নিজস্ব প্রতিবেদক,গাজীপুর । বঙ্গ নিউজঃ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দীর্ঘদিনের গরু চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির টাকায় জমি ও বিলাস বহুল ৮তলা ভবনের একটি বাড়ি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্রাকসহ গরু ছিনতাইয়ের ঘটনায় চক্রটির দুই সদস্য গ্রেপ্তার করা হলেও মুলহোতা এখনো ধরা-ছোয়ার বাইরে। এ ঘটনায় এলাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ছে।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চাতৈলবিটি এলাকার সবুর উদ্দিনের ছেলে লোকমান হোসেন পেশায় ছিলেন পোলট্রি মুরগি বিক্রেতা। সেখানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে তিনি পেশা পরিবর্তন করে কসাইয়ের কাজ শুরু করেন। পরে লোভে পড়ে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় গরু চুরি, ট্রাকসহ গরু ছিনতাই করে মাংস বিক্রি শুরু করে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনি ও তার সহযোগীরা গরু চুরি ট্রাকসহ গরু ছিনতাই ও ডাকাতি করে এলাকায় গরুর ব্যবসা করে আসছেন। এভাবে দীর্ঘদিন চুরি, ছিনতাই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মুলহোতা লোকমান। অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা দিয়ে তিনি বাড়ির পাশে আমীন মডেল টাউনে দুটি প্লটে ১০ শতাংশ জমি কিনেন। যার বর্তমান মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, তিনি সেখানে ৮তলা ভবন নির্মান করে বিলাস বহুল জীবন যাপন করে আসছে। এত টাকা-পয়সার মালিক হলেও তিনি চুরি, ছিনতাইয়ের পেশাটি ছাড়তে পারেনি। প্রতি রাত ২টা থেকে ৩টার দিকে ১০-১২টা গরু অজ্ঞাত ট্রাকে ভরে নিয়ে আসে। সে গরুগুলো তার ওই বিলাস বহুল বাড়ির পাশেই রাখেন। রাতেই কম দামে এসব গরু বিক্রি করে দেওয়া হয়। একটু কম দামে গরু কিনতে স্থানীয় খামারী ও কসাইরা তার কাছ থেকে গরু কিনে নিয়ে যায়। সর্বশেষ নরসিংদীর রায়পুর থানায় ট্রাকসহ গরু ছিনতাইয়ের একটি মামলার আসামী ধরতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অভিযান চালিয়েছে রায়পুরা থানা পুলিশ। গত ৫ নভেম্বর রাতে রায়পুরা থানা, আশুলিয়া থানা ও গাজীপুর সদর থানার পুলিশ ওই আমিন মডেল টাউনে অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের দুই সদস্য সেলিম ও আরিফ খান সুইটকে গ্রেপ্তার করা হলেও মুলহোতা লোকমান কৌশলে পালিয়ে যায়। এসময় চুরি, ছিনতাইয়ের মুলহোতা লোকমানের বিলাস বহুল বাড়ি থেকে ২টি গরু পাশের বাড়ি থেকে ৩টি গরু উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, মুলহোতা লোকমান, সেলিম, সুইটসহ বেশ কয়েকজন প্রতি রাতেই এখানে ১০-১২টি গরু নিয়ে আসে। গরু কেনার ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ওই রাতেই গরুগুলো কম দামে বিক্রি করে দেয়। ওই চক্রটি নেপালিয়ান গরুসহ বিভিন্ন স্থান থেকে গরু চুরি করে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে গরু চুরি ও ট্রাকসহ গরু ছিনতাই করে এভাবেই লাখ লাখ টাকা বানিয়েছেন লোকমান। দীর্ঘদিনের চুরি, ছিনতাইয়ের টাকা দিয়ে তিনি আমিন মডেল টাউনে জমি কিনে ৮তলা ভবনের বিলাস বহুল বাড়ি করে আরাম-আয়েশে রয়েছে। ওই রাতে চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও মুলহোতা লোকমান রয়েছে ধরা-ছোয়ার বাইরে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
আমিন মডেল টাউনের মার্কেটিং সহকারী সাইদুর রহমান জানান, লোকমানের কাছ থেকে তিনটি গরু কিনেন। সে গরুসহ মোট ৫টি গরু ওইদিন রাতে পুলিশ নিয়ে গেছে। এছাড়া সেলিম ও সুইট নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্থানীয় সাইদ হোসেন বলেন, আমার মেয়ের জামাই সুইটও অনেকের মতো লোকমানের কাছ থেকে গরু কিনেছে। যে বিক্রি করেছে তারে ধরতে পারেনি, পুলিশ আমার মেয়ের জামাইকে ধরে নিয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনি”ছুক অপর এক গৃহবধু জানান, এসব বিষয়ে মুখ খুলতে চাইলে লোকমান এসে নানা ধরনের হুমকিও দিতেন। তাই ভয়ে কেউ মুখ খুলেনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আয়নাল হোসেন জানান, ওইদিন রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার ও ৫টি গরু উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। তবে লোকমান কিভাবে হঠাৎ করে এত টাকার মালিক হল তা জানা নেই।
এব্যাপরে অভিযুক্ত লোকমান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তার বাড়ি গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক এসআই. (নিরস্ত্র) কাজী ইকবাল হোসেন জানান, ট্রাকসহ গরু ছিনতাইয়ের মামলায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে দুজনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় লোকমানের বাসা থেকে দুটিসহ ৫টি গরু উদ্ধার করা হয়। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, আমি বিষয়টি শুনেছি, ওই থানার পুলিশ এসে দুজনকে গ্রেপ্তার ও গরু উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। তবে লোকমানের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:২১:১২ ৬২৩ বার পঠিত