আজ একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করবো।
শিক্ষকঃতুই লেখাপড়ায় ভীষণ অমনোযোগী।কিছুই তো পারিস না।
ছাত্রঃ ক্যান? পারি তো স্যার!
শিক্ষকঃ আয় দেখি,তুই বিজ্ঞান বানান কর।
ছাত্রঃ (মাথা চুলকে) ব হ্রস্বি কার বি, প্যাঁচ-পুঁচ আ-কার,দন্ত্য ন।
….নাহ!
বিজ্ঞানে কোন প্যাঁচ-পুঁচ নেই।মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাত্রাকে সহজ থেকে সহজতর করে তুলতে মানব-সভ্যতার শুরু থেকে এখন অবধি বিজ্ঞান তার একনিষ্ঠ বন্ধু প্রযুক্তির হাতে হাত মিলিয়ে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতেও এ প্রচেষ্টা অব্যহত রাখবে।
আপনাদের ইতিমধ্যে জ্ঞাত এবং অজ্ঞাত কিছু বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার ফলাফল নিয়ে আজ আলোচনা করবো।
ভূতুড়ে পাপোষ/ব্লাডি বাথ ম্যাটঃ
এই পাপোষটি এমনভাবে তৈরি,যদি পানি বা আর্দ্রতা এই পাপোষে মুছা হয়,তাহলে পাপোষটির দিকে তাকালে আপনি চমকে উঠবেন!যদি আপনি দুটো ভেজা পায়ের পাতা এই পাপোষে মুছেন,মনে হবে,পুরো দুইটি রক্তাক্ত পা যেনো এতে কেউ মুছে দিয়েছে। তেমনটিই মনে হবে।পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যেই এটি শুকিয়ে গিয়ে রক্তের রং উবে যাবে।ছোট,মাঝারি, বড় এই তিন আকারে এটি আমাজন থেকে কেনা যায়।
জি ডি ইউ ও টু ড্রোনঃ
ড্রোন ভিউ সম্পর্কে আমরা সবাই কম-বেশি জানি।আপনি ইউটিউব ভিডিওতে আকাশের সীমানা থেকে ভুমির সীমানায় ফোকাস করার ফলশ্রুতিতে যে সব অভুত সুন্দর প্যানারোমা/প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী বা ইনফ্রাস্ট্রাকচার-গুলি দেখতে পান,সেগুলো অত্যাধুনিক ক্যামেরা সেট করা ড্রোন এয়ারক্রাফট থেকে তোলা হয়।
জি ডি ইউ ও টু হলো রিমুট নিয়ন্ত্রিত নতুন ড্রোন এয়ারক্রাফট। এতে আছে সুক্ষ্ণভাবে ছবি তোলার জন্য একটি বিল্ট ইন ফোর কে ক্যামেরা,সব এংগেল থেকে ছবি সুন্দরভাবে নেয়ার জন্য ভিশান পজিশানিং সিস্টেম এবং থ্রি এক্সেস ভিডিও স্টাবিলাইজেশান ফিচার।এটি এক কিলোমিটার দূর থেকেও নিশানা-বস্তুর নিখুঁত ছবি তুলতে পারে।এটি এমনভাবে বানানো হয়, যাতে করে কোন বাধা-বিপত্তি বা প্রতিবন্ধকতা সামনে আসলেও এটি সংঘর্ষে না জড়িয়ে এড়িয়ে চলতে পারে।এতে আছে এপস শেয়ারিং ও এডিটিং সফটওয়্যার যাতে সবার সাথে সোস্যাল
নেটওয়ারকিং সাইটে ভিডিও ফুটেজ ও ছবি শেয়ার করা যায়।
বসমা সেন্ট্রি ভিডিও ডোরবেলঃ
এটি চোর ধরার ক্ষমতাসম্পন্ন বহুমুখী একটি কলিংবেল। এটির একটি অংশ দরোজার বাহিরে থাকে।আরেকটি অংশ স্মার্ট ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকে।
এই কলিংবেলটি একসাথে অনেক কাজ করতে পারে।
এটি দিন বা রাতের আলোতেও নিখুঁতভাবে দরোজায় দাঁড়ানো আগন্তুকের ভিডিও আপনার ডিভাইসে তুলে ধরতে পারে। আপনি দরোজা বন্ধ অবস্থায় ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছেন।শুধু রুমে থাকা ডিভাইসের দিকে তাকিয়েই বুঝে ফেলবেন বাহিরে কে এসেছে।
যখন কেউ দরোজার বাহিরে এসে দাঁড়ায় বা কেউ বেল টিপে,তখন এই কলিং বেল আপনার ডিভাইসে নোটিফিকেশন পাঠাবে।
আপনি বাসায় নেই,এরকম ভয়েস মেসেজও এতে সেট করা যায়,যেন মেহমান অসময়ে এলে তা বুঝতে পারে।এতে থাকা ফিংগারপ্রিন্ট মডিউলটি বসমা এজিস ডোর লক সিস্টেমের সাথে কাজ করে।আপনি বাইরে থেকে বাসায় এলে চাবি ব্যবহার করতে না চাইলে আপনার আংগুলের ছাপ দিয়েও তালা খুলতে পারবেন।
ধরেন আপনার দরোজায় কেউ একটি পার্সেল রেখে গেল।চোর তা দেখে চুপি চুপি এলো চুরি করতে।তখনই ১১০ ডেসিবেলের সুতীক্ষ্ণ এলার্ম বেজে উঠবে।এতে বাইরের আবহাওয়া জানবার জন্য ওয়েদার সেন্সরও দেওয়া থাকে।
কি দারুন কলিংবেল, তাই না?
পানিতে সাঁতার কাটে এমন সাইকেলঃ
পানির উপর দিয়ে এই সাইকেল চলে।এই সাইকেল ব্যবহার করে নদী,লেক বা জলাশয়ের উপর দিয়ে সংক্ষেপে যাওয়া যায়।বর্তমানে বিজ্ঞানের এই চমৎকার আবিষ্কারটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
স্মার্ট মানিব্যাগঃ
একটি চিপস দিয়ে চালিত এই মানিব্যাগটিতে নতুন প্রযুক্তির কিছু অংশ যুক্ত করা হয়েছে,তাই এটি যখন কেউ চুরি করে তখন চোরের অগোচরে এটিতে থাকা “থিফ ডিটেকটর ক্যামেরার” মাধ্যমে চোরের ছবি আপনাকে তুলে পাঠায় এবং অনেক দূর থেকেও এর এলার্মের শব্দ পাওয়া যায়।
মাছ রোবট বিকিঃ
এটি একটি পানির নিচের ড্রোন।এর নাম বিকি।একে দুনিয়ার প্রথম মাছ রোবট বা আন্ডারওটার ড্রোন বলতে পারেন। এটি দুনিয়ার প্রথম রোবট যা পানির নিচে কাজ করেছে।
এতে যুক্ত আছে একটি ফোর কে আলট্রা এইচ ডি ক্যামেরা, একটি বায়োনিক কডাল ফিন/বায়োনিক লেজ।এটি স্মার্ট ডিভাইস বা রিমুট কন্ট্রোল দিয়ে চালানো যায়।চালাবেন কি করে?খুব সোজা।এটিতে থাকা সুইচ টিপে এটিকে পানিতে ছেড়ে দিলেই সে সুদক্ষ ডুবুরির মতোনই পানিতে নিজের ভারসাম্য বজায় রেখে চলা-ফেরা বা সাঁতার কাটা শুরু করে দেয়।আপনি মাছ ধরার সময়,জল-কেলি করার সময়,সাঁতার কাটার সময় বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে ওয়াটার-পোলো খেলার সময় বিকি নিষ্ঠার সাথে আপনার ছবি তুলবে বা আপনাকে ভিডিও করবে।এর কডাল ফিন বা লেজে লেগে ব্যথা পাবার ভয় নেই।নিরাপদ।আপনি বাসায় একা, আপনার ছেলে-মেয়েরা সুইমিংপুলে দাপা-দাপি করছে আপনি তাদের নিয়ে চিন্তিত আছেন,বিকি আপনার দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য তাদের ছবি তুলে আপনাকে পাঠিয়ে দিবে। বিকির দেহে জি পি এস পজিশনিং সিস্টেম সেট করা আছে,তাই আপনি যখনই তাকে সিগন্যাল পাঠাবেন,বাধ্য ছেলের মতোন সে আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে পানি থেকে উঠে আসবে।এতে আরো আছে ওয়াটারপ্রুফ কন্ট্রোলার/পানি-প্রতিরোধী নিয়ন্ত্রক,তাই এটি যখন পানির অনেক বেশি গভীরে থাকে,তখন এটিকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
বিকি আপনাকে পানির বা সাগরের সেই অতলে নিয়ে যাবে,যেখানে আপনি আগে কখনো যান নি।আপনি এবং আপনার ডুবুরি বন্ধুরা পানির অতলে ডুব সাঁতার দিচ্ছেন,সেই অসাধারণ মুহুর্তগুলি ভিডিও-বন্দি করে বিকি আপনার অন্যান্য বন্ধুদের সাথেও নেটওয়ার্কিং সাইটে শেয়ার করে দিবে।
জাইরোবলঃ
এটি একটি অত্যাধুনিক স্কেটিং করার যন্ত্র।
আমরা যারা রাস্তায় স্কেটিং করতে পছন্দ করি,তাদের জন্য আরো স্মার্ট যন্ত্র হলো এই জাইরোবল যা দেখতে বলের মতো। এটি একটি সেল্ফ-ব্যালেন্সিং টেকনোলজি যাতে ইন্সটল করা আছে ৫০০ ওয়াটের জাইরোস্কোপিক ইলেকট্রনিক মটর।যার গতি ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার।এটি চার্জ হতে আড়াই ঘন্টা সময় নিলেও ২৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে।
উড়ন্ত গাড়ী /হোভার কারঃ
এটি জার্মানির ফক্স ওয়াগন কোম্পানি নির্মিত দুই সিটের চোম্বকীয় শক্তিতে চলমান একটি উড়ন্ত গাড়ী দেখতে অনেকটা প্রায় ভিনগ্রহের ক্যাপসুলের মতো। এটি মাটির খুব বেশি উপর দিয়ে চলে না।যখন এটিকে মাটি থেকে উপরে উঠানো হয় তখন চোম্বকীয় শক্তিকে কাজে লাগানো হয়।এটি স্বয়ংক্রিয়, নিরাপদ এবং এটিতে দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য এক্সিডেন্ট প্রিভেনশন সিস্টেম আছে।
চায়নার বেইজিংএ চাইনীজরা ফক্সওয়াগন কোম্পানির পার্টনার হিসেবে কাজ করছে। হোভার কার টি খুব দৃষ্টিনন্দন।
আধুনিক স্পীডব্রেকার/টপি ইনটেলিজেন্সঃ
মেক্সিকোর কিছু বিশেষজ্ঞ এটি আবিষ্কার করেছিলেন।এটির সামনে একটি সেন্সর লাগানো থাকে,যা কিছু দূর থেকে এর দিকে ধেয়ে আসতে থাকা গতিশীল গাড়ির গতি মেপে নেয়।যদি গাড়িটি ধীরগতির হয়,তখন স্পীডব্রেকার টি তা আগে থেকেই সেন্সরের মাধ্যমে বুঝে নিয়ে নিজের দেহটাকে কিছুটা নিচু করে ফেলে অর্থাৎ ধন্যবাদ চলে যান বলে।আর যদি কোন গাড়ি খুব দ্রুতগতিতে আসে,তখন এটি আগে থেকেই সেন্সরের মাধ্যমে বুঝে নিয়ে নিজের দেহকে উঁচু করে দেয়।ভাবখানা এমন,আপনি এত দ্রুত চলছেন কেন?আমি এখানে আপনার স্পীড কমানোর জন্য রাত-দিন শুয়ে আছি।
জেটপ্যাকঃ
বেশিরভাগ মানুষই চায় পাখি হয়ে উড়তে,মেঘ হয়ে ভাসতে।
নিউজিল্যান্ডের মারটিন এয়ারক্রাফট কোম্পানি আপনাকে সেই সুবিধা দিতেই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।এই বাহনটি ছোট আকারের গাড়ির মতোন,এতে জেট ইঞ্জিনের বদলে রয়েছে ছোট কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী পাখা।আপনি এতে চড়ে অন্তরীক্ষে দাপিয়ে বেড়াতে পারবেন প্রায় আধা ঘণ্টা। নেমে আসার জন্য ব্যবহার করতে হবে প্যারাসুট। পরীক্ষামুলক ভাবে সফল এই জেট-প্যাক জনসাধারণের কাছে সহজলভ্য হতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে। বিজ্ঞানের সবচেয়ে সুন্দর চেহারা হলো এর গবেষণালব্ধ আবিষ্কার।
আমি তো স্থান-সংকুলানের ভয়ে সবগুলি উদাহরণ এখানে দেই নি।বেশির ভাগ চমকই বাকি রয়ে গেছে।
অন্য একসময় আমরা সেগুলি নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আমাদের এই ভালোবাসাময় পৃথিবীকে এক অনন্য উচ্চতায় পোঁছে দিয়েছে।
পৃথিবী হোক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে আরো উদ্ভাসিত। প্রতিটি জীবন হোক বিজ্ঞানের আশির্বাদে আলোকিত।জ্বেলে যাই আশার আলো।
তথ্যসূত্রঃ Future Tech, Insider, The Spy, ADVUT OO7, অজানা পৃথিবী,সাইবার টেক ( Youtube চ্যানেল) এবং Google Search.
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৮:৩৫ ১৩১০ বার পঠিত # #আবিষ্কার #আশ্চর্য #রবট #সারপ্রাইজ