পৃথিবী যখন অন্যায়-অবিচার, পাপ-পঙ্কিলতায় পরিপূর্ণ। মানুষ যখন মহাবিশ্বের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা’কে ভূলে গিয়ে মূর্তিপূজা করতো এবং চন্দ্র, সূর্য, গাছ, পাথরকে সৃষ্টিকর্তা মনে করে পূজা করতো। এছাড়াও লাত, মানত, উজ্জা নামের কিছু দেব-দেবীর পূজা করতো। তারা সবসময় মদ ও নারী নিয়ে মত্ত ছিল। তারা ছিল সে সময়ের সবচেয়ে বর্বর ও নিকৃষ্ট জাতি।তাদের মাঝে সর্বদা যুদ্ধ লেগেই থাকতো। সামান্য কোন ঘটনা নিয়ে বছরের পর চলতে থাকতো সেসব ভয়ংকর যুদ্ধ। এসব যুদ্ধ কখনো কখনো চল্লিশ /পঞ্চাশ বছর স্হায়ী ছিল।
সেসময়ে নারীদের ছিল না কোন সামাজিক মর্যাদা। তারা ভোগ্যপণ্যের মতো ব্যবহার হতো। কন্যা শিশু জন্মগ্রহণ করলে তাদেরকে দুর্ভিক্ষের প্রতীক মনে করে জীবন্ত কবর দেয়া হতো।ঠিক ঐসময়ে বিশ্বের মানুষের হেদায়েতের প্রতীক হয়ে মক্কার কোরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলোকিত করে ৫৭০খ্রিষ্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, পৃথিবীর মানুষের মুক্তির দিশারী,
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি ছোটবেলা থেকেই সত্যবাদী ছিলেন। যার কারণে তৎকালীন মক্কার অধিবাসীরা তাকে “আল-আমিন” বা বিশ্বাসী নামে আখ্যায়িত করেন। তার সততা এবং বিশ্বস্ততায় মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন আরবের অন্যতম ধনী ব্যক্তি খাদিজা (রাঃ) তাকে তার ব্যবসার দায়ভার অর্পণ করেন। মহানবী (সাঃ) সে দায়িত্ব সফল ভাবে পালন করে খাদিজা (রাঃ) এর আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। যার ফলশ্রুতিতে পরে মহানবী (সাঃ) ও খাদিজা (রাঃ) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। খাদিজা (রাঃ) পরবর্তীতে রাসূল (সাঃ) এর সকল বিপদে পাশে থেকে সাহায্য করেন। মহানবী (সাঃ) তার সৎগুণাবলী ও সুচিন্তার মাধ্যমে হাজরে আসওয়াদ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করেন। তিনি মক্কার নির্যাতিতা অধিবাসীদের রক্ষা করা এবং অত্যাচারীকে প্রতিহত করার জন্য মক্কার তৎকালীন যুবকের নিয়ে “হিলফুল ফুযুল” বা শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। তার বয়স যখন চল্লিশ বছর তখন তিনি মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে লাভের আশায় হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন ছিলেন। তখন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে ৬১০খ্রিষ্টাব্দের রমযান মাসে ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) তার কাছে ওহী নিয়ে আসেন। তার উপর অবতীর্ণ হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্হ আল-কোরআন। তখন রাসূল (সাঃ) মানুষকে দীনের দাওয়াত দিতে আরম্ভ করেন। প্রথম তিনবছর তিনি গোপনে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
এসময় বেশ কিছু ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, খাদিজা (রাঃ), আবু বকর (রাঃ), ওসমান (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ) সহ অনেকেই। কিন্তু যখনই তিনি প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন ওমূর্তিপূজা
বর্জন করতে বলেন। তখন কুরাইশরা রাসূল (সাঃ) এর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ও ইসলাম প্রচারে পদে পদে বাঁধা দিতে থাকেন। এবং তার উপর ও তার সাহাবীগণের উপর তারা বিভিন্নরকম অত্যাচার নির্যাতন চালাতে থাকেন। কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে মহান আল্লাহ তায়ালা ৬২২খিষ্টাব্দে তাকে মদীনায় হিজরতের আদেশ করেন। ফলে মহান আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সাঃ) তার বন্ধু ও সাহাবী হযরত আবু বকর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে গভীর রাতে কাফেরদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন। পরবর্তীতে অন্য সাহাবীরাও মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় হিজরত করে রাসূল (সাঃ) একটি নতুন সমাজ বিনির্মান করেন এবং মদীনায় একটি ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। এতে কুরাইশদের গাত্রদাহ শুরু হয়। তারা পৃথিবীর বু্ক থেকে ইসলামের আলো মুছিয়ে দিতে ও মদীনার ইসলামী শিশু রাষ্ট্রের কবর রচনা করার উদ্দেশ্য ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে মতান্তরে ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে বদর যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এ যুদ্ধে মহানবী (সাঃ) এর নেতৃত্বে মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র তিনশত তের জন। অপরদিকে কাফেররা আবু জেহেলের নেতৃত্বে এক হাজার সৈন্য নিয়ে বদর যুদ্ধে মুখোমুখি হয়। তুমুল যুদ্ধে মুসলমানদের চৌদ্দ জনের শাহাদাত বরণের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর বুকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ইসলাম। আর কাফেরদের মধ্যে থেকে তাদের সেনাপতি আবু জেহেল সহ সত্তর জন নিহত হোন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বদর যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে ইসলামের পতাকা উড্ডয়ন করেন। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের মাধ্যমে মদীনার ইসলামি রাষ্ট্রের ভিত শক্ত হয়। মহানবী (সাঃ) ও তার সঙ্গী-সাথীরা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে ইসলামের প্রচার প্রসার শুরু করেন। ফলে মদীনার বিভিন্ন গোত্র তখন দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এভাবেই ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বাণী মানুষের দরবারে পৌঁছে দিয়ে নতুন মানের সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মানের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর বুকে ইসলামের সূর্যোদয় শুরু হয়।
শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৩:০৩ ৭৯৯ বার পঠিত #মহানবী #মূর্তিপূজা #সর্বশ্রেষ্ঠ