চনো মোল্ল্যার মোবাইল প্রেম - সাঈফ আলম

Home Page » সাহিত্য » চনো মোল্ল্যার মোবাইল প্রেম - সাঈফ আলম
বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট ২০২০



মোবাইলে প্রেম

বিজয়পুরের হ্যানো মোল্ল্যার পৈত্রিক নাম মূলত মোহাম্মদ আব্দুল হানিফ মোল্ল্যা। জন্মের পরে আকিকা অনুষ্ঠান করে সুন্দর এই নাম নির্বাচনে তার পিতামাতার যত্নের কোন অভাব ছিলনা। বড় লোকেরা যে সমস্ত অবস্তুগত জিনিসের ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে হয় তা হলো নিজেদের ও তাদের সন্তানদের নাম। এত যত্নের এতখানি বৃহৎ নামে মোল্ল্যা গোষ্ঠীর কাউকেই একালে আর গ্রামের কেউ ডাকাডাকি করে না। কারণ গত দু—তিন প্রজন্ম ধরে মোল্ল্যারা ধন—সম্পত্তিতে ফতুর হতে হতে একদম জনখাটায় রুপান্তর হয়েছে। অথচ মাত্র ত্রিশ বছর পূর্বেও আশে পাশের দশ গ্রামের বুড়ো—জোয়ান সকলেই বিজয়পুরের এই মোল্ল্যাদের খুব নাম ডাক শুনতো আর অতিশয় মান্য করত। হ্যানো মোল্ল্যার দাদা কফিল উদ্দিন মোল্ল্যা ছিল একজন জমিদার কিসিমের লোক। আশে পাশের সাত গ্রামের কোন সালিশ—দরবার, বিচার—আচার করার ক্ষমতায় কফিল মোল্ল্যার সমকক্ষ তৎকালে এলাকায় আর কেউ ছিলনা। কিন্তু মোল্ল্যাদের সে বড় সব নাম ডাক আর দাপটের কথা এখন ইতিহাসে অনুসন্ধানের বিষয়।বর্তমানে জীবিত মোল্ল্যাদের জীবন যাপন আর মৃত্যুতে অতীত কালের সেই সম্ভ্রান্তের অবশিষ্ট কোন লক্ষণ আজ আর কারো খালি চোখে ধরা পড়েনা। বাঙালি সমাজের একটি রীতি হলো এই যে, এখানে অর্থ সম্পদের প্রাপ্তি ও ক্ষয়ের সাথে সাথে মানুষের নামের আকার—আয়তনও সমানুপাতিকভাবে অগ্র—পশ্চাতে হ্রাস—বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। কপালে কারো অথের্র যোগ ঘটলে ধন কপালের মানুষটির নামখানিরও সমানুপাতে প্রসারণ ঘটে। আবার অর্থ হারিয়ে কেউ পথে বসলে, মানুষেরা নিজ দায়িত্বে হতভাগ্যের নাম খানিরও সামানুপাতিক সংকোচন করে নামের আকার ও অর্থের পরিমাণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। নামের প্রতি সম্মান ও যত্ন বণ্টনের এই বাঙালও সূত্র ধরে, ধন হারিয়ে এক কালের ধন কুবের আব্দুল হানিফ মোল্ল্যার নাম খানিও শ্রী শুন্য হয়ে পড়ে আর বহুদিন হলো মানুষেরা তাকে অযত্নে,আর অশ্রদ্ধায় এখন হ্যানো মোল্ল্যা বলে ডাকাডাকি করে।
সেই হ্যানো মোল্ল্যার বাড়ির একটা ঘটনা। সেদিন ছিল শুক্রবার। গোয়ালপাড়ার হাটের দিন। বেলা ডুবে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। হাটুরেরা বাজার সদায় নিয়ে গোয়ালপাড়া থেকে নিজ গ্রামের বাড়ি ফিরে আসছে। বড়—ছোট সকল ঘরেই সদাব্যস্ত গৃহিনী সমাজের কেউ কেউ বাজার মাটিতে ঢেলে, ছড়ায়ে—ছিটায়ে হাটুরেদের সাথে খুটে খুটে হিসাব নিকাশ করে দেখছে যে, কোন আবশ্যক সদায় কেনা হয় নাই, আর কোনটি অনাবশ্যকভাবে বাজার হতে বাড়ি চলে এসেছে। জরুরী কোন সদায় বিশেষ আনতেই ভুলে গেছে দেখে কোন কোন বাড়ির গিন্নিরা মিনশেদেরকে তাদের দুর্বল স্মৃতি শক্তির জন্য কষে তিরস্কার করছে। সেই তিরস্কারের অম্লবাণী বাড়ির সীমানা ভেদ করে বাতাশের সাহায্য ছাড়াই আপন শক্তিতে আশে পাশের বাড়ির লোকদের কান পর্যন্ত পৌছে যাচ্ছে, আর শ্রবণকারীদের তাতে বিনে পয়সায় মৃদু সাপ্তাহিক বিনোদন ঘটছে। উঠোন জুড়ে হুটুরেপুটুরেদের খেলা আর চেঁচামেচি তখনও থেমে যায়নি। ব্যস্ত স্ত্রীরা থেকে থেকে খোকাখুকিদের খেলা শেষ করে, হাত মুখ ধুয়ে বই নিয়ে বসার জন্য পুনঃপুনঃ আহ্বান জানাচ্ছে। মুরব্বিদের নামাজের ইকামতের উচ্চরব বাড়িতে বাড়িতে ধ্বনিত হতে শোনা যাচ্ছে।
হঠাৎ হ্যানো মোল্ল্যার বাড়ি থেকে ভীষণ এক গোলযোগের আওয়াজ আসতে লাগলো। পাশের বাড়ির সুজল মাস্টরা নামাজ শেষ করে জায়নামাজের পাটিতে বসে তজবি গুনতে আরম্ভ করেছে মাত্র। চেঁচামেচি শুনে মাস্টার মশাই আন্দাজ করতে লাগলেন যে, হ্যানোর বাড়ীতে হয়তো কোন বিপদ—আপদ ঘটে থাকতে পারে। তাই তজবি রেখে, জায় নামাজ ছেড়ে দ্রুত মাস্টার মশাই পা চালিয়ে মোল্ল্যাবাড়ি গিয়ে হাজির হলেন। হ্যানো মোল্ল্যার উঠানে অনেক লোক ইতোমধ্যেই জমে গেছে। দেখা গেল উঠনের মাঝখানে প্লাসটিকের টুলের উপর ঘোমটা দিয়ে মাথা ঝুলায়ে বসে আছে এক নারী। কৌতূহলী মানুষেরা ঠেলা ঠেলি করে তাকে দেখার চেষ্টা করছে আর দর্শন উত্তর নানান মন্তব্য ও সমালোচনামূলক বাক্য উৎপাদন করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
শীঘ্রই জানা গেল যে, হ্যানো মোল্ল্যার ছোট ছেলে চনো মোল্ল্যা নিজে নিজে বিয়ে করে বউ নিয়ে বাড়ি এসেছে। অর্থাৎ, বিয়ের সাজে টুলের উপর বসা নববধূর মত চোখে মুখে লজ্জার আবরণ নিয়ে মৌনতার সাধনায় রত ঐ নারী হলো আসলে চনো মোল্ল্যার বিয়ে করে আনা নতুন বউ। কিন্তু বাড়ির কারো কাছে চনোর এ হঠাৎ বিয়ের বিষয়ে কোন পূর্ব আভাস ছিলনা। কোনদিন কারো সাথে এ ব্যাপারটি আলোচনায়ও কখনো তুলেনি। চনোর এত বড় সাহস আর অভিভাবকের অনুমতির অপেক্ষা না করে বিয়ের মত এতবড় কাণ্ড করে বাড়ি ফিরে আসার ঘটনায় তার বাবা হ্যানো মোল্ল্যা হৃদয়ে বেদম আঘাত খেয়ে, মুখের ভাষা হারিয়ে নিতান্ত এক খণ্ড পাথরের ন্যায় ঘরের মাটির বারান্দার এক কোণে মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল। আগন্তুক সব নারী পুরুষ দুঃখ কাতর বাবার দিকে তাকাচ্ছিল আর ভাবছিল যে, এই অবস্থায় তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার, কিছু দেখানোর, বা কিছু শোনানো ভারী এক অন্যায়ের পর্যায়ে পড়বে। তাই সকলে মনোযোগের সাথে শুধু নব বধূর আগাগোড়া নিরীক্ষা আর অবিরাম লজ্জা ও অপমানজনক মন্তব্য ছুঁড়ে চনো মোল্ল্যার আক্কেল পছন্দ নিয়ে সমালোচনার বন্যা বয়ে দিতে থাকলো।
কেউ বলল, “হায় খোদা! এ তো দেখি দাদী রে।” আরে চনো দেশে কি মেয়ে মানুষের এতটাই আকাল পড়ে গেল যে, এই বুড়ি বিয়ে করে আনলি?”
কেউ বললো, “যতই হোক চনো কি এতই পাগল যে, বুড়ি দাদীকে বিয়ে করে আনবে? ভাল করে শুনে দেখ নিশ্চয় মেয়ের বাড়ির লোকজন জোর করে চনোর গলায় এই বুড়িকে গচায়ে দিয়েছে।”
চনোর বয়স কুড়ি। চিকন ছিপ ছিপে গড়ন। মধ্যম মানের লম্বা। মুখে দাড়ি গোপের স্বল্পতা তাকে বয়সের তুলনায় আরো তরুণ করে তুলেছে। চনোর গায়ের রং শ্যামলা।মাথার গোছড়ি চুল পেছনের দিকে চিরুনী করে। মুখটা গোল ও লম্বার মাঝামাঝি রকমের। টানা চোখ যুগল আর বাঁশির মত নাক— সব মিলে সিনেমার নায়কের চেহারা ফেল মারবে তার পুরুষ সৌন্দর্যের কাছে। ঈশ্বরের আশির্বাদের অভাব পড়ায় মোল্ল্যারা ধনে সম্পদে আজকাল কারো গণনায় না পড়লেও, চেহারা ছবিতে আল্লাহ তাদেরকে এমন অকৃপনভাবে গড়েছেন যে, মোল্ল্যা গোষ্ঠীর ছেলে মেয়েরা কারো নজর এড়াতে পারে না।
এমন ছেলের এ কেমন বউ? সাবই এই প্রশ্নটি জোরেসোরে ধ্বনিত করে হ্যানো মোল্ল্যার উঠোনের বায়ু মণ্ডল ভীষণ ভারী করে তুললেন। উৎসুক হাজেরীন নব বধূর মুখের চামড়ার ভাঁজ সংখ্যা গণনা করে, মাথায় পাকা চুলের গুছি টেনে টেনে বিছিন্ন করে, এবং হাত—পায়ের আঙুলের মসৃণতার ঘাটতির আধিক্য ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে সবাই মোটামুটি ধারণা দিতে লাগলেন.
যে, বউ এর বয়স ষাটের বেশি বৈ কম হবে না। কেউ একজন নাছোড় মহিলা অনেক জেরা করে করে কনের মুখ থেকেই আন্দাজকারীদের বয়স আন্দাজের সত্যায়ন পেলন। এক পর্যায়ে, নতুন বউ নিজ মুখে স্বীকার করলেন যে, তার বয়স পঞ্চান্ন কি আটান্ন।
ঘটনা শুনে আগে পরে যারাই হ্যানোর বাড়িতে ছুটে আসলো, ঘটনাটা জানলো এবং চনোর বউকে দেখলো তাদের কারো কাছ থেকেই প্রায় ষাট বছরের বয়সের মহিলাকে বিশ বছরের চনোর বউ হিসাবে কোনই অনুমোদন মিলল না। না বাড়ির কেউ এ বউকে গ্রহণ করতে চাইলো, না পাড়া পড়শিরা কেউ এ বউ গ্রহণে সমর্থন জানালো।
অতঃপর চনোর কাছ থেকেই বয়সের এত বড় অসম বিয়ের মূল কাহিনী প্রকাশ পেয়ে গেল। চনোর নিজের মুখের বর্ণনায় জানা গেল যে, চনোর সাথে এ মেয়ের প্রেম তিন মাসের। প্রণয়ের সূত্রপাত হয় একদিনকার মোবাইল কল দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। ভুল করে চনোর ফোন কলটি এই মেয়ের নম্বরে ডায়াল হয়ে যায়। ফোন নম্বরের ভুল—সঠিক নির্ণয়, সংশোধন ও দুঃখ প্রকাশ দিয়ে কথা এইখানেই না থেমে তা প্রেমালাপে রুপান্তর হয়ে পরবর্তী তিনমাস পর্যন্ত নিয়মিত হলো। তিন মাসে মাথায় গড়াতে গড়াতে প্রেম এক পযার্য়ে বিয়ের হাউসে চড়লো। অবশেষ দাদীর বয়সী প্রেমিকা স্ত্রী হয়ে ঝুলে পড়লো চনোর গলায়। তবে তা চনোর সুখে ও সম্মতিতে নয়, জোর করে।
নারী বিষয়ে চনোর পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল শুন্য। নারীর ছল কোনটি আর সত্য কোনটি তা নির্ণয়ের কোন জ্ঞান তার একেবারেই ছিলনা। কোন দিন কোন মেয়ের সাথে তার প্রেমের কোন নাতি দীর্ঘ আলাপ ঘটার কোন ইতিহাসও এলাকায় কারো জানা ছিলনা। ফলে দিনের পর দিন যে মেয়ের কণ্ঠস্বর, সুর ও বাণী শুনে শুনে তার তরুণ হৃদয় অনবরত শুধুই কাতর হয়েছে সেই প্রেমচারিণীর বয়স যে ষোল নয়, ষাট সে বিষয়ে কোন সন্দেহ তার মনে মুহূর্তের জন্যও বাসা বাঁধতে পারেনি। কল্পনায় ধরে নেওয়া কোন এক সুন্দরী তরুণীর দূরালাপন শুনে তার হৃদয়ের গলনাঙ্কই কেবল বেড়েছে প্রতি দিবস রজনী ধরে। প্রেমিকা বয়সে তার জন্য মানানসই রকমের তরুণী হবে, দেখতে অপরূপ সুন্দরী হবে। এমনই স্বপ্নে পূর্ণ হয়েছে তার তরুণ হৃদয়—মন আর অবিরাম শূন্য হয়েছে তার ধৈর্য্য শক্তি। বাঁধ ভাঙা জোয়ার উঠলো স্বপ্নের প্রেমিকাকে সরাসরি একবার দেখে নয়ন জোড়াবার আর একান্তে কাছে পাবার।
খুব শীঘ্রই সেই ক্ষণ যেন না চাইতেই আপনা আপনি এসে পড়লো চনোর জীবনে।
প্রেমিকার জরুরী ফোন আসে চনোর কাছে। কঠিন দুটি বিকল্পের মাঝে তাকে নিক্ষেপ করে তার প্রেমিকা জানায়—
“আমার কাল বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আমাকে পেতে হলে তোমাকে আজকের মধ্যেই আমার বাড়ি এসে পৌঁছতে হবে এবং আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় তুমি আমাকে চিরকালের জন্য হারাবে।”
তরুণরা জয় করে যত আনন্দ পায় হেরে গিয়ে কষ্ট পায় তার অনেকগুন বেশি। এরা জয়ের আনন্দ ভুলতে নেয় খানিক সময় কিন্তু হারের বেদনা মনে রাখে জীবন ভর। আর হারানোর বস্তু যদি হয় প্রেমিকা তাহলে তো সেটা তাদের অস্তিত্বের সমান হয়ে দাঁড়ায়।
চনো গরীব মানুষ হতে পারে কিন্তু প্রেমিকার ফোনের এই আখেরি ফয়সালার আহ্বান সে অন্যান্য দশটা রক্ত-মাংসের তরুণের মতই সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে অনুভব করছিল। উত্তেজনায় তার তরুণ, কোমল মনের সমস্তটা দীর্ঘ ক্ষণের জন্য প্রেয়সীর দেওয়া দুই বিকল্পের মাঝখানে পড়ে যেন একের পর এক আছাড় খেয়ে মরতে লাগলো। প্রেয়সীকে হারোনো পৃথিবীর সমস্ত বিবেচনায়ই তার পক্ষে একটা অসম্ভব কাজ এবং ভীষণ অসুখের বিষয় বলে মনে হলো চনোর কাছে। তাই বিয়ে করে ফেলার জন্য তরুণ চনো মোল্ল্যা ভেতরে বাইরে অত্যন্ত নির্ভীক হয়ে উঠলো।
“তোমাকে হারালে আমি মরেই যাব । কোন কিছুই আমাকে আটকাতে পারবে না। সুতরাং আমি কাল আসছি”।
এমনই প্রতিজ্ঞার কথা জানিয়ে দিয়ে প্রেমিকাকে সে এক স্বর্গসুখের সাগরে ভাসিয়ে দিল সেদিন। বিজয়পুর থেকে গাড়ি করে, কিছু পথ ইজি বাইকে চড়ে, খানিকটা এলাকা ভ্যানে চড়ে রাজপথ, মেঠোপথ, আর আগাড়—ভাগাড়—খাল—ব্রিজ সব পাড়ি দিয়ে পরের দিন সন্ধ্যায় চনো মোল্ল্যা সম্পূর্ণ একা গিয়ে হাজির হলো রাজবাড়ী জেলার পাংশা গ্রামে মেয়ের বাড়িতে।
ক্ষণিকের মধ্যেই মেয়ের বাড়িতে বিয়ের আয়োজনের কিঞ্চিত লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠলো চনোর কাছে। মেয়ের আত্মীয় স্বজনদের কেউ কেউ এই উপলক্ষে মেয়ের বাড়ি এসে হাজির হয়েছেন। ভাবী স্ত্রী সূত্রে চনোর সাথে সম্পর্কের ধরণ প্রকৃতি নির্ণয় করতঃ আত্মীয়দের কেউ কেউ চনোর সাথে হাসি মশকরার দু চারটে কথা বার্তাও খরচ করলেন । এরপর খানা পিনার পর্ব ও মিটে গেল। এগুলোর কোন কিছুতেই চনোর ভাল লাগছিল না তবে আপত্তি করাও সম্ভব হয়ে উঠলো না কারণ তাতে প্রাথমিক পর্যায়েই জামায়ের ভদ্রতা—সভ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ে বিয়ের সম্ভবনা নাকচ হয়ে যায়।
অচিরেই চনো মোল্ল্যা তার তরুণী প্রেমিকার সাথে মুখোমুখি সাক্ষাতের জন্য সত্যি সত্যি অস্থির হয়ে উঠলো। বিয়ের আগে ক্ষণকালের জন্য হলেও তার প্রেমিকাকে সে একবার নিজ চোখে দেখে নিতে চায় আর তাকে নিয়ে শত কৌতূহল আর কল্পনার লম্বা তিন মাসের যে ঘোড়দৌঁড়টা দুর্বার গতিতে তার মনের মধ্যে এ যাবৎকাল ধরে ছুটে চলেছে এবার সেটা চূড়ান্তভাবে সে থামাতে চায়। মেয়ে পক্ষের কাছে এরূপ বাসনা প্রকাশ করতেই পরক্ষণে জবাব আসলো—
“মেয়ে বিয়ের সাজে সেজে গুজে বসে আছে। এখন সময় নষ্ট করে কারো কোন উপকার নেই। সুতরাং কবুল পড়েই চিরকালের জন্য স্ত্রীকে দেখার অধিকার লাভ কর।”
কিন্তু চনো মোল্ল্যা নাছোড় বান্দা হয়ে উঠলো। কারো কোন যুক্তি তর্কই তার কানে উঠলো না। সে ছাফ ঘোষণা করে দিল মেয়েকে না দেখে সে কোন ভাবেই এ বিয়ে করতে পারবে না। এ নিয়ে চনো মোল্ল্যার সাথে মেয়ে পক্ষের দু—একজনের ছোটখাটো একটা বিতর্ক হয়ে গেল। এ ঘটনায় চনোর মনে রহস্যের একটা দমকা বাতাস বয়ে গিয়ে একটা শংকার সৃষ্টি করলো। তথাপি সে তার দাবিতে স্থির রইলো যে, না দেখে কাউকে সে বিয়ে করবে না।
অবশেষ চনোর জয় হলো। চূড়ান্ত পরাজয়ের মালা পরবার জন্য ক্ষণকালের জন্য তার দাবীতে সে জয়ী হলো। তাকে অন্দর মহলে মেয়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু মেয়েকে দেখার পর যেন বিশাল আকাশের সমস্তটা চনো মোল্ল্যার মাথার উপরে ভেঙে পড়লো আর মনের ভেতরে সে মুহুর্তেই ভীষণ আহত হলো।
ঘোমটা টেনেই দেখতে পেল যে, সে মুচে ঠকা ঠকতে চলেছে। চনোর কাছে মনে হলো মেয়ের বয়স যেন চনোর মায়ের বয়স ছাড়িয়ে তার দাদীর বয়সের সাথে প্রতিযোগিতা করতে শুরু করেছে।
চনো মোল্ল্যা বেঁকে বসলো। এ বিয়ে সে করবে না। কিন্তু বিয়ে না করে বাড়ি ফেরা তার আর সম্ভব হলো না। গলার উপর গাছি দা পড়লো।
“সালা প্রেম করবা আর বিয়ে করবা না। তা তো হবে না। বিয়ে না করলে কল্লা নিয়ে আর বাড়ি ফিরতে হবে না।”
এভাবে মেয়ে পক্ষের আরো অনেক কঠিন ও কঠোর হুংকার গর্জনের বিপরীতে একা কোন শক্তিতেই টিকতে না পেরে চনো মোল্ল্যা কবুল বলে বউ নিয়েই সেদিন বাড়ি এসে হাজির হলো। আর এতেই মোল্ল্যা বাড়িতে এত কীর্তি-কাণ্ডের অবতারণা হয়েছিল।
সজল মাস্টার অদূরেই হ্যানো মোল্লার মাটির বারান্দায় পেতে রাখা বেদে পাটির উপরে বসে নিঃশব্দে সমস্ত কিছুই অবলোকন করছিল আর ভাবছিল যে, পাংশার অধিবসীরা বিশ বছরের ছেলের ঘাড়ের উপর ষাট বছরের মেয়েকে গায়ের জোরে গছায়ে দিয়ে সমস্ত বিচারেই ভীষণ অন্যায় করেছেন। মনে মনে এর একটা উপযুক্ত প্রতিকারের উপায় নিয়েও মাস্টারের ভেতরে নিঃশব্দে কিছু ভাবনা বয়ে গেল। কিন্তু আশা দিয়ে কিছুই বলতে পারলেন না।
এমন সময় পথে কোথাও কারো কাছ থেকে মোল্ল্যা বাড়ির কাহিনী শুনে হুন্ডা হাকিয়ে এক চ্যালা সহ কুদে বিশ্বাস হ্যানো মোল্ল্যার বাড়িতে এসে হাজির হলো। কুদে রাজনীতি করে। হালে নেতা হয়েছে। পূর্বে মুরব্বীদের দেখলে সালাম দিত, শিক্ষক দেখলে বিনয়াবনত হতো, শ্রদ্ধা করতো। এখন করে না। ছোট—বড় সকলের কাছেই সে এখন বরং সালাম—কালাম প্রত্যাশা করে। তার দল ক্ষমতায়। পুলিশের সাথে তার খুব উঠা বসা চলে দৈনন্দিন। থানা, কোর্ট—কাছারি তার কাছে ডাল ভাতের বেশি কিছু না। ভাল মানুষকে ধরে যখন তখন পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে থানায় আটকাতে পারে, আবার ওয়ান টু’র মধ্যে মানুষকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার ক্ষমতাও রাখে। নানান উপকারের আর বিপদ উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাবৎ গ্রামের মানুষের কাছ থেকে তার হাজার হাজার টাকা মেরে খাওয়ার ইতিহাস কখনো সে পুরাতন হতে দেয় না। এটা বরং নৈমিত্তিক কর্ম। ধান্দাবাজি সব সময় হাল নাগাত করে এলাকায় আলোচনার—সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকা তার প্রধান পরিচয়।
নেতা কুদের এমন চরিত্র সম্বন্ধে মাস্টার মশাই খুব ভাল ভাবেই খবর রাখেন। কুদের উপস্থিতিতে সজল মাস্টার হ্যানো মোল্ল্যার বাড়তি একটা বিপদের আশংকা করতে লাগলেন। যুবকদের মধ্যে যাদের উত্তেজনা অন্যদের তুলনায় একটু বেশি প্রকাশ পেতে দেখা গেল, তারা কুদে লিডারকে ঘিরে ধরে এমন আগ্রহ ও আবেদন নিয়ে অভিযোগ করতে লাগলো, যেন কুদে লিডারই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ছাড়া চনোর জীবনে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনার কথা শুনে প্রতিকার করার মত উপযুক্ত কেউ এই এলাকায় আর অবশিষ্ট নেই।
“লিডার, দেখেন কতবড় জালিয়াত, দেখেন। রাজবাড়ীওয়ালারা কতবড় অন্যায় করেছে আমাদের চনোর সাথে, দেখেন।”
“চনোকে ডাক আমার কাছে”, লিডার বলল।
চনোআসলো।
“ এই মহিলার সাথে তোমার সম্পর্ক ছিল?”
“হ। ”
“পরিচয় হলো কীভাবে?”
“মোবাইলে প্রেম।”
“হুম”।
“তো জানতে না যে তার এত বয়স?”
“না।”
“সে তোমাকে কখনো বলেনি তার এত বয়স?”
“না একদিন ও না। সব সময় ছেমড়িদের মত কথা বলতো আর ভাবতাম আমি কোন ছেমড়ি মানুষের সাথে কথা বলছি। ”
“এ বিয়েতে কি তোমার মত ছিল?”
“না কাকা, আমি রাজি ছিলাম না। জোর করে দিয়েছে।”
চনোর সংক্ষিপ্ত জবানবন্দি শুনে কুদে লিডার উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে মুসকিল আছানের বাণী শোনাতে আরম্ভ করলো এভাবে—
“ঠিক আছে সমস্যা নেই। কোন চিন্তা করার দরকার নেই। ওরা ওদের গায়ের জোরে বিয়ে দিয়ে আমাদের ছেলের ঘাড়ে ষাট বছরের বুড়ি উঠিয়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের গায়ের জোরে ঘাড় থেকে এই বুড়িকে নামিয়ে তার নিচ বাড়িতে ফেরত পাঠাবো। সোজা কথা!”
কুদে লিডারের এই সোজা কথাটা এই বুড়ি বৌমার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তির জন্য হ্যানো মোল্ল্যার কাছে মুহুর্তেই খুব লোভনীয় মনে হলো। কথাটায় যেন গভীর সমুদ্রে ডুবন্ত প্রায় এক মানুষের হঠাৎ একটা নৌকার দেখা পওয়ার মত বড় ভরসার মনে হলো চনোর বাপের কাছে। চিন্তায় শরীরের সমস্ত বল হারানো, ভাবনায় কোন কূল না পাওয়া, দঃখ—লজ্জায় মাথা কাটা পড়া হ্যানো মোল্ল্যা ঘরের বারান্দা থেকে এক লাফ মেরে একেবারে উঠানের মধ্যে কুদো লিডারের কাছে এসে পড়লো আর হাত পায়ে জড়ায়ে ধরে কুদে লিডারকে একটা বিহিত করে দেওয়ার আকুল আবেদন নিবেদন পেশ করতে লাগলো। কুদে লিডারও তেমনি তার হাত শুন্য ফিরিয়ে দেবেন না এই সান্ত্বনা দিয়ে উপস্থিত সকলকে সাক্ষী রেখে কাল সকালে থানায় বসে বিষয়টার ফয়সালা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়ে হুন্ডা চালিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
কুদে লিডারের সমাধানের উপায় শুনে কেউ কেউ আনন্দিত হলো, আবার কেউ কেউ অপছন্দও করলো। যারা খুশি হলো তারা মোল্ল্যাদের ভাল চায়। আর যারা অপছন্দ করলো তারা মোল্ল্যাদের দ্বিগুণ ভাল চায়। মোল্ল্যাদের দ্বিগুণ কল্যানকামীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সজল মাস্টার। তার দীর্ঘ দিনের লক্ষণ দেখে ছাত্র—ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ বাণী করার যে চর্চা সারা জীবন করে এসেছে তার জোরে ধারণা করতে লাগলেন যে, কুদে নিশ্চয় মরার উপরে খাড়ার ঘা একটা মারার পাকা আয়োজন সেরে গেলেন। নির্ঘাত কাল থানায় গিয়ে চূড়ান্তভাবে সেই ঘা খেয়ে হ্যানো মোল্ল্যা আর তার ছেলে চনো মোল্ল্যা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরবে।
পরের দিন সকালে নাস্তা পানি খেয়েই হ্যানো মোল্লা আর তার দু’একজন পড়শি নসিমন গাড়ি দাবড়িয়ে সকাল দশটার মধ্যে পৌঁছে গেল সদর থানায়। সাথে করে নিয়ে গেল তাদের নতুন বউ যাকে তারা বিসর্জন করতে পারলে মনে—প্রাণে বাঁচে।
রাতের মধ্যেই মাঠের যে একমাত্র দশ কাঠা আবাদী জমি ছিল সেটা একজনের নিকট বন্দক রেখে ষাট হাজার টাকার জোগাড় করে রেখেছিল চনোর বাপ। সে রাতে টাকার জোগাড়ে সজল মাস্টারের কাছেও গিয়েছিল হ্যানো মোল্ল্যা। সজল মাস্টার টাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে বড় উপকারটা করতে পারেনি ঠিকই, তবে সে যে উপদেশ দিয়েছিল তা শুনলে হয়তো হ্যানোর টাকার চেয়ে আরো অনেক গুণ বেশি উপকার হতো।কুদের হাতে কোন টাকা দিলে তার সমস্তটাই জলে যাবে। মাস্টারের এমন সাবধান বাণী হ্যানো মোল্ল্যাকে বিন্দু পরিমাণও নিরুৎসাহিত করতে পারেনি। বিপদগ্রস্ত মানুষের কীসে ভাল হবে, আর কীসে মন্দ ঘটবে বিপদকালে অনেক সময়ই সেই প্রভেদ জ্ঞান সঠিক উপায়ে কাজ করে না। হ্যানো মোল্ল্যার ও যথারীতি তাই ঘটলো। থানায় গিয়েই কুদে লিডারকে ইশারায় ডাক দিয়ে আড়ালে নিয়ে গিয়ে তার হাতে টাকার একটা বান্ডিল গুজে দিয়ে হ্যানো মোল্ল্যা বলল—
“লিডার, একমাত্র সম্বল ঐ যে দশ কাঠা জমি আমার ছিল সেটা বন্ধক রেখে এই ষাট হাজার টাকা জোগাড় করে এনেছি। এটা থাকলো আর তুমি থাকলে ভাই। এই জঞ্জাল থেকে আমাদের কে মুক্ত করে আমাদেরকে বাঁচাও, ভাই।”
“এত কম টাকায় কি করে কি হবে? কেসটা কি এত সোজা রে, ভাই। আমি বলেছিলাম না যে কমপক্ষে এক লক্ষ টাকা লাগবে?”
“তা বলেছিলে কিন্তু তুমি তো ভালই জান এর বেশি আর আমার সাধ্য নেই। নিজের লোক মনে করে এই দিয়েই কাজটা সেরে দাও, ভাই।”
“আচ্ছা যাই হোক দেখি কতদূর কি করা যায়।”
কাজের জটিলতার তুলনায় এই টাকাটা কিছুই না এমন একটা ভাব দেখায়ে চোখে মুখে চরম বিরক্তি ছড়ায়ে কুদে লিডার থানার ভেতরে ঢুকে গেল। নতুন বউকেও থানার ভেতরে ডাকিয়ে নিলো।
হ্যানো মোল্ল্যা, তার ছেলে চনো মোল্লা আর তাদের সাথে আসা প্রতিবেশিরা থানার বাইরে বসে অনেক আশার মুক্তির ক্ষণ গণনা করতে থাকলেন। এভাবে দেড়—দু’ ঘন্টা কেটে গেল। কুদে লিডার এর কোন দেখা নাই। ভেতরে মনে হয় শক্ত রকমের কোন যুদ্ধ বেঁধেছে আর কুদে লিডার নিশ্চয় মোল্ল্যাদের পক্ষে প্রাণ পনে লড়াই করে চলেছে।
এর বিপরীত কোন অনুমান মাথায় না এনে তারা সকলেই ধৈর্য্যের মাত্রা বৃদ্ধ করে প্রলম্বিত কাল ধরে থানার বাইরে কুদে লিডারের প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।
আড়াই ঘণ্টা পরে কুদে লিডার বেরিয়ে এসে জানালো—
“আমার আরো অনেক দেরী হবে। সন্ধ্যা লেগে যাবে ফয়সালা হতে। তোমরা বউ সহ আপাতত বাড়ি ফিরে যাও।যত রাতই হোক আামি তোমাদের বাড়ি গিয়ে পৌঁছাবো।”
তারপর এক মাস হয়ে গেল। কুদে লিডারের কোন দেখাও নাই, সাক্ষাৎ ও নাই। পরে জানা গিয়েছিল, সেদিন থানার ভেতরে মেয়ে পক্ষেরও কেউ কেউ উপস্থিত ছিল। কুদে লিডারই গোপনে তাদের খবর দিয়ে থানায় ডেকে এনেছিল। তাদের কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা খেয়ে হ্যানো মোল্ল্যাদের সাথে সে বিশ্বাস ঘাতকতা করে আর তাদের কোন খোঁজ রাখেনি।
ষাট হাজার টাকা আর ঘরে ফিরে আসলো না। তবে দাদীর বয়সী নতুন বউটা থানা ঘুরে আবার চনো মোল্ল্যার বাড়িতেই ফিরে আসলো। প্রথম বার এসেছিল গায়ের জোরে, আর দ্বিতীয়বার পয়সার জোরে। মোল্ল্যারা বুঝলেন যে, তাদের গায়ের জোর, টাকার জোর— কোনটাই নাই। তাই তাদের ঘাড়ের উপরে জোর ওয়ালারা উঠবে, মটকাবে, যা ইচ্ছে তাই করবে তাতে তাদের কিছুই করার থাকে না, বলারও থাকেনা। ফলে, মোবাইল প্রেমের কণ্টক মালা গলায় পরে অনোন্যোপায় বিশ বছরের চনো মোল্ল্যা ষাট বছরের বুড়ির সাথেই অর্থহীন ঘর সংসার করতে থাকলো।

সাঈফ আলম

বাংলাদেশ সময়: ১:২৬:২৯   ৯০৩ বার পঠিত   #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ