আলুর বীজ সংকট..

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » আলুর বীজ সংকট..
সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০



ফাইল ছবি

মোঃ সুমন হেসেন,প্রতিবেদক বঙ্গনিউজ :  : আলুর দাম বেশি তাই কৃষক এবার আলু চাষে আগ্রহী। কিন্তু আলু চাষের মৌসুমে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েও হতাশ কৃষকরা। আলুর মৌসুম সামনে রেখে বীজ আলুর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। চাহিদা অনুযায়ী ভালো মানের বীজ না পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) অনুমোদিত ডিলারের কাছে ধরনা দিয়েও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে চাষিদের। এই সুযোগে অসাধু ডিলাররা দেড় থেকে দুই গুণ বেশি দামে বীজ আলু বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বীজসংকটে আলু চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলুর দাম বেশি পেয়ে এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে আলু চাষের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন জয়পুরহাটের আলু চাষিরা। উন্নত জাতের আলুবীজ সংগ্রহে তারা ভিড় করছেন বীজ ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে। ব্যাপক চাহিদার সুযোগে নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি মূল্যে বীজ বিক্রি করছেন বীজ ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় আলুর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে রাজশাহীর তানোরে টিএসপি সার ও আলু বীজের তীব্র সংকট দেখা দেয়ায় দিশে হারা হয়ে পড়েছেন আলু চাষী কৃষকরা। গত মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ায় চাষীদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ব্র্যাকের আলু বীজ। ফলে, চাষীদের মধ্যে টিএসপি সার ও ব্র্যাকের আলু বীজের জন্য হাহাকারের সৃষ্টি হয়েছে। বরাদ্ধ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন আলু চাষীসহ সংশ্লিষ্ট ডিলাররা। সার ও বীজের বরাদ্ধ না বাড়ালে টিএসপি সার ও আলু বীজের সংকটের কারনে এবছর আলু চাষের লক্ষমাত্রা পুরন না হওয়ার অশংখ্যা করছেন কৃষকরা।
বীজ আলুর সংকট দেখা দিয়েছে বগুড়াতেও। জেলার পীর বাজারের কৃষক আতাউর রহমান বলেন, অন্য বছর নিজেরাই হিমাগারে বীজ সংরক্ষণ করতাম। কিন্তু বৃষ্টিতে খেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পচে যাওয়ার ভয়ে এবার হিমাগারে বীজ রাখা সম্ভব হয়নি। এখন ছোটাছুটি করেও বীজ মিলাতে পারছি না। ডিলারের দোকানে টাকা দিয়েও বীজ মিলছে না।
দেশের বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমির মালিকরা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে জমি ইজারার বিনিময়ে বেশি ভাড়া দাবি করছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনসহ (বিএডিসি) স্থানীয় বীজ প্রস্তুতকারী ও আমদানিকারকরা বীজের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তানোর উপজেলার আলু চাষীরা বলছেন, অন্যবছর গুলোতে আলু’র দাম কম হওয়ায় নামে বে-নামে বিভিন্ন কোম্পানী বীজ তৈরি করে সরবরাহ করলেও এবছর আলু’র দাম বেশি হওয়ায় কোম্পানি গুলো আলু বীজ সরবরাহ করেননি। সেই সাথে আলুর দাম বেশী পেয়ে তাদের বীজের জন্য সংরক্ষনে রাখা বীজ আলুও বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে, এবছর আলু বীজের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
দেশের অন্যতম প্রধান আলু উৎপাদনকারী এলাকা মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির কৃষক মোহাম্মদ মনির হাওলাদার জানান, হঠাৎ তাদের জেলায় আলুর বীজের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বীজের ৫৫ কেজি ব্যাগ এখন কিনতে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৫শ’ টাকা। এক বছর আগে একই পরিমাণের বীজের দাম ছিল ১ হাজার ২শ’ টাকা। অন্যদিকে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় জমি ইজারা মূল্য আগের চেয়ে ছয় থেকে সাত গুণ বেশি দাবি করছেন জমি মালিকরা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আগের মৌসুমে কৃষকদের ৭ দশমিক ৬ লাখ টনেরও বেশি আলুর বীজ প্রয়োজন ছিল। এর মধ্যে বিএডিসি চাহিদার ১৫ শতাংশ সরবরাহ করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) চলতি মৌসুমে আলু বীজের দাম প্রায় ৯১ শতাংশ বাড়িয়েছে। প্রতি কিলোগ্রাম আলু বীজের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ২৪ টাকা ৫০ পয়সা। বিএডিসির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেসরকারি বীজ বিক্রেতারাও দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। ইতোমধ্যে অনেকে বাড়িয়েও দিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৯ লাখ মেট্রিক টন আলু হয়েছে। দেশে আলুর চাহিদা ৭০ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসেবে উদ্বৃত্ত আলুর পরিমাণ প্রায় ৩৯ লাখ মেট্রিক টন। তবে সরকারি এ তথ্যের বিপরীতে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ভিন্ন তথ্য। তারা বলেন, ২০১৯-২০ মৌসুমে ৯০ লাখ মেট্রিক টন। দেশে বছরে আলুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বীজ আলু দরকার প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন। সংরক্ষণ পর্যায়ে কিছু নষ্ট ও অপচয় হয়। এছাড়া বিদেশে রপ্তানিও হয় কিছু আলু।
গত আগস্টে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যে তথ্য সংগ্রহ করেছে, তাতে দেখা গেছে, সারাদেশে ৩৬৯টি হিমাগার চালু আছে, যেখানে ৩০ লাখ মেট্রিক টন আলু মজুত আছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদনের ২৭ শতাংশ আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট আলু কৃষক পর্যায়ে সংরক্ষণ হয়ে থাকে। কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, এবার তারা আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ কম আলু সংরক্ষণ করেছে, যার পরিমাণ প্রায় ৪৫ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর তারা ৫৫ লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করেছিল।
বিএডিসি’র বীজ বিপণন বগুড়া ও জয়পুরহাট অঞ্চলের উপপরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিভিন্ন জাতের ‘এ’ গ্রেড আলুবীজ প্রতিমণ ১ হাজার ৮৮০ এবং বি গ্রেড ১ হাজার ৮৪০ টাকা কৃষকের কাছে বিক্রির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ডিলার পর্যায়ে ১ হাজার ৮০০ এবং কৃষক পর্যায়ে ৪০০ টন। গত শনিবার থেকে বাজারে বিএডিসি আলুবীজ সরবরাহ করা হয়েছে। ভালো মানের কারণে বিএডিসির আলুবীজের যে পরিমাণ চাহিদা মজুদ না থাকায় তা সরবরাহ করা যায় না। তবে আগামীতে বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিএডিসির দেয়া তথ্যমতে, প্রতিবছর সারা দেশে সাড়ে সাত লাখ মেট্রিক টন আলুর বীজ প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে বিএডিসির কাছে রয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। যা সর্বমোট প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। বাকি বীজ ব্যবসায়িক কিছু প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ব্র্যাক, সিনজেন্টা, নীলসাগর গ্রুপসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ করে। সংরক্ষণ করা ও কৃষকের কাছে থাকা বীজ মিলে সারা দেশের চাহিদা পূরণ করা হয়। কিন্তু এ বছর সেখানে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে কথা হয় বিএডিসির বীজের দায়িত্বে থাকা মহাব্যবস্থাপক এস এম আলতাফ হোসেনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর অগ্রিম আলু উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে আলুর দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের কাছে থাকা বীজ বিক্রি করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে বীজের সংকট হতে পারে। বীজের সংকট কিছুটা জোড়াতালি দিয়ে পূরণ হলেও উৎপাদিত আলুর মান নিয়েও থাকবে সংকট। এক্ষেত্রে কতটুকু উন্নতমানের বীজ পাওয়া সম্ভব হবে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ভালো দাম পাওয়ার জন্য কৃষক অনেক বীজ ইতোমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে। আগামী দুই মাসে আগাম আলু না আসায় আরও বিক্রি করবে। ভালো বীজ খাবার আলু হিসেবে বিক্রি হওয়ায় পরবর্তী ফলন কেমন হবে- সেটা নিয়েও শঙ্কা আছে।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, দেশে কোলন পদ্ধতি অনুসরণ করে আলুর বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চলে এ ধরনের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তবে কোলন পদ্ধতির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত বীজের সংকট মোকাবিলা করার অবস্থা তৈরি হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৭:১৮   ৫৫৫ বার পঠিত   #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থ ও বানিজ্য’র আরও খবর


অর্থনীতি নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ
ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ, সরানো নিয়ে প্রশ্ন
চেক ডিজঅনার মামলার রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত
মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের আড়ালে হুন্ডি, গ্রেপ্তার ৬
১৮ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক
বৈশ্বিক নানা সংকট সত্ত্বেও বাড়লো মাথাপিছু আয়
বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে : মার্টিন রাইজার
আইএমএফ এর সাথে সমঝোতা : সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে
আইএমএফ এর ঋণ গ্রহণ করা হবে নিরাপদ রিজার্ভ গড়ে তোলার জন্য: বাণিজ্যমন্ত্রী
টবগী-১ কূপে পাওয়া যাবে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস

আর্কাইভ