ঢাকা কলেজ শুধু এই বাংলাদেশের মধ্যেই নয় বরং এটি এই উপমহাদেশের একটি প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ। জন্ম ১৮৪১ সাল।জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে অদ্যাবধি সগৌরবে স্বমহিমায় জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও দেশের মানুষের বিভিন্ন অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ঢাকা কলেজ। দীর্ঘ সময়ের পথ পরিক্রমায় শীর্ষস্থান ধরে রাখার এই দুঃসাধ্য কাজটি সম্ভব হয়েছে বোধ করি - এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সকলেই স্বপ্ন দেখতে যেমন ভালোবাসেন, তেমনি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আরো বেশি দক্ষ। আর এই দক্ষতার মাপকাঠিতে ঢাকা কলেজ সবসময়ই শীর্ষে। এ কথা মনে করিয়ে দেয় - এই কলেজের শওকত ওসমান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের মতো অসংখ্য প্রথিতযশা শিক্ষক আর রাষ্ট্রপতি, বিজ্ঞানী, ডাক্তার, কবি, সাহিত্যিক, প্রশাসক ও দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ শিক্ষার্থীদের তালিকার দিকে তাকালে।তবে এ কথা বললে খুব ভুল হবে না বলে মনে করি , ঢাকা কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জে.আয়ারল্যান্ড যেমন ঢাকা কলেজের সবকিছুতে বৈপ্লবিক মাত্রায় পরিবর্তন এনেছিলেন, ঠিক তেমনি ঢাকা কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বহুমাত্রিক মেধার অধিকারী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর নেহাল আহমেদ স্যার ঢাকা কলেজের অবকাঠামোগত ও ব্যবস্থাপনাগতদিকসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের চর্চা বাড়াতে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ঢাকা কলেজকে ক্রমান্বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ভিন্ন মাত্রার উচ্চতায়। বর্তমানে দেশের ক্রান্তিলগ্নে বৈশ্বিক মহামারী “কোভিড-১৯ ” এর বিস্তাররোধে সামাজিক দূরত্বকে নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয় কিংবা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ঢাকা কলেজ দেশের অন্যান্য দুর্যোগময় মুহুর্তের মতোই এবারও অগ্রপথিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।যেমনিভাবে ঢাকা কলেজ অবতীর্ণ হয়েছিল অতীতে দেশের প্রয়োজনে বিভিন্ন সংগ্রাম ও আন্দোলনে ; যেমন - ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভুথ্যান ছাড়াও অন- লাইন ভর্তিকার্যক্রম ইত্যাদিতে। শিক্ষাব্যবস্থায় বর্তমান করোনাকালীন পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা পদ্ধতি সম্পৃক্ত করে ঢাকা কলেজ অগ্রপথিক হিসেবে পথ দেখিয়েছে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তিনভাবেঃ
প্রথমতঃ অনলাইন শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা:
বর্তমান সময়ের বৈশ্বিক মহামারী “কোভিড-১৯” পরিস্থিতিতে ১৮ মার্চ,২০২০ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকা কলেজের সম্মাননীয় ও ডায়নামিক অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ স্বউদ্যোগে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস শুরু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।যা ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বপ্রথম অনলাইনে শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা!পরবর্তিতে এক এক করে অন্যান্য সরকারি কলেজও এই তালিকায় সামিল হয়। এক সময় “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার” এর শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশেনা অনুযায়ী বেসরকারি সকল কলেজও অনলাইন শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে।যা এখনও চলমান রয়েছে।ফলাফলস্বরূপ, ঢাকা কলেজের সম্মাননীয় ও সুদক্ষ অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ , সম্মাননীয় উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মইনুল হোসেন এবং ঢাকা কলেজের একদল নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক নিজেকে অনলাইন শ্রেণিকার্যক্রমের অগ্রপথিক হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে থাকবেন।
দ্বিতীয়তঃ অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন :
করোনাকালে লকডাউনের জন্য বাংলাদেশের অধিকাংশ কলেজের পক্ষে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়ে উঠে নি।ঢাকা কলেজও এর ব্যতিক্রম নয়।তবে এখানে বলে রাখা ভালো, ঢাকা কলেজ একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শুরু করে কিন্তু শুরু করার শুরুর দিকেই “কোভিড-১৯ ” মহামারীর বিস্তার প্রতিরোধ করতে দেশব্যাপী সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষনায় তা স্থগিত হয়ে যায়। মধ্যবর্তী সময়ে উক্ত শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন পাঠদান শুরু হয়;যা ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। করোনা মহামারী বিস্তারজনিত পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পর্যায়ক্রমে বাড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধ। কিন্তু একজন স্বপ্নদ্রষ্টা ঢাকা কলেজের সম্মাননীয় ও সুযোগ্য অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ স্যারের ঢাকা কলেজকে নিয়ে স্বপ্ন
দেখতে তো বাধা নেই। তিনি প্রত্যেকে মুহুর্তেই ঢাকা কলেজ পরিবার নামের সুশোভিত বাগানকে নতুনভাবে সাজানোর স্বপ্ন দেখেন। শুধু স্বপ্ন দেখেই ক্ষান্ত হতে তিনি অভ্যস্ত নন; স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার প্রগাঢ়তা ও নিখুঁত চেষ্টা তাঁকে একজন নেহাল আহমেদ হিসেবে এবং নিজেকে নিজে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঊর্ধশিরে সবার মাঝে সমুন্নত করে রাখেন। অন-লাইন ক্লাস চালু করার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পর একাদশ শ্রেণির অসমাপ্ত বার্ষিক পরীক্ষা অনলাইনে গ্রহণ করার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। তাঁর এই অনলাইন পরীক্ষা গ্রহণের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করেন ঢাকা কলেজের আইসিটি বিভাগের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকবৃন্দ।তবে এ ক্ষেত্রে ঢাকা কলেজের শিক্ষক, আইসিটি বিশেষজ্ঞ আবু সালেহ মোঃ মুজাহেদুল ইসলাম (সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ) এবং সহকারী প্রোগ্রামার মোঃ ইয়াসীন তানভীর (আইসিটি বিভাগ) এর নাম উল্লেখ না করলেই নয়। যাঁদের একনিষ্ঠ শ্রম ও মেধার বদৌলতে ঢাকা কলেজের সবক্ষেত্রে আজকের ডিজিটালাইলজশন সম্ভব হয়েছে। যাকে এভাবে বলা যায়,” সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড ঢাকা কলেজ”।
এই করোনাকালে অনলাইন পরীক্ষা গ্রহণের সফল চিত্র বাস্তবায়িত হয় ২০ আগষ্ট,২০২০ তারিখে একাদশ শ্রেণির অসমাপ্ত বার্ষিকী পরীক্ষা অনলাইনে গ্রহণের মাধ্যমে। যেখানে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ফিটলিস্টের মাত্র ৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারে নি।ফলাফলস্বরূপ,
করোনাকালীন সময়ে একাদশ শ্রেণির অনলাইন বার্ষিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার দা্ঁড়ায় ৯৯.৩৪%।
তৃতীয়তঃ পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে , প্রত্যেক ছাত্রের জন্য পৃথক সেটের বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্রে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয় বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের নেতিবাচক দিকের সফল ও কার্যকরী সমাধানকারী হিসেবেও আবির্ভূত হয় ঢাকা কলেজ।এ ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্রের সেটের সংখ্যা হয়েছে ১২১৫ সেট ।গতকালের চুড়ান্ত পরীক্ষাটি গ্রহণের আগে ১৮ আগষ্ট, ২০২০ তারিখে ট্রায়াল পরীক্ষা হিসেবে অনলাইন নমুনা পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। পরীক্ষার প্রথম দিন, নতুন পদ্ধতি ও নেটের কম গতিসহ ইত্যাদি কারণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পরীক্ষার্থীদের ১০মিনিট বেশি সময় দেয়া হয়। তবে পরবর্তি পরীক্ষাগুলোতে রুটিনে নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা শেষ হবে।গতকালের অন-লাইন পরীক্ষা সফলভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে ঢাকা কলেজ তার গৌরব ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতার সিঁড়িতে আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে বলে সুধীজনরা মনে করেন। এর মাধ্যমে দেশের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজ শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উম্মোচন করে দিয়েছে।যা আগামিদিনে শিক্ষাব্যবস্থায় মাইলফলক হয়ে থাকবে।অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরবর্তিতে ঢাকা কলেজের প্রয়োগকৃত অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারবে অনলাইন ক্লাস চালুকরণের মতোই।
ঢাকা কলেজের সম্মাননীয় অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ স্যারের নেতৃত্বে এই ইতিহাস ও গৌরবের অংশীদার ও সাক্ষী হতে পেরে ঢাকা কলেজের সকল শিক্ষক নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন। ঢাকা কলেজের সম্মাননীয় ও সুদক্ষ অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ স্যার তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়া এবং করোনাকালে শিক্ষাকার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ঢাকা কলেজের সম্মাননীয় সকল শিক্ষককে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।তাছাড়া তিনি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরিচর্যা কমিটি - নিবিড় কমিটি, মাপক কমিটি, আইসিটি বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ ও আইটি বিশেষজ্ঞ আবু সালেহ মোঃ মুজাহেদুল ইসলাম (সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ)কে।অধ্যক্ষ মহোদয় অনলাইনে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতে ঢাকা কলেজ আরো দক্ষভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সকলকে শুভ কামনা জানিয়েছেন।
সর্বোপরি, এই করোনাকালে ঢাকা কলেজের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে পথিকৃৎ হিসেবে অর্জনে
অধ্যক্ষ মহোদয়, উপাধ্যক্ষ মহোদয়,বিভাগীয় প্রধানবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, কর্মচারীগণ এবং স্নেহাস্পদ শিক্ষার্থীবৃন্দ অর্থাৎ ঢাকা কলেজ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সম্মিলিত প্রয়াসেরই বহিঃপ্রকাশ ।
আগামি দিনগুলোতে ঢাকা কলেজ তার সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গৌরবের আরো নতুন নতুন পালক সংযোজন করবে - এই প্রত্যাশা।
লেখক
মোসাম্মৎ আয়েশা আক্তার,
সহকারী অধ্যাপক,
অর্থনীতি বিভাগ,
ঢাকা কলেজ,ঢাক।
বাংলাদেশ সময়: ১:৫০:০২ ১০৩৪ বার পঠিত