‘নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’- এই কলামটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ননার পাশাপাশি প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাসটি এই কারনে আলোচনা করা হয়েছে যাতে করে পাঠকগণ ‘বাঙালি জাতি’ ও ‘বাঙালি –জাতিয়তাবাদ’-এর উন্মেষ এর ইতিহাসটি কিছুটা হলেও হৃদয়াঙ্গম করতে পারেন ৷প্রাচীনযুগ, মধ্যযুগ ও বর্তমান যুগের রাজাদের ( ব্রিটিশ শাসনামল সহ) বিভিন্ন সামাজ্রবাদী আগ্রাসন ও শাসনামলের যাতাকলে নিষ্পেষিত হতে হতে ভারতবর্ষের জণগন তথা তৎকালীন ভারতবাসী ( বর্তমান ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্হানের জণগন) মুক্তির জন্য ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠতে থাকে এবং একটু একটু করে তাদের মনের ভেতরে জাতীয়তাবাদের চেতনা ও অনুভূতির জণ্ম নিতে থাকে ৷ যতই দিন যেতে থাকে, ততই তারা এই চেতনায় সংঘবদ্ধ হতে থাকে এবং একই চিন্তা,চেতনা,বিশ্বাস,ধর্ম, ভাষার মানুষগুলো একসঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে একটি গোষ্ঠী বা দল গড়ে তুলতে থাকে ৷ আরও কিছুদিন পর দেখা গেল, তারা সেই একই মতবাদের জন গোষ্ঠী বা দল ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে মেলামেশা করছে না ৷ এভাবে দিনে দিনে বিভিন্ন মতবাদের সমন্বয়ে বেশ কতগুলো দল বা গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে প্রাচীন ভারতবর্ষে এবং পরবর্তীতে এরই সূত্রপাত ধরে এ উপমহাদেশের জণসমষ্টি ‘ বিভিন্ন জাতি ও জাতীয়তাবাদের চেতনায়’ বিভক্ত হয়ে পড়ে ৷ এরই ফলশ্রুতিস্বরূপ, আমরা দেখতে পাই-সেই প্রাচীন ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে বর্তমানে প্রধানতঃ তিনটি জাতি তথা দেশে রূপান্তরিত হয়েছে : ১.ভারত , ২.বাংলাদেশ এবং ৩.পাকিস্হান (যদিও ‘জণ্মসূত্রে পাওয়া নাগরিকত্ব’ এর কারণে এই তিনটি দেশে আরো বহু ভাষভাষি,ধর্ম,বর্ন,গোত্রের বিভিন্ন ছোট ছোট জাতি বা উপজাতি বসবাস করছে তাদের পূর্নাঙ্গ অধিকার নিয়ে, কিন্তু তারপরও এই তিনটি দেশ মূলতঃ বিশ্বের দরবারে সুপরিচিত তাদের প্রধান জাতিস্বত্ত্বার পরিচয়ে যার উন্মেষ ঘটেছিল মূলতঃ সেসময়ে তাদের জাতি ও জাতীয়তাবাদের চেতনা থেকে) ৷
‘নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – পর্ব- ২’ -এ আমরা এই উপমহাদেশের ইতিহাসকে নিমোক্ত দুটো খণ্ডে বিভক্ত করে দেখিয়েছিলাম :
ক. খ্রীষ্টপূর্ব ৭০,০০০ থেকে ৬০ খ্রীষ্টাব্দ এবং খ. খ্রীষ্টাব্দ ৬০ থেকে বর্তমান ৷
এরই মধ্যে আমরা ‘ক. খ্রীষ্টপূর্ব ৭০,০০০ থেকে ৬০ খ্রীষ্টাব্দ’- এই অংশটি জেনে নিয়েছি৷ আজ আমরা জেনে নেবো- “খ. খ্রীষ্টাব্দ ৬০ থেকে বর্তমান” -এই অংশটুকু৷
এ পর্বে এই অংশটি হতে যে যে সাম্রাজ্যের শাসনামল সম্পর্কে জানবো, সেগুলো হছ্ছে-ধারাবাহিকভাবে-১৯.কাকাতিয়া সাম্রাজ্য (১০৮৩-১৩২৩ খ্রীষ্টাব্দ), ২০.আহমন সাম্রাজ্য ( ১২২৮-খ্রীষ্টাব্দ), ২১.বিজয়নগর সাম্রাজ্য (১৩৩৬-১৬৪৬ খ্রীষ্টাব্দ), ২২.মুঘলসাম্রাজ্য (১৫২৬-১৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দ), ২৩.মারাঠা সাম্রাজ্য (১৬৭৪-১৮১৮ খ্রীষ্টাব্দ), ২৪.শিখ রাষ্ট্র ( ১৭১৬- ১৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দ), ২৫.শিখ সাম্রাজ্য ( ১৭৯৯-১৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দ), ২৬.ব্রিটিশ ভারত (১৮৫৮–১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দ), ২৭.ভারত ভাগ (উপমহাদেশের বিভাজন) -১৯৪৭–বর্তমান৷
১৯.কাকাতিয়া সাম্রাজ্য (১০৮৩-১৩২৩ খ্রীষ্টাব্দ) :
কাকাতীয়া রাজবংশ ছিল দক্ষিণ ভারতীয় রাজবংশ ও সাম্রাজ্য, যার রাজধানী ছিল ওরুগাল্লু, এটি বর্তমানে ওয়ারঙ্গাল নামে পরিচিত। ওয়ারাঙ্গাল জেলাটি ভারতের অন্যতম ঘোষিত হেরিটেজ শহর। এর কারণ অবশ্যই কাকাতিয়া সাম্রাজ্য। সেসময়কার বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখনও রয়েছে। বলা ভালো, নিদর্শনের ধংসাবশেষ। তখন দিল্লিতে খিলজি রাজবংশের শাসনের অবসান ঘটেছে। তুর্কি শাসক গিয়াসউদ্দিন তুঘলক শাহের রাজত্ব শুরু হয়। ১৩২৩ সালে তিনি কাকাতিয়া রাজা প্রতাপ রুদ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং প্রতাপ রুদ্রকে পরাজিত করার জন্য তার বিশ্বস্ত ও চৌকস সেনাপতি উলুগ খানকে পাঠান। উলুগ খানের প্রাথমিক আক্রমণ প্রতিহত করা গেলেও কিছুদিন পর কাকাতিয়া রাজ্যের অপ্রস্তুত সৈন্যবাহিনী তার কাছে পরাজিত হয়। রাজা প্রতাপ রুদ্র এই অতর্কিত যুদ্ধে প্রাণ হারান।সেময়কার ফোর্টের ভেতর তোরণ, ছবি: শুভ্রনীল সাগরকাকাতিয়া রাজ্যের রাজধানী ওয়ারাঙ্গালে এক মাস পর্যন্ত লুণ্ঠন ও ধ্বংসলীলা চলতে থাকে। কতো শত হীরা, মাণিক্য, রৌপ্য, গহনা লুণ্ঠন করে পাঠানো হয় দিল্লিতে। ধারণা করা হয়, সেই ধ্বংসলীলার সময়ই ভূলুণ্ঠিত হয় বিখ্যাত কাকাতিয়া ফোর্ট, শিব মন্দির, কালী মন্দির এবং অসংখ্য দেব-দেবীর ভাস্কর্য। এর পর পরই শুরু হয়- আহমন সাম্রাজ্য ( ১২২৮- খ্রীষ্টাব্দ) ,বিজয়নগর সাম্রাজ্য (১৩৩৬-১৬৪৬ খ্রীষ্টাব্দ) এবং মোঘল শাসনামল(১৫২৬-১৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দ) ৷ কাকতীয়া রাজবংশের মৃত্যুর ফলে পার্শ্ববর্তী শাসকদের অধীনে কিছুটা বিভ্রান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টি হয়, মুসুনুরীর নায়েকের পরে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আসে। প্রকৃতপক্ষে, কাকাতিয়া রাজবংশের সাথে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক সূত্রগুলি অস্পষ্ট। যেগুলি পাওয়া যায়, তা হল প্রাচীনতম শিলালিপিগুলি যেগুলি ধর্মের সাথে সম্পর্কিত বিষয়, যেমন- হিন্দু মন্দিরের দানগুলি। তাদের আদিপুরুষ ছিলেন রাষ্ট্রকূটদের সেনাধ্যক্ষ। বিশেষত ১১৭৫-১৩২৩ খ্রিষ্টাব্দের জন্য প্রচুর পরিমাণে ছিল, যা সেই যুগের সময় ছিল যখন রাজবংশের প্রসার ঘটে এবং এটির প্রতিফলন হয়। সম্ভাব্যতা হল যে অনেকগুলি শিলালিপি অপ্রচলিত ভবনগুলিতে পতিত হওয়ায় এবং পরবর্তী শাসকদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষ করে তেলঙ্গানা অঞ্চলের মুসলিম মুগল সাম্রাজ্যের দ্বারা। আজও আবিষ্কৃত হচ্ছে শিলালিপিগুলি, কিন্তু সরকারী সংস্থাগুলি দ্বারা যা লিপিবদ্ধ করেছে ও তার উপর মনোনিবেশ করতে থাকে নতুন উদাহরণ অনুসন্ধানের পরিবর্তে ইতিমধ্যেই পরিচিত।
ঐতিহাসিক দীনাচন্দ্র সিককারের খোদাইকৃত মুদ্রা এবং মুদ্রার অধ্যয়নগুলি প্রকাশ করে যে পারিবারিক নামটির কোন সমসাময়িক মানক বানান ছিল না। বৈচিত্রগুলি কাকাতিয়া, কাকটিয়া, কাকিতা, কাকাটি এবং কাকাত্য। পারিবারিক নামটি প্রায়ই রাজতন্ত্রের নামে প্রিফিকৃত হয়, যেমন কাকাতিয়া-প্রতাপরুদ্র নির্মাণ রাজাদের কিছু কিছু বিকল্প নাম ছিল; উদাহরণস্বরূপ, ভেঙ্কট ও ভেঙ্কটায়ারায় সম্ভবত প্রতাপারুদা I এর বিকল্প নাম থাকতে পারে, প্রাক্তন ভেক্টা-কাকাতিয়া আকারের একটি মুদ্রায় উপস্থিত হয়ে।
এই সাম্রাজ্যের শাসন কাল :
• কাকতীয় শাসকরা তাদের সুপরিচিত প্রধান বা শাসক বংশধরদেরকে দুরজায় নাম দিয়েছিলেন। অন্ধ্র প্রদেশের আরও অনেক শাসক রাজবংশ দুরজায়া-এর বংশধর বলে দাবি করেন। এই প্রধান বা শাসক সম্পর্কে কিছুই আর জানা নেই।
• প্রারম্ভিক শাসকরা পশ্চিমা চালুক্যদের অধীনে ছিল। প্রতাপরুদ ১১৬৩ খ্রিষ্টাব্দে একটি সার্বভৌম রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রাথমিক শাসকদের শাসনব্যবস্থা অজানা ছিল। ভেন্না, গুন্ডা আই, গুন্ডা ২, গুন্ডা তৃতীয় এবং এরা।
• পরবর্তী শাসক, গুন্ডা চতুর্থ, ৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে পূর্বে কাকতীয় রাজা দানেরানভের মঙ্গুলুর অনুদান উল্লেখ করেছেন। গুন্ডা চতুর্থ ( ৯৫৬-৯৯৫) অনুসরণ করেন। বিটা-১ ( ৯৯৬-১০৫১), প্রোল্লা -১ ( ১০৫২-১০৭৬), বিটা ২ ( ১০৭৬-১১০৮), দুর্গারাজ (১১০৮-১১১৬) এবং তারপর প্রোলা ২ ( ১১১৬-১১৫৭)।
• প্রথম প্রতাপরুদ্র (১১৫৮-১১৯৫) ৷
• গণপতিদেব (১১৯৯-১২৬০) ৷
• রুদ্রমা দেবী (১২৬২-১২৮৯) ৷
২০.আহমন সাম্রাজ্য ( ১২২৮খ্রীষ্টাব্দ) :
ভারতবর্ষের ইতিহাস দুই সহস্রাধিক বছর ধরে ঘটমান উক্ত অঞ্চলের একাধিক রাজবংশ ও সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস। মৌর্য সম্রাট অশোক সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে নিজ আধিপত্য বিস্তার করার সময় দাক্ষিণাত্যের একাধিক অঞ্চল জয় করেন। এই সময় থেকেই এই অঞ্চলের লিখিত ইতিহাসের সূত্রপাত। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে সাতবাহন, চালুক্য, পল্লব, রাষ্ট্রকূট, চের, চোল, পাণ্ড্য, কাকতীয় ,হোয়েসল, আহমন , বিজয়নগর, ও মুঘলসাম্রাজ্য , রাজবংশ দক্ষিণ ভারতে নিজ আধিপত্য বিস্তার করে। এই সকল রাজ্যগুলি সর্বদাই নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকত। পরে উত্তর ভারত থেকে মুসলমান বাহিনী দক্ষিণ ভারত আক্রমণ করলে তাদের বিরুদ্ধেও এরা সামরিক অভিযান চালায়। মুসলমান আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ উত্থান ঘটে আহমন ও বিজয়নগর সাম্রাজ্যের। এই সাম্রাজ্য সমগ্র দক্ষিণ ভারতে নিজ অধিকার স্থাপন করতে সক্ষম হয় এবং দাক্ষিণাত্যে মুঘল অভিযানের বিরুদ্ধে প্রধান বাধাস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। ষোড়শ শতাব্দীতে যখন ইউরোপীয় শক্তিগুলি এই অঞ্চলে পদার্পণ করতে শুরু করে তখন এই নতুন প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রামের ক্ষমতা দক্ষিণের রাজন্যবর্গের মধ্যে আর অবশিষ্ট ছিল না। ফলে ধীরে ধীরে সমগ্র দক্ষিণ ভারত ব্রিটিশদের অধীনস্থ হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ সরকার দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলকে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত করেন। অবশিষ্ট অঞ্চলগুলি ব্রিটিশ-নির্ভরশীল দেশীয় রাজ্যে বিভক্ত থাকে। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পর ভাষার ভিত্তিতে দক্ষিণ ভারত অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরল ও তামিলনাড়ু রাজ্যে বিভক্ত হয়।
২১.বিজয়নগর সাম্রাজ্য (১৩৩৬-১৬৪৬ খ্রীষ্টাব্দ) : (কন্নড়: ವಿಜಯನಗರ ಸಾಮ್ರಾಜ್ಯ, Vijayanagara Sāmrājya; তেলুগু: విజయనగర సామ్రాజ్యము, Vijayanagara Sāmrājyamu) ছিল দক্ষিণ ভারতের একটি মধ্যযুগীয় সাম্রাজ্য। পর্তুগিজরা এই সাম্রাজ্যকে বিসনাগা রাজ্য নামে অভিহিত করে। ১৩৩৬ খ্রিষ্টাব্দে (প্রথম) হরিহর ও তার ভ্রাতা (প্রথম) বুক্কা রায় এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে দক্ষিণ ভারতে ইসলামি আক্রমণ প্রতিহত করে এই সাম্রাজ্য নিজস্ব প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।১৬৪৬ সাল পর্যন্ত এই সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। তবে ১৫৬৫ সালে দাক্ষিণাত্য সুলতানির নিকট যুদ্ধে পরাজিত হয়ে এই সাম্রাজ্যের পতনের সূত্রপাত ঘটে। এই সাম্রাজ্য তার রাজধানী বিজয়নগরের নামে চিহ্নিত। বর্তমান কর্ণাটক রাজ্যের হাম্পিতে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে একটি বিশ্বঐতিহ্য স্থল। মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় পর্যটক ডোমিনগো পেজ, ফার্নাও নানস ও নিকোলো ডি কন্টি প্রমুখের রচনা এবং স্থানীয় সাহিত্য থেকে এই সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। বিজয়নগরের শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রমাণ মিলেছে পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যের মাধ্যমে। দক্ষিণ ভারতে মুসলমান আগ্রাসন রোধের উদ্দেশ্যে চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বিজয়নগর সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়। প্রায় ২০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল এই সাম্রাজ্য।এই সাম্রাজ্যের নিদর্শন স্বরূপ নানা স্থাপত্য ছড়িয়ে রয়েছে সমগ্র দক্ষিণ ভারত জুড়ে। এর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন অবশ্যই হাম্পি। দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন মন্দির নির্মাণশৈলীগুলির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছিল বিজয়নগর স্থাপত্য। এর হিন্দু নির্মাণশৈলীর মধ্যে সকল ধর্মবিশ্বাস ও স্থানীয় শৈলীগুলির মিলন ঘটেছিল। স্থানীয় গ্র্যানাইট পাথরে এই শৈলী গড়ে ওঠে। ধর্মনিরপেক্ষ রাজকীয় স্থাপত্য নিদর্শনগুলিতে উত্তর দাক্ষিণাত্য সুলতানির প্রভাব সুস্পষ্ট। দক্ষ প্রশাসন ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কল্যাণে এই সাম্রাজ্যে জলসেচের নতুন প্রযুক্তি আমদানি করা সম্ভব হয়। বিজয়নগর সাম্রাজ্য শিল্প ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিল। কন্নড়, তেলুগু, তামিল ও সংস্কৃত সাহিত্যে এই সাম্রাজ্যের পৃষ্টপোষকতায় এক নতুন যুগের সূচনা হয়। কর্ণাটকী সংগীত এই সাম্রাজ্যের রাজত্বকালেই তার বর্তমান রূপটি লাভ করে। দক্ষিণ ভারতে ইতিহাসে হিন্দুধর্মকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় সংহতি সাধনের মাধ্যমে বিজয়নগর সাম্রাজ্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। পারসিক পণ্ডিত আবদুর রাজ্জাক এই সাম্রাজ্য ভ্রমণ করে তার ভ্রমণকাহিনি লিপিবদ্ধ করেন। তুলুব রাজা কৃষ্ণদেবরায়ের রাজত্বকালে এই সাম্রাজ্য উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছায়। কৃষ্ণদেবরায় ছিলেন শিল্পকলা, সংগীত, নৃত্য ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক। তিনি নিজে ছিলেন কন্নড় ভাষার এক বিশিষ্ট কবি। পর্তুগিজদের সঙ্গে বিজয়নগর সাম্রাজ্য সক্রিয় বাণিজ্যে লিপ্ত ছিল। পর্তুগিজ বণিক ডোমিনগো পিজ ১৫২০-এর দশকে বিজয়নগরের রাজধানীতে অবস্থান করেন। তার রচনা থেকে এই রাজ্যের সমৃদ্ধি, জাঁকজমক ও মণিমাণিক্যে পূর্ণ বাজারের কথা জানা যায়। ১৫৬৫ সালে তালিকোটার যুদ্ধে দাক্ষিণাত্য সুলতানির সম্মিলিত বাহিনী বিজয়নগর সাম্রাজ্য অধিকার করে নেয়। রাজধানী হাম্পির ধ্বংসাবশেষ আজও দেখতে পাওয়া যায়। বিজয়নগরের পতন ও বাহমনি সুলতানির বিভাজনের পর গোলকোন্ডার কুতুব শাহি রাজবংশ ও হায়দ্রাবাদ রাজ্য এই অঞ্চলের মুখ্য শক্তিরূপে উদ্ভূত হয়। এরপর মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ও তাঁর পূর্বপুরুষগণ ( যথাক্রমে সম্রাঠ বাবর ও সম্রাট হুমায়ূন) এই অঞ্চল আক্রমণ করেন এবং এর মধ্য দিয়ে মোঘল শাসনামলের সূত্রপাত ঘটে ৷ (চলবে) ৷
তথ্যসূত্র: বুকস, ইন্টারনেট
তথ্যসূত্র: বুকস, ইন্টারনেট
লেখক: ফারহানা আকতার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক, কলামিস্ট এবং গবেষক ৷
বাংলাদেশ সময়: ০:৩৬:৪৭ ৮৫৭ বার পঠিত # #নতুন প্রজণ্ম #বাংলাদেশ #মুক্তিযুদ্ধ