স্বপন চক্রবর্তী,বঙ্গ-নিউজ: দেশের অন্যতম প্রভাবশালী অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আজ চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ আয়োজনকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ কোন্দোল প্রকাশ্যে এসেছে। এতে কার্যত দুই ভাগে বিভিক্ত হয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতের অনেক নেতা বলছেন, শাপলা চত্বরের ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে আল্লামা শফীর সঙ্গে বাবুনগরীর মতবিরোধ তৈরি হয়। তৎকালীন আমীর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দিকে যেভাবে ঝুঁকে পড়েছেন, মহাসচিব সেভাবে চাননি। বিষয়টি ইতিবাচকভাবে না নেয়ায় হেফাজতের বড় অংশ বাবুনগরীর অবস্থানকে সমর্থন দেন।
জানা গেছে, হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে সিংহভাগ নেতারা দ্বিতীয় এ সম্মেলনে যুক্ত হয়েছেন। তারা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে সম্মেলনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন, বর্তমান শুরা সদস্যদের বেশিরভাগই হাটহাজারীতে পৌঁছেছেন।
অন্যদিকে, সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আমীর প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারীদের ছোট একটি অংশ তার ছেলে আনাস মাদানীর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছেন। তারা বাবুনগরীদের এ সম্মেলনের বিরোধিতা করে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেন, সেইসঙ্গে একটি প্রচারপত্রও ছাড়া হয়েছে।
এর ফলে ধর্মীয় প্রভাবশালী সংগঠনটির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে, উদ্বেগও দেখা দিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে হেফাজতের নতুন আমীর কে হচ্ছেন, সেই প্রশ্নই এখন সবার মাথায় ঘুরছে।
এর এক পর্যায়ে তাকে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে হটিয়ে দেয়া হয়, সংগঠন থেকেও সরানোর চেষ্টা চলে। আল্লামা শফী অসুস্থ থাকায় তার ওপর ভর করে উভয় ক্ষেত্রে (মাদ্রাসা ও হেফাজত) নেতৃত্ব কুক্ষিগত করার চেষ্টা করতে থাকেন আনাস মাদানী। কিন্তু আহমদ শফীর মৃত্যু সবকিছুকে উল্টে দেয়।
বাবুনগরী মাদ্রাসার পদ ফিরে পান, হেফাজতের নেতৃত্ব দেন। এখন শীর্ষ পদ পূরণে সম্মেলনের ঘোষণা দেন, সে অনুযায়ী চলতে থাকে প্রস্তুতিও। এর ধারাবাহিকতায় আজ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। ফলে সংগঠনটির বড় একটি অংশ বলছেন, তাদের আমীর আল্লামা বাবুনগরীর হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তাকে টার্গেট করেই মূলত সক্রিয় রয়েছে বিরোধী পক্ষ। এর মধ্যেই হাটহাজারীতে একটি প্রচারপত্র বিলি করা হয়, তাতে বাবুনগরী ও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদীকে একসঙ্গে দেখা যায়। প্রচারপত্রে লেখা ‘হাটহাজারী মাদ্রাসায় মানবতাবিরোধী সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাঈদীপুত্র শামীম সাঈদের আনাগোনা এ কীসের ইঙ্গিত?’
এমন প্রচারপত্র গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর পৌরসভার নুর মসজিদের সামনে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে করে এসে সড়কে ফেলে পালিয়ে যায়। এতে কারো নাম না থাকায় তা কীসের ইঙ্গিত বহন করে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তবে বাবুনগরীর অনুসারী নেতারা বলছেন, ছবিটি এখনকার নয়, গত বছরের রমজানের। কোনো এক অনুষ্ঠানে তোলা সেই ছবি এখন সম্মেলনকে সামনে রেখে ছড়িয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। তাদের সে চেষ্টা সফল হবে না, সবাই অনেক বেশি সচেতন ও সতর্ক রয়েছে।
অপর অংশের নেতারা ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে’র ব্যানারে শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলন বন্ধের দাবি জানান। এ সময় ‘জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা শফী হুজুরকে হত্যা করেছে, এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার চান’ তারা।
সংবাদ সম্মেলনটি আল্লামা শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন করলেও তার পেছনে রয়েছেন শফীপুত্র আনাস মাদানী ও তার অনুসারীরা। এমনকি বাবুনগরীদের বিএনপি-জামায়াতপন্থী তকমা দিয়ে সরকার পন্থী হিসেবে পরিচিত এই পক্ষ সম্মেলনে যোগ দিবেন না বলে জানিয়েছেন। ফলে তাদের মধ্য থেকে কারো নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
প্রতিষ্ঠার ৮ বছর পর দেশের আলোচিত এ সংগঠনটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্মেলনের সার্বিক বিষয়াদি তদারকি করছেন। তাকে সহায়তা করছেন ২২৯ সদস্যের মজলিশে শুরা কমিটি। আয়োজকরা বলছেন, আল্লামা শফীর উত্তরাধিকার নির্বাচন করতে হেফাজতের প্রায় সাড়ে ৩ শ কেন্দ্রীয় শীর্ষ মুরুব্বি সম্মেলনে অংশ নেবেন। দেশের কওমি মাদ্রাসার সাথে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ আলেমরাও এতে উপস্থিত থাকবেন।
এ বিষয়ে হেফাজতের মজলিসে শুরা সদস্য ও হাটহাজারী উপজেলার সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির জানান, সম্মেলনের প্রস্তুতি একেবারেই শেষ পযার্য়ে রয়েছে। মজলিসে শুরা কাউন্সিলের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের পরবর্তী আমীর নির্বাচিত করা হবে।
তবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী বলেন, সম্মেলনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, এটা একজনকে আমীর বানাতে একাংশের সম্মেলন। আল্লামা শফীর গড়া সংগঠনকে কেউ ব্যক্তি কেন্দ্রিকতায় পরিণত করলে তার জবাব দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৭:২৪ ৪৭৬ বার পঠিত #পরবর্তী আমীর কে #বাবুনগরী #সংবাদ সম্মেলন #হেফাজ ই ইসলাম