বঙ্গনিউজ ডটকমঃ রাজধানীর সায়েদাবাদ আন্তঃবাস টামির্নালের যাত্রী ছাউনি মাদক ব্যবসায়ী ও যৌন কর্মীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।সাধারণ যাত্রীদের জিনিসপত্র, টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়া ও হয়রানি করার অভিযোগে যাত্রীরা দিনে আসতেও ভয় পায় এখানে।এখানে রয়েছে ১৪ যৌনকর্মী ও মাদক ব্যবসায়ীর শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ঈদকে সামনে রেখে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।জানা গেছে, বিআরটিএ সায়েদাবাদ আন্তঃবাস টামির্নালে যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধির জন্য একটি সুসজ্জিত ছাউনি নির্মাণ করে। ছাউনি এলাকায় দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৫০টি রুটের যাত্রীরা সেখানে বিশ্রামের সুযোগ পায়।কিন্তু বেপরোয়া যাত্রী হয়রানি, প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি ও সেবন, জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়া ও যৌনকর্মীদের হয়রানির কারণে সাধারণ যাত্রীরা দিনেও সেখানে আসতে চায় না।আরও জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে ১৪ যৌনকর্মীর তত্ত্বাবধানে এ ছাউনিতে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা চলে আসছে।এ চক্রকে কয়েকজন শ্রমিক নেতা, যাত্রাবাড়ী দুই পুলিশ ফাঁড়ির দু’জন এসআই ও কয়েকজন সিটি করপোরেশন কমর্চারী সহায়তা করে আসছে। পুরো যাত্রাবাড়ী এলাকায় এসব নারী মাদক সরবরাহ ও বিক্রি করে।প্রতি রাতে কয়েক লাখ টাকার মাদক বিক্রি হয় এখানে। পাশাপাশি যৌন ব্যবসাও করে আসছে তারা। বিভিন্ন রূপে যাত্রী ছাউনি এলাকায় এসব নারী সক্রিয়।শুধু তাই নয়, সায়েদাবাদ এলাকার বাইরে থেকে আরও প্রায় ৫০ নারীকে প্রতি রাতে ছাউনিতে নিয়ে এসব ব্যবসা করে। যৌন ব্যবসার আড়ালে মাদকের রমরমা হাট বসে।অনায়াসে মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ সব মাদকদ্রব্য তাদের কাছে পাওয়া যায়। টাকার বেশির ভাগ অংশ দুই পুলিশ ফাঁড়ি পায় বলে জানা গেছে।শুধু যাত্রী ছাউনি নয়, বাস টামির্নাল এলাকার অন্তত শতাধিক স্পটে দীঘর্দিন ধরে এসব করে আসছে। এতে যাত্রীরা ভয়ে ছাউনিতে না এসে বাধ্য হয়ে রাস্তার ওপর অস্থায়ী কাউন্টার বা গাড়ি থেকে টিকেট নেয়।রাস্তায় গাড়ির কারণে সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার ও শনিবার সরেজমিনে উঠে আসে এ ভয়াবহ চিত্র।হয়রানির শিকার কুমিল্লার যাত্রী ব্যবসায়ী সোলেমান বলেন, ‘গত তিন মাস আগে বাস আসতে দেরি হওয়ায় যাত্রী ছাউনিতে যাই। আমেনা নামে এক নারী লজেন্স বিক্রির কথা বলে আমার পাশে বসে মাদক বিক্রির প্রস্তাব দেয়।রাজি না হওয়ায় উল্টো যৌন হয়রানির ভয় দেখিয়ে আমার মানিব্যাগ ও ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। দায়িত্বরত পুলিশকে বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’প্রতারণার শিকার খুলনা বিভাগের এক বন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কিছুদিন আগে খুলনা আসার জন্য কাউন্টার থেকে টিকিট কিনি। বাস ছাড়তে দু’ঘণ্টা দেরি হওয়ায় যাত্রী ছাউনিতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যাই। বসার পর এক নারী আমার পাশে বসে। পরিচিত হওয়ার এক পর্যায়ে কয়েকজন লোক এসে আমাকে মারধর শুরু করে। পরে আমার কাছে থাকা ৪৭ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ করার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।এভাবে অসংখ্য অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কয়েকজন চালক ও হেলপার। মামারা (পুলিশ) এদের দিয়ে ব্যবসা করায় বলেও কয়েকজন অভিযোগ করেন।বিষয়টি স্বীকার করে বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. খায়রুল আলম মোল্লা বলেন, ‘সব সুযোগ সুবিধা থাকার পরও হয়রানির ভয়ে যাত্রীরা আসতে চায় না। আমরা বহুবার তাদের মারধর করার পরও সরাতে পারিনি। একাধিবার সভা করে এসব বন্ধের চেষ্টা করেও পারা যায়নি।’এসবের জন্য তিনি পুলিশকে সরাসরি দায়ী করলেন। ঈদকে সামনে রেখে বিষয়টি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সভায়ও তোলা হবে বলেও তিনি জানান।ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রী ছাউনিতে এমন হয়রানির অভিযোগ পাইনি বা বিষয়টি আগে জানতাম না।’তিনি পরবর্তীতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৯:২৭ ৩৮০ বার পঠিত