯টা ৫০ এ রাষ্ট্রপতির কফিনবাহী হেলিকপ্টারটি যখন ভৈরব স্টেডিয়ামে অবতরণ করে, ততোক্ষণে হাজী আসমত কলেজের মাঠে হাজারো শোকার্ত মানুষের ভিড়।
সশস্ত্রবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্থানীয় প্রশাসন শুক্রবার ভোরের মধ্যেই জানাজার সব প্রস্তুতি শেষ করে। হাজী আসমত কলেজ প্রাঙ্গণে নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা।
প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো দেখতে এবং তার জানায়জায় অংশ নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও সিলেট থেকেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সকাল থেকেই জড়ে হতে থাকেন এই মাঠে।
সর্বশেষ ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর ভৈরবে এসে এই মাঠেই এক সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন এই প্রবীণ নেতা।
সকাল ১০টা ৮মিনিটে জানাজা শুরুর আগে রীতি অনুযায়ী সবার কাছে বাবার হয়ে ক্ষমা চেয়ে নেন জিল্লুর রহমানের বড় ছেলে সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান।
তিনি বলেন, “যে মানুষটি ছিল আপনাদের সবার প্রিয়, যিনি সারা জীবন আপনাদের সবাইকে ভালবেসে গেছেন, তিনি আর আমাদের মাঝে নেই।”
জানাজা পড়ান ভৈরববাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মো. জামাল উদ্দিন
কলেজ মাঠে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেককেই রাস্তায় ও বাসার ছাদে থেকেও জানাজায় অংশ নিতে দেখা যায়।
পরে রাষ্ট্রপতির রুহের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন ভৈরব বাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মো. মুসা।
এরপর সেনাবাহিনী ও পুলিশের দুটি সুসজ্জিত দল কলেজ মাঠে নির্মিত শোক মঞ্চে রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেয়।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সিদ্দিকুর রহমান, আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন বাহিনীর পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
জিল্লুর রহমানের জন্ম ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ, ভৈরবে। ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় এই নেতা ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধেও যোগ দেন।
কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনসহ ‘৭৩, ‘৮৬, ‘৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুলিয়ারচর-ভৈরব আসন থেকে জিল্লুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর গ্রেপ্তারের সময় শেখ হাসিনা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব জিল্লুর রহমানকে দেন। আর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন তিনি।
ভৈরবের জানাজা শেষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জিল্লুর রহমানের কফিন নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় হেলিকপ্টার। দুপুরে বঙ্গভবনে কূটনীতিকরা রাষ্ট্রপতির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে দ্বিতীয় জানাজার পর বিকালে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে রাষ্ট্রপতিকে। সেখানে স্ত্রী আইভি রহমানের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:১৩:০০ ৫০০ বার পঠিত