ফারহানা আকতার এর কলাম : “ নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – পর্ব-৫ ”

Home Page » সাহিত্য » ফারহানা আকতার এর কলাম : “ নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – পর্ব-৫ ”
সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০



নতুন প্রজন্মের চোখে মুক্তিযুদ্ধ
যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই।
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই।
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।
আমার লেখা নিয়মিত কলাম ‘নতুন প্রজন্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’-এর আলোচনায় আমরা ছিলাম –‘বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবর রহমান –এর জীবনী’ তে এবং আমরা সকলেই জানি, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার ঘোষনা দিয়েছেন যে, “বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবর রহমান এর জন্ম-শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘১৭মার্চ’২০২০ হতে ১৭মার্চ’২০২১’-এই একবছর মুজিব-বর্ষ হিসেবে
সর্বত্র পালিত হবে ” ৷
ইতিমধ্যে ১০জানুয়ারী’ ২০২০ তারিখে , বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ –প্রত্যাবর্তন দিবসে, সেই মহেন্দ্র-ক্ষণ গণণা শুরু হয়ে গেছে । তাই এ
উপলক্ষে আমার নিয়মিত কলাম, ‘নতুন প্রজন্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: পর্ব-৪ ও পর্ব-৫ ’ -যে দুটি কলাম বিশেষভাবে
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর জীবনী’-এর ওপর আলোচিত, তা সশ্রদ্ধচিত্তে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান’ কে
উৎসর্গীকৃত এবং তাই আজ আমার এ কলামটিতে অপর অংশ অর্থাৎ ‘এই উপমহাদেশ অর্থাৎ ভারতবর্ষের ইতিহাস’ অংশটি
আজ থাকছে না, পরবর্তী পর্বগুলো হতে পাঠকগণ সে অংশটি নিয়মিতভাবে পাবেন ৷ ২০০৪ সালের বিবিসি একটি জরীপ
চালিয়েছিলেন প্রথম বিশ (২০) জন মহান ও মহিয়সী বাঙ্গালীদের খুঁজে বের করার জন্য এবং সেখানে যে নামটি সবার প্রথমে
জায়গা করে নিয়েছিল-তিনি হছ্ছেন-‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ও বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান
৷সকলের জ্ঞাতার্থে, আমি এখানে বিবিসির সেই জরীপটি হুবুহু তুলে দিলাম : “ সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০ জন বাঙালিদের তালিকা
“বিবিসি- ব্রিটিশ ব্রড কাস্টিং করপোরেশন” এর জরীপ অনুযায়ী) তুলে ধরছি, গত ১১ ফেব্র“য়ারি ২০০৪ থেকে ২২ মার্চ
২০০৪ পর্যন্ত বিবিসি তার এই শ্রোতা জরীপ চালান : ১/ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, ২/বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ৩/
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ৪/শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, ৫/নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, ৬/বেগম রোকেয়া
সাখাওয়াত হোসেন, ৭/আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, ৮/ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ৯/ মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী,
১০/রাজা রামমোহন রায়, ১১/তিতুমীর, ১২/ বাউল সম্রাট লালন শাহ, ১৩/সত্যজিৎ রায়, ১৪/ অমর্ত্য সেন, ১৫/ সকল
ভাষা-শহীদগণ, ১৬/জ্ঞান-তাপষ ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ১৭/স্বামী বিবেকান্দ, ১৮/অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, ১৯/জিয়াউর
রহমান এবং ২০/ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী “ ।
এবারে, আমরা মূল আলোচনায় ফিরে আসি,
•১৯৬৬ সালে ৫ ফেব্রুয়ারী, শেখ মুজিব পাকিস্হানের কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট ৬ দফা পেশ করার পরেও তাদের কাছ
থেকে পূর্ব-পাকিস্হানের জনগণ কোনো ফলদায়ক আচরন পেতে ব্যর্থ হন এবং এ সময়ে পাকিস্হান সরকার শেখ মুজিবের
বিরুদ্ধে উল্টো পদক্ষেপ গ্রহন করেন ৷
•১৯৬৮ সালে, ৩ জানুয়ারীতে পাকিস্হানকে বিছ্ছিন্ন করার অভিযোগ এনে পাকিস্হান-সরকার ‘শেখ মুজিব’কে প্র্ধান
আসামী করে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের। ১৭ জানুয়ারী মুক্তি দিয়ে জেল গেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার।

•১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী জনগণের চাপের মুখে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তি। ২৩ ফেব্রুয়ারী
রেসকোর্ষ ময়দানে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা। আনুষ্ঠানিক ভাবে পূর্ব-পাকিস্হানের জনগণ শেখ মুজিবকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধি
প্রদান।
•১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারী পুনরায় বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১ এপ্রিল কার্যকরী পরিষদের সভায়
নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত। ৭ জুন রেসকোর্স ময়দানের সভায় ছয় দফার প্রশ্নে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করার জন্য
জনসাধারণের প্রতি আহ্বান। ১৭ অক্টোবর দলের প্রতীক নৌকা নির্বাচন। ২৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশ্য বেতার টিভিতে
ভাষন। ৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব-পাকিস্হানের আওয়ামীলীগ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বাধীন )
নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। অর্থাৎ তারা জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্য ১৬৭টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০
আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসন লাভ করে এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্হানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করে ।
•১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারী নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ। ৫ জানুয়ারী পাকিস্তানের সর্বাধিক আসন লাভকারী ভুট্টো কেন্দ্রে
আওয়ামীলীগের সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠনে সম্মতি। জাতীয় পরিষদের সদস্যদের সভায় শেখ মুজিব পার্লামেন্টারি
দলের নেতা নির্বাচিত হন। ২৮ জানুয়ারী ভুট্টো ঢাকায় আসেন। তিনদিন বৈঠকের পর আলোচনা ভেংগে যায়। প্রেসিডেন্ট
ইয়াহিয়া খান ঢাকায় জাতীয় পরিষদের সভা আহ্বান করেন। ১৫ ফেব্রয়ারি ভুট্টো দুই প্রদেশে দুই দলের নিকট ক্ষমতা
হস্তান্তরের দাবী জানান। ১৬ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে এ দাবীর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন ক্ষমতা
আওয়ামীলীগের কাছেই হস্তান্তর করতে হবে। ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের সভা অনিদির্ষ্ট কালের জন্য বনধ ঘোষনা। ৩ মার্চ
দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান।
•৭ মার্চ, ১৯৭১, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ৭ মার্চ- রেসকোর্স ময়দানে বাঙ্গালী জাতির উ্দ্দেশ্যে উচ্চারণ করেন, “এবারের
সংগ্রাম- মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম- স্বাধীনতার সংগ্রাম”৷ তাঁর এই যুগা্ন্তকারী-কালজয়ী ভাষণের মাধ্যমে বাংলার
সকল জনগনকে একত্রিত করে পশ্চিম পাকিস্হানের বিরুদ্ধে সকলকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ন হতে উদ্বুদ্ধ করেন এবং লক্ষ
লক্ষ জনতার সম্মুখে স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক দেন । ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ স্বাধীন দেশ হিসেবেই বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনা
করেন। বাইরের কারো হুকুম এদেশে চলেনি। সবাই বঙ্গবন্ধুর নিদের্শ মেনে নিয়েছে। ১৬ মার্চ ক্ষমতা হস্তান্তর আলোচনা শুরু
হয় বঙ্গবন্ধু আর ইয়াহিয়ার মাঝে। ভুট্টৌ এসে আলোচনায় যোগ দেন। ২৪ মার্চ পর্যন্ত আলোচনা হয়।
•২৫মার্চ’ ১৯৭১, ২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হলে জেনারেল ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগ করেন এবং গভীর রাতে পূর্ব-পাকিস্হানের
নিরীহ জনগণের উপর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীরা পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংষ হত্যাযজ্ঞ চালায় যা ছিল পৃথিবীর
ইতিহাসে একটি জঘ্যতম কালো অধ্যায় ।
•২৬মার্চ’১৯৭১ , ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে অর্থাৎ রাত ১২টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। এই ঘোষনা সর্বত্র
টেলিফোন, টেলিগ্রাম ওয়ারল্যাসে পাঠানো হয় এবং এই রাতেই , রাত ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু পশ্চিম-পাকিস্হানীদের হাতে
গ্রেফতার হন এবং এই সময়ে বঙ্গবন্ধু র পরিবারের সকল সদস্যগণ তাঁর নিজ বাড়ী –ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারেই গৃহবন্দী
অবস্হায় দিন-যাপন করতে থাকেন । ২৬ মার্চ ইয়াহিয়া এক ভাষনে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে বঙ্গবন্ধুকে

দেশদ্রোহী আখ্যা দেন। ২৬ মার্চ যথাক্রমে চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এম এ হান্নান এবং পরবর্তীতে , ২৭ মার্চ
মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর লেখা “স্বাধীনতার ঘোষনা পত্র” টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে
তারা তাদের নিজেদের ভাষায় পাঠ করেন ।

•১০ এপ্রিল, ১৯৭১ – মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১০ই
এপ্রিল তারিখে কুষ্টিয়ার চুয়া ডাঙ্গায় এবং বর্তমান মেহেরপুর জেলার আম্রকাননে (পরবর্তী নাম ‘মুজিব নগর’ করা হয় ) শেখ
মুজিবের নেতৃত্বে ৷ ‘মুজিবনগর সরকার’ এর ‘ঘোষনা পত্র’ গঠন করা হয় এবং ‘মুজিবনগর সরকার’ এর পক্ষে প্রফেসর
ইউসূফ আলী বাংলাদেশের স্বাধীনতা লিখিত আকারে প্রকাশ করেন । ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল এই সরকারের মন্ত্রিপরিষদের
সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর
বিরুদ্ধে দেশের জনগণের প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়,
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে
সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানী হানাদার
বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ প্রবল যুদ্ধে রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন
ত্বরান্বিত হয়।

•১৭ই এপ্রিল, ১৯৭১ – ১৯৭১ সালের ১৭ ই এপ্রিল তারিখে , ‘মুজিবনগর সরকার’ আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহন করেন ৷
বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্র্পতি করে সেই দিন নতুন বাংলাদেশের নতুন সরকার গঠিত হয় জাতীয় চারনেতার সমন্বয়ে (সৈয়দ নজরুল
ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ মনসুর এবং কামারুজ্জামান এই চারটি নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে উজ্জল নক্ষত্রসম) ।
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ( অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে বন্দি থাকার কারনে ) অস্থায়ী উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ
নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী , ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী
অর্থমন্ত্রী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র ও পুনর্বাসনবিষয়ক মন্ত্রী করা হয় । এই মুজিব নগর সরকার ই দীর্ঘ নয় মাস
মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনা প্রদান করেছিলো ।
•টানা নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ – পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করে। তার আগে ৭ সেপ্টেম্বর
বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্হান সরকার মৃত্যুদন্ড প্রদান করে কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সেটা তারা আর কার্য্কর করতে পারেনি।
•১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারী আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে ঢাকায় আগমনের পূর্বে প্রথমে
লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং লন্ডন থেকে ঢাকায় আসার পথে ভারতে যাত্রা বিরতিতে সেখানে
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সহযোগী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ সেরে
বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারী’১৯৭২ এ ঢাকায় অবতীর্ন হন ৷ ঢাকায় পৌছার পর বাংলাদেশের জনগণ তাকে অবিস্মরনীয় সম্বর্ধনা
জ্ঞাপন করেন ৷ এবং এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের গৃহবন্দী থেকে মুক্তি দেয়া হয় ৷

•১২ জানুয়ারী -১৯৭২, বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৪৯ সালে দেয়া বাহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার
করে। ৬ ফেব্রুয়ারী ভারত সফর। ২৮ ফেব্রুয়ারী সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর। ১২ মার্চ মিত্রবাহিনীর বাংলাদেশ ত্যাগ। ১০
অক্টোবর জুলিও কুরী পুরস্কার লাভ।১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাব প্রদানের ঘোষনা। ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের
সংবিধানে স্বাক্ষর। ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর।

•১৯৭৩ সালে, স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের প্রথম নির্বাচনে , ৩০০ আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের
নেতৃত্বাধীণ ‘বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ’ ২৯৩ টি আসন লাভ করে এবং তিনি পুনরায় সরকার গঠন করেন ৷ তিনি ৬
সেপ্টেম্বর , ১৯৭৩ আলজিরিয়া, ১৭ অক্টোবর , ১৯৭৩ জাপান সফর করেন।
•১৯৭৪ সালের ১৭সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষন প্রদান।
•১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন। ২৪ ফেব্রুয়ারী’ ১৯৭৫ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের
সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ’ নামে একটি জাতীয় দল গঠন করেন । জাতীয় দলে যোগদানের জন্য সকল
রাজনৈতিক দল ও নেতার প্রতি আহ্বান জানান ।
•১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট , বঙ্গবন্ধু সরকারের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক এবং তৎকালীন সেনাবাহিনীর
সেকেন্ড-চীফ-ইন-কমান্ড মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান –একযোগে কয়েকজন সেনা-অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে
স্বপরিবারে নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য ইতিহাসের ঘৃন্যতম ষড়যন্ত্রটি করেন , ঠিক সেই নবাব সিরাজুদ্দৌলার মীরজাফরের
মতো ৷ বঙ্গবন্ধু কুচক্রী সেনাসদস্যদের হাতে স্ব –পরিবারে অত্যন্ত নির্মমভাবে ধানমন্ডীর নিজবাড়ীতে শহীদ হন। অথচ এই
সময়ে তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কে.এম.শফিউল্লাহ –এর নীরব ভূমিকা পালন আজও আমাদেরকে
নানা প্রশ্নের সম্মুখীন করে তোলে এবং ব্যথিত করে তোলে৷ তিনি নাকি ইনফরমেশনলেস অবস্হায় ছিলেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর
মৃত্যুর শেষ ফোনটি কিন্তু তিনি পেয়েছিলেন ৷ মৃত্যুর পূর্বে বঙ্গবন্ধু তাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন,”শফিউল্লাহ, তোমার
ফোর্স তো আমার পুরো বাড়ী ঘেরাও করে ফেলেছে ৷ প্লীজ ডু সামথিং”৷ জাতি আজ জানতে চায়, কেন সেদিন সেনাপ্রধান
কে.এম.শফিউল্লাহ সাহেব বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার জন্য ফোর্স পাঠান নি? তিনি যখন থেকে বুঝতে পারছিলেন যে, তাকে ডে বাই
ডে ইনফরমেশনলেস করে রাখা হছছে, তখন কেন তিনি সেটা বঙ্গবন্ধু এবং তার ঘনিষ্ট সেনা-কর্মকর্তাদের জানাননি ?
বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনে সেখানে সেনাবাহিনীর দুপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষ হতো ! তাহলেও তখন আমরা নিজেদের এই বলে
স্বান্তনা দিতে পারতাম যে, নাহ্, আমরা অন্ততঃ বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম ! তাঁর দুই কন্যা (যথাক্রমে
:১. বড় কন্যা-শেখ হাসিনা (বাংলাদেশের বর্ত্ মান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী)ও ২.ছোট কন্যা-শেখ রেহানা) এসময় জার্মানীতে
অবস্হান করার কারনে তারা বেঁচে যান৷ বঙ্গবন্ধু স্ব -পরিবারে নিহত হওয়ার পর পরই এসময় সারাদেশে সামরিক শাসন
জারি করা হয়।

•১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, তৎকালীন অবৈধ সরকার ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান’ এর আত্মস্বীকৃত
খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দেয়ার জন্য কুখ্যাত কালো আইন ‘ইনডেমনিটি আইন’ ও সামরিক অধ্যাদেশ জারি

করেন। তৎকালীন পররাষ্ট্রন্ত্রী খন্দকার মোশতাক –সেনাবাহিনীর সেকেন্ড চীফ ইন কমান্ড জিয়াউর রহমানের সহায়তায়
অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করেন এবং সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশের বিভিন্ন
দূতাবাসে চাকরী প্রদান করে, তাদেরকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন ৷

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক মতাদর্শ : রাজনৈতিক মতাদর্শগতভাবে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও
ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভিত্তি করে ও ‘বাংলাদেশ’ কে
সবদিক থেকে একটি স্ব্-নির্ভর রাষ্ট্র্ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ও একটি লক্ষ্-মাত্রা নিয়ে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁর
প্রিয়পা্ত্র্ আইনজ্ঞ ডঃ কামাল হোসেনের সহযোগীতায় বাংলাদেশের জন্য্ একটি চমৎকার সংবিধান প্রণয়ন করেন যা ছিল
তাঁর দীর্ঘ জীবনের রাজনৈতিক দর্শনের পরিচায়ক যদিও পরবর্তীতে আমরা দেখেছি, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের পরবর্তী
সরকারগুলো পর্যায়ক্র্ মে কীভাবে সেই সংবিধানটিকে কাটা-ছেড়া করে ক্ষত– বিক্ষত করেছেন৷‘বঙ্গবন্ধু’ সবসময় একটি
অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন, যেখানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান একত্রে বসবাস করবে
পারস্পরিক সম্প্রীতির মাধ্যমে। একটি রাষ্ট্রের জনসাধারণ যে যার ধর্ম পালন করবে। কেউ কারও ওপর হস্তক্ষেপ করবে না।
ধর্মের দোহাই দিয়ে রাজনীতি করা বা রাজনৈতিক দল গঠন করায়ও তিনি ছিলেন বিরুদ্ধ। তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের মূল
আদর্শ্ ছিল ‘বাঙালি জাতিকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা’। এ উপলব্ধি থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে রাষ্ট্রক্ষমতা
গ্রহণের পরপরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়নের জন্য
যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ, শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার সাধন, কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক
পরিবর্তন আনয়নের পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে
গিয়েছেন, যেখানে সরকার ও জনসাধারণ যৌথ উদ্যোগে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। সমবায়
ব্যবস্থার প্রচলন তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের একটি অন্যতম দিক। একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা উপহার দেওয়াই ছিল
তাঁর পরিপূর্ণ রাজনৈতিক দর্শন। সমাজতন্ত্র কায়েম করাও ছিল তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের আর একটি দিক।
বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী তে বলেছেন, “একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি, একজন
বাঙ্গালি হিসেবে যা কিছু বাঙ্গালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত,তাই আামাকে গভীরভাবে ভাবায়৷এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস
ভালোবাসা,অক্ষয় ভালোবাসা,যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবংঅস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে” ৷
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক মতাদর্শ ও আজকের আওয়ামীলীগের রাজনীতি : হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও এ.কে.ফজলুল হক -
এর নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার
টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার
সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। পরবর্তীকালে, ১৯৫৫ সালে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে পরে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নাম রাখা হয়: ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ ৷ ১৯৭০
সাল থেকে এর নির্বাচনী প্রতীক নৌকা৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে, ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার
পর এই সংগঠনটির নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’৷ অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত চিত্তে আজ বলতে হয়, মাওলানা
ভাসানী কিংবা বঙ্গবন্ধু –এর সময়ের আওয়ামীলীগ থেকে আজকের আওয়ামীলীগ তার গৌরবাজজ্বল-আদর্শগত দিক থেকে

অনেকটাই সরে এসেছে ৷তখনকার সময়ের রাজনীতিতে আমরা ছাত্রদের হাতে কখনও অস্ত্র্ দেখিনি, কথায় কথায় খুন-
রাহাজানি,মারামারি,টেন্ডারবাজি দেখতে পাইনি কিন্তু এখন পত্রিকার পাতা ওল্টালেই সেসব খবর দেখতে পাই৷ তখনকার
রাজনীতিতে বিরোধীদলগুলোর প্রতি ক্ষমতাসীন দলগুলোর (পূর্ব্ পাকিস্হানের রাজনৈতিক দল গুলোর কথা বলা হছ্ছে)
মনোভাব ছিল নমনীয় , আন্ত্ রিক ও বন্ধুবৎসল যা বর্ত্ মানে দুর্লভ৷ বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ছিল জনকল্যানমুখী কিন্তু
এখনকার রাজনীতির লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাড়িয়েছে-ক্ষমতামুখী৷ বঙ্গবন্ধুর আমলের রাজনীতিতে সাধারন মানুষ তাদের দুঃখ-
দুর্দশার কথা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে খুব সহজেই জানাতে পারতেন কিন্তু এখনকার সাধারণ জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশা সেই
পর্য্ন্ত আর পৌছতে পারেনা কিংবা সেই পর্যন্ত
পৌছাতে তাদেরকে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়৷ এখনকার রাজনীতিতে যে যত বেশী বড় বড় নেতাদের তোষামোদ
করতে পারবেন, তিনি তত বেশী তর-তর করে উপরে উঠে যেতে পারে অথচ শেখ মুজিব তখনকার রাজনীতিতে বিভিন্ন
সেক্টরের মেধাবীদের খুঁজে বের করে, ধরে এনে এনে রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক বড় বড় পজিশনগুলোতে তাদেরকে
প্রতিষ্ঠিত করে দিতেন৷ এখন সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা পাল্লা দিয়ে কে কার চেয়ে বেশি বিচারপতি থেকে শুরু করে
সমাজে গন্য্-মান্য্ দেরকে হেয় করা যায়, আলোচনায় আসা যায়, সে চেষ্টায় লিপ্ত৷ বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ই মার্চের ভাষণের
শুরুতেই আছে, “আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়৷” -এই কথা
থেকে এটাই কি স্পষ্ট না যে বাংলার মানুষের মধ্যে অনেকদিন ধরেই স্বাধীনতার আকাঙ্খা ছিল? কিন্তু বাংলার মানুষের সেই
আওয়াজ তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক কালের বেশিরভাগ নেতাই শুনতে পাননি এবং বুঝতেও পারেন নি, যেটা বঙ্গবন্ধু
বুঝতে পেরেছিলেন এবং সঠিকভাবে সঠিক সময়ে সঠিক পথে বাঙালিকে পরিচালিত করতে পেরেছিলেন৷ এ কারণের তিনি
এত দ্রুত তিনি বাংলার আপামর জনসাধারনের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন৷ আবারো আমার কেবল সেইকথাটি মনে
পরে যায় ! বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী তে বলেছেন, “একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি,
একজন বাঙ্গালি হিসেবে যা কিছু বাঙ্গালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত,তাই আামাকে গভীরভাবে ভাবায়৷এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস
ভালোবাসা,অক্ষয় ভালোবাসা,যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবংঅস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে” ৷ মনে প্র্শ্ন জাগে,
বঙ্গবন্ধুর মতো এইরকম একটি আদর্শ কী এখনকার রাজনৈতিক নেতারা হৃদয়ে ধারন করেন? এইরকম একটি বোধ লালন
করার মধ্য্ দিয়েই কেবল আমরা আজকের হিংসার রাজনীতি থেকে নিজেদের ও আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে পারি৷জনগনকে
উপহার দিতে পারি একটি সৌহার্দ্যপূর্ন ও স্হিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ যা একটি উন্নত রাষ্টে্র জন্য অনিবার্য ৷ বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান- এর জীবনী আলোচনার পরিশেষে এসে বলবো, বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা এবং একাধারে
একজন ছাত্রনেতা, সফল রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক ৷ ‘তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পন্ন হয়
এবং আমরা পশ্চিমা শাসক-গোষ্ঠীর হাত হতে স্বাধীনতা অর্জন করি’-একথা আজ ধ্রুবতারার মতো সত্য ও পরিস্কার৷ ১৯৭১
সালে তাঁর নেতৃ্ত্ব মেনে নিয়েছিলেন আমাদের জাতীয় চারনেতা , সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি
ওসমানী, বাংলাদেশের ১১টি সেক্টরের-সেক্টর কমান্ডারগনসহ জাতি-ধর্ম-বর্ন-গোত্র –নির্বশেষে দেশের আপামর জনসাধারন
৷ “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান” এদেশের জনগণকে নিজের জীবনের চাইতে বেশী ভালোবাসতেন এবং বিশ্বাস করতেন৷
তিনি সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন ৷ তাই তিনি কখনও রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্হায়
সরকারী বাসভবন অর্থাৎ বঙ্গভবন কিংবা গনভবনে বসবাস করেননি, তিনি নিজের বাসভবনে বসবাস করতেন৷ বাঙ্গালি
জাতির ইতিহাসে ১৯৫২,১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১-এর গৌরবময় ইতিহাসের জন্ম দেয়া সত্ত্বেও, ইতিহাসের সেই নবাব
সিরাজদ্দৌলার মীরজাফরের মতো বাংলার কিছু বিশ্বাসঘাতক সন্তানেরা (যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য্ হলেন, বঙ্গবন্ধুর
পররাষ্ট্র্মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক, তৎকালীন সেনাবাহিনীর সেকেন্ড চীফ ইন কমান্ড-জিয়াউর রহমান এবং সেনাবা্হিনীর
বিপথগ্রস্ত ও উচ্চভিলাসী কয়েকজন উচ্চপদস্হ কয়েকজন সেনা-কর্ম্কর্ত্া) বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেঈমানী করেন৷ ১৯৭৫ সালের
১৫ আগষ্ট মধ্য্ রাতে তাঁর নিজবাড়ীতে সম্পূর্ন্ অরক্ষিত অবস্হায় স্ব-পরিবারে বাংলাদেশের একদল বিপথগামী-উচ্চভিলাষী

সেনা কর্মকর্তাদের হাতে মাত্র ৫৫বছর বয়সে তিনি মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন ৷ বঙ্গবন্ধুর তাঁর মহৎ কর্ম ও গুনাবলীর
দ্বারা সাধারন মানুষের হৃদয়ে স্হান করে নিয়েছিলেন যে কারনে বাংলার আপামর জনগণ তাকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত
করেছিলেন। তিনি শুধুমাত্র তাঁর দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের দুঃখ-কষ্ট দূর করার জন্য নিজেকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত
করেননি, তিনি নিজেকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করেছিলেন বাংলার আপামর জনগোষ্ঠীর সবরকম মৌলিক-অধিকারসমূহ
পূরণ ও তাদের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক-শিক্ষাগত-আদর্শগত মুক্তির জন্য যা পশ্চিমা শোষকগোষ্ঠী কুক্ষিগত করে
রেখেছিল ৷
তাই তিনি শুধুমাত্র একটি দল বা গোত্রের নয়, তিনি শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নয়, তিনি আমাদের সকলের, তিনি
গণমানুষের । তিনি সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ বাঙ্গালী ৷ (চলবে) ৷
তথ্যসূত্র :
* শেখ মুজিবর রহমান, অসমাপ্ত আত্মজীবনী,দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, প্রথম সংস্করণ-সেপ্টেম্বর’২০১৪৷
* শেখ মুজিবর রহমান, কারাগারের রোযনামচা, প্রথম প্রকাশিত-২০১৭
* বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান-এর জীবনীর ওপর বিভিন্ন রচনাসমগ্র ৷
* ভিজিটিং ইন্টারনেট ৷

ফারহানা আকতার

তথ্যসূত্র: বুকস, ইন্টারনেট

লেখক : ফারহানা আকতার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক এবং গবেষক ৷

লেখকের অন্যান্য  বই

বাংলাদেশ সময়: ০:৪৪:২৩   ১০৩৫ বার পঠিত   #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ