স্বপন চক্রবর্তী,বঙ্গ-নিউজ:ভারতের বাঙ্গালী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জীবনাবসান হলো। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সৎ মেধাবী বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ছিল তাঁর। রাজনীতির সকল বিষয়ে সফল এই ব্যক্তিকে ক্রাইসিস ম্যানেজার বলেও অভিহিত করা হতো। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু এই রাজনীতিবিদ ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক পদ্মভূষণ খেতাবেও ভূষিত হন।
তিনি বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ নিয়ে গত ১০ আগস্ট দিল্লীর একটি সেনা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। দীর্ঘদিন একেবারে গভীর কোমায়ও আচ্ছন্ন ছিলেন। বাংলা একাডেমিতে ১০১৮ সালের ১৫ জুন আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
১০১৮ সালের ১৫ জুনেবাংলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় যোগদান করেছিলেন।
ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি, বাংলাদেশের বন্ধু প্রণব মুখোপাধ্যায় আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
তিন সপ্তাহ দিল্লির আর্মি হসপিটাল রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেলে চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার বিকালে মৃত্যু হয় ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে সব পক্ষের শ্রদ্ধা পাওয়া এই রাজনীতিবিদের।
তার মৃত্যুর খবরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক টুইটে বলেছেন, “ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে ভারত আজ শোকগ্রস্ত”।
পাঁচ দশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় কংগ্রেসে কাটানো প্রণবের পদধূলি নেওয়ার ছবি টুইটে শেয়ার করে বিজেপি নেতা মোদী লিখেছেন, “দেশের উন্নয়নের গতিপ্রকৃতিতে তিনি এক অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে গেছেন। একজন অসাধারণ পণ্ডিত, এক গৌরবময় রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতির সব মহল আর সমাজের সব শ্রেণিতে তিনি শ্রদ্ধা পেয়েছেন।”
একাত্তরে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভার সদস্য থাকাকালে তখনকার কংগ্রেস নেতা প্রণব যেমন মুক্তিকামী বাঙালির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তেমনি তিনি বন্ধু ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েও। তার স্ত্রী রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী শুভ্রা মুখোপাধ্যায় ছিলেন এই বাংলাদেশের নড়াইলের মেয়ে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধু হিসেবে ২০১৩ সালের ৪ মার্চ প্রণবের হাতে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের তখনকার রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান।
বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক শোকবার্তায় বলেছেন, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতির জন্যই এক ‘অপূরণীয় ক্ষতি’।
“প্রণব মুখার্জি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রণব মুখার্জির ভূমিকা আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত তৈরিতে তার ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।”
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শোকবার্তায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘পরম সুহৃদ’ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ‘অসামান্য অবদানের’ কথা স্মরণ করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে একজন ‘অভিভাবক ও পারিবারিক বন্ধুকে’ হারানোর কষ্টের কথা বলেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভারতে নির্বাসিত থাকাকালীন প্রণব মুখার্জি আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এমন দুঃসময়ে তিনি আমার পরিবারের খোঁজখবর রাখতেন এবং যে কোনো প্রয়োজনে আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ও আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দেশে ফেরার পরও প্রণব মুখার্জি সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ও পারিবারিক বন্ধু। যে কোনো সঙ্কটে তিনি সাহস যুগিয়েছেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, “প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে ভারত হারালো একজন বিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক নেতাকে আর বাংলাদেশ হারালো একজন আপনজনকে। তিনি উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:২৯:৩৯ ৬৭৮ বার পঠিত #ক্রাইসিস ম্যানেজার। #জীীবনাবসান #প্রণব মুখার্জি #বাঙ্গালী রাষ্ট্রপতি #সাবেক রাষ্ট্রপতি