বঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ বলেছেন বিকল্প নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মিউক্লে স্নাইডের৷ ১৯৯৭ সালে তিনি রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড পান৷ তাঁর মতে বিশ্বে পরমাণু শক্তি তার তাৎপর্য হারাচ্ছে, সঙ্গে হয়ে উঠছে লোকসানের ব্যবসা৷ কিন্তু রাজনীতিকরা তা বোঝেন নি৷
পরমাণু বিশেষজ্ঞ মুইক্লে স্নাইডার প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী পরমাণু শিল্পের পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট বার করেন৷ ফুকুশিমার পর সেই পরিস্থিতি কতটা বদলেছে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফুকুশিমার পর অবশ্যই পরমাণু শিল্পের অধোগতি দ্রুততর হয়েছে৷
সারা বিশ্বে চালু আণবিক চুল্লিগুলির সংখ্যা কমছে৷ আণবিক চুল্লির সংখ্যা সর্বোচ্চে দাঁড়িয়েছিল ২০০২ সালে, দশ বছর আগে৷ বিশ্বের সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে তথাকথিত পরমাণু বিদ্যুতের অনুপাতও কমছে৷ ১৯৯৩ সালে, অর্থাৎ বিশ বছর আগে, সেটা ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে, ১৭ শতাংশে৷ বর্তমানে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ শতাংশে৷
স্নাইডার-এর মতে এর দু’টি মূল কারণ হলো, জনমতের পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক বাস্তব: বিদ্যুৎ উৎপাদনের অপরাপর পন্থা আরো সক্ষম ও সাশ্রয়ী হবার ফলে তারা পরমাণু বিদ্যুতের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে৷ বিশেষ করে আণবিক চুল্লিতে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি কোম্পানিগুলি তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করছে৷
একটি আণবিক চুল্লি নির্মাণ ও চালানোর খরচ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে, অপরদিকে জ্বালানি সংক্রান্ত অন্যান্য প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ ও চালানোর খরচ কমে চলেছে৷ এর একটি কারণ, আণবিক চুল্লিগুলি ক্রমেই আরো বেশি জটিল হয়ে পড়ছে৷ তাছাড়া নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা কিংবা সন্ত্রাসী আক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষার মাত্রাও বাড়াতে হচ্ছে৷ যার ফলে বহু দেশে যে ধরণের আণবিক চুল্লি চালানো হয়, তা আজ তৈরি করতে গেলে, সরকারি অনুমতিই পাওয়া যেত না৷
কিলোওয়াট প্রতি আণবিক বিদ্যুতের দাম কত হওয়া উচিত, তাও আজ বলা সম্ভব নয়, কেন না পারমাণবিক বর্জ্য জমানো, ফেলা কিংবা বিনষ্ট করার খরচ আছে৷ সারা বিশ্বে বস্তুত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেলার কোনো স্থান নেই৷ যার ফলে পরমাণু শক্তির ব্যবহার শুরু হবার ৫০ বছর পরেও তার আসল খরচ যে কি, তা আমাদের জানা নেই৷ সঙ্গে রয়েছে পরমাণু দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে বীমার খরচ: ফুকুশিমা বিপর্যয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩০ থেকে ৬৫০ বিলিয়ন ডলার, বলে বীমা কোম্পানিগুলির ধারণা৷
একটি আণবিক চুল্লি নির্মাণ করতে ঠিক কতোটা খরচ পড়বে, তা আগে থেকে বলা শক্ত৷ অথচ ঋণ পাবার জন্য অর্থপ্রতিষ্ঠানগুলি ঠিক তাই জানতে চায়৷ বলতে কি, একটি আণবিক চুল্লির নির্মাণের চূড়ান্ত খরচ কোনোদিনই বলা সম্ভব হবে না৷ ফিনল্যান্ড ও ফ্রান্সে এখন যে আণবিক চুল্লিগুলি নির্মিত হচ্ছে, তার খরচ ইতিমধ্যেই চারগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
স্নাইডার-এর ধারণা, আজ আর এমন কোনো আণবিক চুল্লি বানানো সম্ভব নয়, যা থেকে মুনাফা হবে৷ কাজেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও গ্যারান্টি ছাড়া আজ আর কোনো দেশে আণবিক চুল্লি নির্মিত হবার সম্ভাবনা কম৷ চীন অথবা রাশিয়ায় যেটা সম্ভব, সেটা আর জার্মানিতে সম্ভব নয়৷ ব্রিটেনের মতো দেশ এখনও আণবিক চুল্লি নির্মাণের কথা ভাবছে৷ কিন্তু সেটা এই কারণে যে, ব্রিটেন জার্মানির মতো বিকল্প জ্বালানিতে বিনিয়োগ করেনি, এগিয়ে যায়নি৷
জাপান সম্পর্কে মুইক্লে স্নাইডার-এর বক্তব্য, সেখানে সরকার পরমাণু শক্তির সপক্ষে কিন্তু জনসাধারণ পরমাণু শক্তির বিপক্ষে৷ স্নাইডার এটাকে বলেন ‘‘প্রাক-বিপ্লব” পরিস্থিতি৷ ফুকুশিমা জাপানের মানুষের মনে ট্রমা হিসেবে কাজ করছে, তাদের গোটা বিশ্বাসের কাঠামো ধরে নাড়া দিয়েছে৷ পরমাণু প্রযুক্তি, সরকার ও টেকনোক্র্যাটদের উপর তাদের আর আগেকার আস্থা নেই৷
জাপানের ৫০টি আণবিক চুল্লির মধ্যে মাত্র দু’টি এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে৷ তা বলে বিশ্বের অন্যত্র আণবিক চুল্লি নির্মাণ থেমে নেই৷ পোল্যান্ডে কোনো আণবিক চুল্লি নেই, তাই তারা একটি নির্মাণ করছে৷ চেক গণরাজ্য কিংবা হাঙ্গেরির মতো দেশ এখনও পরমাণু শক্তিতে বিশ্বাসী৷ রুশিরা তুরস্কে একটি আণবিক চুল্লি বানাচ্ছে, এবং গোটা প্রকল্পটির অর্থও যোগাচ্ছে৷
সবার আগে রয়েছে চীন: সেখানে এখন ২৯টি নতুন আণবিক চুল্লি নির্মাণ করা হচ্ছে৷ ভারতে তৈরি হচ্ছে সাতটি নতুন আণবিক চুল্লি৷ তফাৎটা এই যে, চীন নবায়নযোগ্য জ্বালানিগুলিতেও বিপুলভাবে বিনিয়োগ করেছে৷
বাংলাদেশ সময়: ৭:৫৬:৫৫ ৪৫৪ বার পঠিত