স্বপন চক্রবর্তী,বঙ্গ-নিউজ: মাদকাসক্তদের জন্য আর চাকুরি নয় । ওদের জন্য চাকুরি প্রত্যাশা সুদুর পরাহত হবে। দীর্ঘদিন যাবৎ প্রচেষ্টা চলাচ্ছিল সরকার মাদকের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছিল না। মাদকের ভয়াবহ ছোবলে যুব সমাজের তথা কিশোর-কিশোরী,যুবক-যুবতীসহ অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছে। বহু পরিবার এর বিষক্র্রিয়ার স্বীকার হয়েছে। সেই ঐষীর পুলিশ কর্মকর্তা পিতা ও মাতাকে হত্যা বেশ হতবাক করেছিল জাতিকে। সর্বশেষ সাভারের নীলা রায়কে হত্যা,সব কিছুর জন্যই দায়ী ছিল মাদকতা-এমন তথ্যই বিভিন্ন মাধ্যম গুলোতে এসেছে। সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসাবে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আসতে চলেছে। এখন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের আগে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা করা হবে। এ জন্য আপাতত ২১ জেলায় মোট ২৩টি পরীক্ষা কেন্দ্র বসানোর একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সরকারি অর্থায়নে করা এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
২০১৮ সালের মে মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পাঠানো এক চিঠিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে, দেশে মাদকাসক্ত ব্যক্তি সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি চাকুরিজীবীরাও এতে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। তাই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের আগে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। এতে দেশে মাদকসক্তের পরিমাণ কমতে পারে।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ) উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রের অভাব ও এ সংক্রান্ত কোনো বিধিমালা না থাকায় এতদিন তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না। কিন্তু এবার এটি বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত একটি খসড়া বিধিমালা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবিত বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়ে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হওয়ার পর তার ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা করা হবে। প্রার্থী তার সুবিধা অনুযায়ী মাদক পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে নমুনা দিবেন। পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক হলে তিনি ওই চাকরির জন্য নির্বাচিত হবেন বলেন জানান মঞ্জুরুল ইসলাম।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আপাতত ঢাকায় তিনটি পরীক্ষা কেন্দ্র বসানো হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, যশোর, পটুয়াখালী, রংপুর, দিনাজপুর, ভোলা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, বগুড়া, কুষ্টিয়া, পাবনা, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ ও রাঙ্গামটিতে একটি করে পরীক্ষা কেন্দ্র বসানো হবে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে দেশের অন্যান্য জেলায়ও এমন পরীক্ষা কেন্দ্র বসাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
জানা যায়, পরিকল্পনা কমিশনে যাচাই-বাছাই ও আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক কমিশনে পাঠানো হবে। আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কিন্তু কেন এভাবে যুবসমাজ নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ? এর জন্য বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। যেমন-
মাদকের সহজলভ্যতা কিশোর,যুকদের এই সর্বনাশা পথে আসক্তিতে সহায়ক করেছে। পথে ঘাটে ,সামান্য দোকানেও মাদক এক সময় পাওয়া যেতো। এখনো পাওয়া যায়, যদিও কিছুটা লুকোচাপা করে। অনেকেই শখ করে,বন্ধুদের প্ররোচনায়,নয়তো অন্য কিছু কারণে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এখন এই পথ থেকে বের হবার পথ খুঁজে পাচ্ছে না ।
অল্প পরিমানে হলেও কিছু সংখ্যক আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোকজন জড়িত হয়ছে এই মাদক ব্যবসার সাথে। তারা নিজেরাও কিছু আসক্ত আছে বলে অনেকে মনে করেন। কেহ আবার নিজেদের কাছে রক্ষিত মাদকদ্রব্য দিয়ে অন্যকে ফাসানোর ভয় দেখিয়ে টাকা উপার্জনও করেন।
মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ভরযোগ্য কোন নিরাময় কেন্দ্র না থাকাতে অনেকে নিজ উদ্যোগে বা অভিভাবকগণ ইচ্ছে করলেও চিকিৎসা করাতে সক্ষম হচ্ছেন না। প্রতিটি চিকিৎসাকেন্দ্রই অহেতুক নির্যাতন করে এবং আটকে রেখে টাকা উপারজন করে। এটা না হলে অনেকেই সর্বনাশা পথ থেকে বেড়িয়ে আসতো। সম্প্রতি ঢাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে পিটিয়ে মেরেই ফেলেছে। মাইন্ড এইড নামক ক্লিনিকের অবস্থা কম বেশি সব নিরাময় কেন্দ্রেরই। এসব থেকে চিকৎসা নামক নির্যাতন থেকে বাইরে এসে আবারও আসক্ত হতে দেখা গেছে অধিকাংশকেই। এসব দেখে এবং সামাজিক সমালোচনার ভয়ে ভুক্তভোগী ও অভিভাবকগণ নীরবে অশ্রু বিসর্জন করছেন। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সমাজ থেকে। তাদেরকেও সুস্থ করা এখন সরকারেরই দায়িত্ব,নির্বাসন দেওয়া নয়।
মাদকের ভয়াবহ ক্ষতিকারক দিকটা সম্পর্কে অনেকেই আগে হতে বুঝতে না পারার কারণেও অনেকে অভ্যস্থ হয়েছেন। তাই এই অবস্থা হতে ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে স্কুল জীবন থেকেই সতর্কতামূলক পাঠ্যসূচী অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
চাকুরি হতে বঞ্চিত হলে এবং মাদকতা হতে মুক্তি না পেলেও অর্থ উপার্জনের জন্য চুরি ডাকাতি,ছিনতাই,খুন ইত্যাদির মতো অপরাধ প্রবণতা আরও বেড়ে যাবার আশংকা থাকবে।
গোপনীয়তা রক্ষা ,সুচিকিৎসার ব্যবস্থা,নিরাপত্তা বিধান করলে অনেক ভুক্তভোগী পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীগণ এগিয়ে এসে অভিযানকে সাফল্য মন্ডিত করতে পারেন। তাতে মাদকের বাণিজ্যের সাথে যারা জড়িত ও ব্যবসায় ইন্দন দিয়ে অর্থ উপার্জনকারী আইন শৃংখলা বাহিনীর কেহ জড়িত থাকলেও নাম বেড়িয়ে আসতে পারে।
মাদকের চোরাচালান বন্ধ করতে হলে আগে ওর চাহিদা নির্মূল করা জরুরী। অন্যথায় চোরাচালান কখনও বন্ধ হবে না। তাই আসক্তদের চিকিৎসা করে নিরাসক্ত করে তোলা ও নতুন করে আসক্ত না হবার জন্য এর ভয়াবহ খারাপ দিকগুলি নিয়ে বিদ্যালয়ে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যাপক প্রচার করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৮:৩৬ ৫৭৪ বার পঠিত # #ডোপ টেস্ট #পরীক্ষা কেন্দ্র #বাধ্যতামূলক #মাদক নিয়ন্ত্রণ #সরকারি চাকুরি