স্বপন চক্রবর্তী,বঙ্গ-নিউজ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, “অ্যান্টিজেন টেস্ট আমরা সরকারিভাবে অ্যালাউ করব। কিন্তু অ্যান্টিবডি টেস্ট আমরা এখন অ্যালাউ করব না।” করোনাভাইরাস শনাক্তে ‘সীমিত আকারে’ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন। তবে এখন অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া বিদেশগামীদের জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফি সাড়ে তিন হাজার থেকে কমিয়ে দেড় হাজার টাকা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তাইওয়ানের দেওয়া চিকিৎসা সরঞ্জাম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব তথ্য জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষা দ্রুত করার জন্য অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমোদন দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “করোনাভাইরাস শনাক্তে একটা হল পিসিআর টেস্ট, যেটা আমরা করে যাচ্ছি। আর দুটি টেস্ট- একটি অ্যান্টিজেন এবং অপরটি র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট।
তিনি বলেন, “এখন প্রায় ৮৮টি ল্যাবে পিসিআর টেস্ট হয়। কিন্তু টেস্টের সংখ্যা সেইভাবে বাড়ে না, কারণ কিছু লোকের অনীহা দেখা দিয়েছে।”
অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অ্যান্টিজেন এবং র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে বলছি যে, র্যাপিড টেস্ট আমরা এই মুহূর্তে করব না, করছি না। এটার সিদ্ধান্ত এখনও নেগেটিভ।
“অ্যান্টিজেন টেস্ট যেটা আছে, সেটা আমরা এখন অ্যালাউ করব সীমিত আকারে। সেটা হবে আমাদের হাসপাতালগুলোতে (সরকারি হাসপাতাল) এবং আমাদের যে সরকারি ল্যাব আছে সেখানে। যেখানে আমাদের ল্যাব নাই, সরকারের তত্ত্বাবধানে আমরা সেখানে অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা আগামীতে করব।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কেবল রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরটি-পিসিআর) পদ্ধতিতেই করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার অনুমতি রয়েছে, যা বিশ্বে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। তবে এই পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহের পর ফল পেতে বেশ সময় লেগে যায়, সেখানে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে আধা ঘণ্টার মধ্যে জানা যায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে কি না।
করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় বাংলাদেশেও অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করার পরামর্শ দিচ্ছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
গেল মাসে এক অনলাইন আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে খুব দ্রুত অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করা উচিৎ। আগে অ্যান্টিজেন টেস্টটা চালু করা উচিৎ।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছিলেন যে, এখন ঘরে ঘরে টেস্ট করা উচিৎ। নমুনা সংগ্রহের পর কোনো পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করিয়ে এনে তারপরে রিপোর্ট দেওয়া লং প্রসেস। এর চেয়ে আমরা অ্যান্টিজেন টেস্টটা ঘরেই করতে পারব। যাকে ট্রেস করা দরকার, টেস্ট করা দরকার তাকে আমরা ওই জায়গায় বসেই টেস্ট করতে পারি।
বে-নজির আহমেদ জানান, কোনো একটা অ্যান্টিজেন প্রাকৃতিকভাবে বা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে যদি মানবদেহে প্রবেশ করানো হয়, তখন দেহে যে ইমিউনুকমপিটেন্ট সেলগুলো আছে, তাদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় অ্যান্টিবডি।
করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “২০০ টাকার টেস্ট ১০০ টাকা, ঘরে বসে টেস্ট ৫০০ থেকে ৩০০ টাকা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের কাছে অনুরোধ এসেছে, যারা টেস্ট করে বিদেশে যায় তাদের সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে কমিয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।”
এসবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে নির্দেশনা পেয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৬:২৪ ৫৮৫ বার পঠিত # #অ্যান্টিবডি টেস্ট #করোনা #কোভিড-১৯ #বিদেশগামী #স্বাস্থ্যমন্ত্রী