বঙ্গ-নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের অনেক চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু জনসমর্থন না থাকলে ষড়যন্ত্র করে হত্যাকাণ্ড ঘটানো যায়, কিন্তু ক্ষমতায় আসা কিংবা টিকে থাকা যায় না। তাই আওয়ামী লীগকে নিয়ে যত বেশি নড়াচড়া কিংবা ষড়যন্ত্র করা হবে, আওয়ামী লীগের জনসমর্থনের শিকড় আরো বেশি শক্তিশালী হবে—এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে শোকাবহ জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই আলোচনাসভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসী, খুনিচক্র ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বসে নেই। ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের ঘটনা ঘটিয়েও তারা ক্ষমতাকে ভোগ করতে পারেনি জনগণের কারণে, এটাই তাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারোর দয়া বা দাক্ষিণ্যে নয়, জনগণের সমর্থন নিয়েই আওয়ামী লীগ চার-চারবার ক্ষমতায় থেকে দেশের সেবা করে যাচ্ছে।
জিয়া-এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে নির্বাচন কেমন ছিল?
নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে হয়তো ভুলে যান ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে শুধুমাত্র ভোট চুরির অপরাধেই খালেদা জিয়াকে দেশের জনগণ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মাত্র ১০ মাসের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য করিয়েছিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দেশকে দুর্নীতিতে পাঁচ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছিল, বাংলা ভাই-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জিয়া-এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে নির্বাচন কেমন ছিল? ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুন্ডা—নির্বাচন ঠান্ডা।
দুর্নীতি, জঙ্গিবাদের কারণেই ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি হয়েছিল
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদের কারণেই দেশে ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি হয়েছিল। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারও খালেদা জিয়ার হাতেই তৈরি। প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমদকে খালেদা জিয়াই নিয়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বানিয়েছিল। ৯ সিনিয়র জেনারেলকে ডিঙ্গিয়ে মঈন উ আহমদকে সেনাপ্রধানও করেছিলেন এই খালেদা জিয়া। এরা সবাই তার পছন্দের লোক ছিলেন। কিন্তু ঐ তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন দল গঠনের চেষ্টা করল।
১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে খুনি মোশতাক ও জিয়াউর রহমান জড়িত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি মোশতাক অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেই প্রথমে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করে। এতেই স্পষ্ট হয়, এই ষড়যন্ত্রে খুনি মোশতাকের ডানহাত ছিল এই জিয়াউর রহমান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু পারিবারিক হত্যাকাণ্ড নয়, দেশ ও জাতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতেই ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে বেঈমান মোশতাক রাষ্ট্রপতি আর জিয়াউর রহমান হচ্ছে সেনাপতি। এরপরেই আমরা দেখলাম ৩ নভেম্বরের ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্টের ঘটনাকে যারা একসময় শুধু একটা পারিবারিক ঘটনা হিসাবে অপপ্রচার চালাতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাদের আসল উদ্দেশ্যটা ধরা পড়ে যায় ৩ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডে। যেটা শুধু হত্যাকাণ্ড ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যারা মানতে পারে নাই, স্বাধীন বাংলাদেশকে যারা স্বীকার করতে পারে নাই, স্বাধীন বাংলাদেশটাই যারা চায় নাই- তাদের দোসররাই ছিল এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। জেলখানার মতো একটা সুরক্ষিত জায়গায় খুনিদের প্রবেশ করার অনুমতি কে দিয়েছিল? বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে আলোচনাসভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৯:২৮ ৫৮৯ বার পঠিত # # #আওয়ামী লীগ #প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা #সভানেত্রী