জুবঙ্গ-নিউজ ডটকম :জুলেরিমে ট্রফি। বিশ্বকাপ ফুটবলের আগের ট্রফির নাম। যার বর্তমান মালিক ব্রাজিল। ১৯৭০ সালের তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে চিরস্থায়ীভাবে নিজেদের করে নিয়েছে ট্রফিটি। অথচ জুলেরিমে ট্রফি চুরি হয়ে গিয়েছিল ১৯৬৬ সালে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জেতার পর সেখান থেকে ট্রফিটি চুরি হয়েছিল। সেটা উদ্ধার করেছিল এক কুকুর। এখন জুলেরিমে ট্রফি ব্রাজিলের জাদুঘরে। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জয় না করলেও ১৯৯৭ সালে জিতেছিল আইসিসি ট্রফি। নিয়মানুযায়ী সেটা থাকার কথা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে। কিন্তু সেই ট্রফিটির কোনো হদিস নেই। ক্রিকেট বোর্ড সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলছেন, ট্রফিটি বাংলাদেশে আনা হয়েছিল। আবার অন্যরা বলছেন, বাংলাদেশে কোনো ট্রফিই আসেনি। এ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান এক পরিচালক স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, আইসিসি ট্রফির বর্তমান অবস্থান দুবাইয়ে আইসিসি সদর দফতরে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সুখকর কিছু স্মৃতির সবার উপরে আইসিসি ট্রফি জয়। ১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল কুয়ালালামপুরের কিলাত কেলাব মাঠে ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জয় করেছিল বাংলাদেশ। সেই ট্রফি হাতে আকরাম খানের ছবিটি এখনও এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে জ্বলজ্বল করছে। সেই দলের অধিনায়ক ও বর্তমানে প্রধান নির্বাচকের হাতে তুলে ধরা সেই ট্রফিটির কোনো হদিস নেই। এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রফির বিষয়ে আকরামকে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘অনেকদিন হয়েছে তো, তাই আমার কিছু মনে নেই।’ ফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে ছক্কা হাঁকানো খালেদ মাসুদ পাইলট বলেন, ‘আমারও কিছু মনে নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, ট্রফিটি মাঠে আমাদের হাতে দেওয়ার পর আমরা টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে দিয়ে দিয়েছিলাম। এটুকুই বলতে পারব।’ ওই দলেরই আরেক সদস্য ও বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় বলেন, ‘আমার মনে নেই।’
আগামী ১৩ এপ্রিল ট্রফি জয়ের ১৪ বছর পূর্তি। তার আগে ট্রফিটির খোঁজ করেছিল ক্রিকেট বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু কোথাও খুঁজে পায়নি। খুঁজে পাবে কীভাবে? ট্রফিটিতো দেশেই আসেনি। বিসিবির সিইও নিজামুদ্দিন সুজন ট্রফি প্রসঙ্গে বলেন, ‘সে সময় আমি বোর্ডে ছিলাম না। এছাড়া আমারও মনে নেই ট্রফি এসেছিল কি না। ক্রিকেটাররা ট্রফিটি এনেছিলেন কি না সে বিষয়েও আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে এখন আছে দুবাইতে। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ করে জেনেছি, আইসিসি ট্রফি বাংলাদেশে আসেনি।’ এসিসির সিইও ও বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হক বলেন, ‘কোনো টুর্নামেন্টের রানিং ট্রফি দলকে দেওয়া হয় না। আমি যতদূর জানি, বাংলাদেশকে কোনো ট্রফি দেওয়া হয়নি।’ ট্রফি বাংলাদেশে আসেনি বলে নিশ্চিত করেছেন ক্রিকেট বোর্ডের অ্যাডহক কমিটির অন্যতম পরিচালক আহম্মেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, ‘বাংলাদেশে আইসিসির ট্রফি আসেনি। আসবে কিভাবে, ট্রফিটিতো তখন ছিল লর্ডস জাদুঘরে। ১৯৮৩ সালে আমি যখন লন্ডন গিয়েছিলাম, তখন আমার সঙ্গী ছিলেন ক্রিকেট কোচ ওসমান খান। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, ওই মিয়া, এই ট্রফি জেতা পারুম কি না বলতে পারি না। তাই আস ছবি তুলে নেই। আমরা ছবি তুলেছিলাম। ববি স্পষ্ট করে বলেন, আইসিসি ট্রফি এক সময় লর্ডসে থাকলেও এখন তার অবস্থান দুবাই আইসিসির সদর দফতরে। সুতরাং এ নিয়ে বিতর্ক তোলার কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার হালকা মনে আছে, সে সময় বোর্ডের কেউ কেউ ট্রফিটির আদলে একটি রেপ্লিকা তৈরি করার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা হয়েছিল কিনা জানি না।’ যখনই আইসিসি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়, তখনই আইসিসি দফতর থেকে ট্রফিটি আনা হয়। চ্যাম্পিয়ন হলে কাউকে স্থায়ীভাবে মূল বা নকল ট্রফি দেওয়া হয় না। বাংলাদেশ যখন আইসিসি ট্রফি জিতেছিল, তখন ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করায় যোগাযোগ করা যায়নি।
আইসিসি ট্রফির থাকা না থাকা নিয়ে যতই ধোঁয়াশার সৃষ্ট হোক না কেন, ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্রিকেটাররা উপস্থিত থাকলেও ছিল না ট্রফিটি। তাতেই পরিষ্কার, ট্রফিটি আদৌ বাংলাদেশে আসেনি!
বাংলাদেশ সময়: ০:১৩:২৮ ৬৬৭ বার পঠিত