৭টি বাড়ি , ২৪ টি ফ্ল্যাটের মালিক ও ৩টি গাড়ির ব্যবহারকারী ড্রাইভার মালেক ?

Home Page » জাতীয় » ৭টি বাড়ি , ২৪ টি ফ্ল্যাটের মালিক ও ৩টি গাড়ির ব্যবহারকারী ড্রাইভার মালেক ?
মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০



গাড়িচালক মালেক

বঙ্গ-নিউজঃ তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল মালেক ওরফে বাদল (৬৩)। পেশায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক। সর্বশেষ চালাতেন স্বাস্থ্য  অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নামে বরাদ্দ করা সরকারি গাড়ি। একজন গাড়িচালকের বেতনই বা কত? কিন্তু তিনি সেই সামান্য চাকরি করেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। গাড়িচালক পরিচয়েই টাকার কুমির বনে গেছেন মালেক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অপর দুটি গাড়ির একটি দিয়ে নিজের গরুর খামারের দুধ বিক্রি করেন, অন্যটিতে চড়তেন তার পরিবারের সদস্যরা। ঢাকায় রয়েছে তার কাঠায় কাঠায় জমি, একাধিক বহুতল বাড়ি ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। ডেইরি ফার্মসহ বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নি আছে কোটি কোটি টাকা। ব্যাংকেও আছে নামে-বেনামে টাকা। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যের এই গাড়িচালকের সম্পদের পরিমাণ শতকোটি টাকার বেশি। অবৈধ সম্পদ গড়তে গিয়ে অনিয়ম-অপকর্মে তিনি যেন ছাড়িয়ে গেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলোচিত-সমালোচিত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেনকেও। টাকা পাচার করেছেন বিদেশেও।
গতকাল রোববার-র‌্যাব-১–এর একটি দল চালক মালেককে রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। অবশ্য এর আগেই তার অপকর্ম আর সম্পদের অনুসন্ধান চালাতে শুরু করেছিলেন গোয়েন্দারা। সেখানে মালেকের যে সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে বিস্মিত সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা।
কীভাবে এত কিছুর মালিক হলেন এই ক্ষুদ্র কর্মচারী- সে অনুসন্ধানেও বিস্মিত হতে হবে সবাইকে। তিনি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও প্রভাবশালী স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে ভুঁইফোঁড় সংগঠন খুলে এর সভাপতি হওয়ার পরই যেন মালেক হাতে ‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়ে যান। ওই পদের ক্ষমতাবলে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের চালকদের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন। ওই পদের কারণে অধিদপ্তরের অসাধু সিন্ডিকেটে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তার সখ্য গড়ে ওঠে। এর পর থেকেই গাড়িচালকসহ বিভিন্ন ছোট পদে নিয়োগ-বদলি আর পদোন্নতির ‘বড়কর্তা’ বনে যান তিনি। এসব অপকর্ম করে কোটি কোটি টাকা আয় করেন তিনি।’স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন খুলে তিনি এর সভাপতি হয়েছেন। সেই পদের দাপট দেখিয়ে জিম্মি করে ফেলেছিলেন পুরো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। নিয়োগ-বদলি থেকে শুরু করে পদোন্নতিও হতো তার অফিস থেকেই!

র‌্যাব-১- রোববার আবদুল মালেক ওরফে বাদলকে তুরাগের বামনারটেক এলাকার একটি সাততলা ভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি গুলি, দেড় লাখ জাল বাংলাদেশি টাকা, একটি ল্যাপটপ ও একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।
গতকাল মালেককে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, সম্পদ গড়ার লোভে গাড়িচালক মালেক যেন অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের সম্পত্তি আর ‘সাম্রাজ্য’ রক্ষায় অবৈধ অস্ত্রও ছিল তার দখলে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসার সঙ্গে জাল মুদ্রার ব্যবসাও ছিল তার। মালেক তুরাগ এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করতেন। তাকে গ্রেপ্তারের সময় বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি ও দেড় লাখ জাল টাকা জব্দ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, দুদকের অনুসন্ধানে আবজাল দম্পতির নামে রাজধানীর উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডে তিনটি পাঁচতলা বাড়ি থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে। এ ছাড়া একই এলাকার ১৬ নম্বর রোডে পাঁচতলা বাড়ি ও উত্তরার ১১ নম্বরে সেক্টরে থাকার বিষয়টিও জানা যায়। আবদুল মালেকের স্ত্রী দুজন। প্রথম স্ত্রী নার্গিস আক্তারের নামে তুরাগ এলাকার দক্ষিণ কামারপাড়া রমজান মার্কেটের উত্তরপাশে ছয় কাঠা জায়গার ওপর সাত তলার দুটো আবাসিক ভবন আছে। এতে ফ্ল্যাট আছে ২৪টি। ওই ভবনের সামনে আছে ১০-১২ কাঠার আরেকটি প্লট। ভবনের তৃতীয় তলায় তিনি সপরিবারে থাকেন। বাকি ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া। বড় মেয়ে বেবির নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জায়গার ওপর ইমন ডেইরি ফার্ম নামের গরুর খামার আছে। এর বাইরে হাতিরপুলে পৈতৃক সাড়ে চার কাঠা জায়গার ওপর দশতলা ভবন নির্মাণাধীন।শুধু তাই নয়, ওই কর্মচারীর নামে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও ফরিদপুরে সারি সারি জমি এবং অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি থাকার তথ্য মেলে।

অষ্টম শ্রেণি পাস মালেক ১৯৮২ সালে সাভারে একটি স্বাস্থ্য প্রকল্পে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। দুই বছর পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে তার চাকরি স্থায়ী হয়। এরপর তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরে গাড়িচালক হিসেবে বদলি হন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত কাগজে-কলমে সেখানেই তিনি গাড়িচালক ছিলেন। এর আগে মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের গাড়ির চালকও ছিলেন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আগামী ২২ অক্টোবর মালেককে তলব করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে দুদকের হাজিরা দেওয়ার আগেই র‌্যাবের হাতে ধরা পড়লেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৪:৪৮   ৬৪৭ বার পঠিত   #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ