স্বপন চক্রবর্তী,বঙ্গ-নিউজ:যৌন বিকৃতির এক ঘৃণ্য উদাহরণ। যত ধরণের বিকৃতির সন্ধান পাওয়া তার মধ্যে এটি চরমতম নোংরামী। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে মামার সঙ্গে ডোম সহকারী হিসেবে কাজ করছিল মুন্না নাামীয় ২০ বছর বয়ষের এক যুবক। এই কাজ করতে গিয়ে সে এক বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। মর্গে ১২ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে তুলনামূলক ভালো লাশ এলেই মুন্না ধর্ষণ করত। মুন্না ভক্ত। বয়স তার ২০ বছর। গত চার বছর ধরে সে তরুণীর লাশের সংগে যৌনাচার করে আসছিল।
অবশেষে সে ধরা পড়ে সিআইডির অনুসন্ধানে। ময়নাতদন্তের জন্য ১২ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণীর যত লাশ এসেছিল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে। প্রত্যেক লাশই ছিল আত্মহত্যা জনিত। লাশগুলোর সুরতহাল প্রতিবেদনে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, ধর্ষণের আলামতও ছিল না। অথচ সিআইডির ল্যাবরেটরিতে ডাক্তারের পাঠানো প্রতিটি লাশের ‘হাই ভেজাইনাল সোয়াবে’ (এইচভিএস) মিলল পুরুষ শুক্রাণু। অবাক করার বিষয় হল- প্রত্যেকটিতেই একই পুরুষের শুক্রাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে সিআইডি।
গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে পাঠানো কয়েকটি নমুনা থেকে এই ঘটনা নজরে আসে সিআইডির।
২০১২ সালে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম ডিএনএ ল্যাব স্থাপিত হয়। ল্যাব স্থাপনের পর থেকে ধর্ষণ ও হত্যাসহ আদালতের নির্দেশে প্রেরিত সব আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা ও প্রোফাইল তৈরি করে সিআইডি। গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সিআইডির কাছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ যে কয়েকটি নমুনা পাঠায় সেখানে মৃত তরুণীর এইচভিএসে পুরুষ শুক্রাণু উপস্থিতি পায় সিআইডি। এরপরই পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করার চেষ্টা করে সিআইডি।
সিআইডি সূত্র জানায়, তারা কোডিস (CODIS) সফটওয়্যারে সার্চ দিয়ে দেখেন যে মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানার কয়েকটি ঘটনায় প্রাপ্ত ডিএনএ’র প্রোফাইলের সঙ্গে একই ব্যক্তির ডিএনএ বারবার ম্যাচ করছে। যেটা অনেকটাই অস্বাভাবিক ছিল।
তখনই সিআইডির সন্দেহ হয়, কোনো না কোনোভাবে ভিকটিমদের লাশের ওপরে কোনো ব্যক্তির বিকৃত যৌনচারের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামে সিআইডি।
সিআইডি জানতে পারে, সাধারণত ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ বিশ্লেষণ করতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ওই মর্গে সব লাশই রাখা হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন ডোম নিয়মিত পাহারা দিত। কিন্তু এই লাশগুলোর ক্ষেত্রে একজন ডোম সহকারী নিয়মিত ডিউটিতে থাকত। এতেই সন্দেহ হয় সিআইডির। ওই সহকারী হচ্ছে মুন্না ভক্ত। পরে সিআইডি কৌশলে মুন্নার ডিএনএ সংগ্রহ করে সেটি সংস্থাটির ল্যাবে নিয়ে বিশ্লেষণ করলে ওই ৫ তরুণীর লাশের ডিএনএ’র সঙ্গে ম্যাচ করে। তখনই মুন্নার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যায় সিআইডি এবং তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়।
পরে বৃহস্পতিবার রাতে (১৯ নভেম্বর) মুন্নাকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে মুন্না দোষ স্বীকার করে জবানবন্ধী দিতে রাজি হলে তাকে আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলে আদালত তাকে হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মুন্নার বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের জুরান মোল্লার পাড়ায়। তিনি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কোনো কর্মচারী নয়। হাসপাতালের ডোম মামা যতন কুমারের সহকারী হিসেবে কাজ করত সে।
শুক্রবার সিআইডি সদর দফতর থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, মৃত অন্তত ৫ তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গের ডোম সহকারী মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুন্নার ডিএনএ প্রোফাইল মিলে যাওয়ায় লাশের ওপর সে যে বিকৃত যৌনাচার করেছে সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ হয়েছে।
মুন্নাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৩:২৭ ৫৩৪ বার পঠিত #গ্রফতার #বিকৃত যৌনাচার #মুন্না #লাশের সংগে