কারো কারো হাতের ছোঁয়ায় কলম হয়ে উঠে জীবন্ত।
কলম তার জড়তা ঝেড়ে না বলা কথাগুলো বলে বেড়ায় কানে কানে। হারিয়ে যাওয়া না শোনা কথাগুলো কলম উপস্থাপনা করে সমাজের বিবেকের মঞ্চে।গুলশান আরা রুবী’র সে-ই রকম সৃষ্টিশীল হাতের ছোঁয়ায় কলম প্রাণ পায়। তাঁর কলম কথা বলে,গান শোনায়,সমাজের বিবেকের মঞ্চে উপস্থাপনা করে গোপন, রস- বেরসের কথাগুলো।
গুলশান আরা রুবী’র অসাধারণ সৃষ্টি “কুরুক্ষেত্রের সমাধি” একটি উপন্যাস! সুুবিন্যস্ত গল্পের নিদারুণ চিত্রপট। প্রেম,দ্রোহ,প্রকৃতি,সমাজ বাস্তবিকতা ও ইতিহাসের সংমিশ্রণে উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে শক্ত কংক্রিটের সুসজ্জিত ইমারত।
“কুরুক্ষেত্রের সমাধি- এটি হারিয়ে যাওয়া না বলা গল্প যা কারো কলমে উঠে আসে নি। লেখক যুদ্ধের সময়কার সেই সত্য কাহিনি তার কলমের আঁছড়ে জাতির সামনে উপস্থাপনা করেছে। যুদ্ধের বর্বরতা, হায়নাদের হিংস্রতা আর গ্রামের মানুষদের ভালোবাসার উদাহরণ বস্তুতঃ এই বইয়ের মাধ্যমে ফুঁটে ইঠেছে বাঙালী জাতির চেতনা ও তাদের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস”
- আব্দুর রউফ ( সাবেক প্রধান বিচারপতি)।
“কুরুক্ষেত্রের সমাধি”- গ্রন্থের মুখবন্ধে উপরোক্ত মন্তব্যটি লিখেছেন সাবেক প্রধান বিচারক আব্দুর রউফ। যদি আরেকটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে বলা হয় তবে বলতে হবে- সময়ের ঘড়ির আওয়াজ শোনার ক্ষমতা নিয়েই তিনি আমাদের কালের প্রতিটি অনিবার্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। দর্শন,ইতিহাস,সমাজ,রাজনীতি,ভাষা,মুক্তিযুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদসহ বহু বিষয় একাকার করেছেন উপন্যাসটিতে। লেখক বহুমাত্রিক প্রতিভাধর তার প্রমাণ পাওয়া যায় গ্রন্থটিতে।
“কুরুক্ষেত্রের সমাধি” - উপন্যাসটিতে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি চরিত্র তাঁরার মতো ঝলমল করে। চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে কথা বলে।
সুমনা ইসলাম- গ্রামের মেয়ে। হালকা পাতলা গড়ন। ডাগর ডাগর চোখের অপরুপ চাহনি। তার একটি দুঃখ হলো তার কোন প্রেমিক পুরুষ নেই। তাই তো গলা ছেড়ে গান ধরে- “কেউ কেন দিন আমারে তো কথা দিলো না….!”
ঔপন্যাসিক গুলশান আরা রুবী তাঁর উপন্যাসে সুমনা ইসলাম চরিত্রে গ্রামের মেয়েটিকে অত্যান্ত সহজ-সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করেছেন। সুমনা ইসলাম যেনো প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি মেয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
জমিদার তারা শংকর রায় চৌধুরী ও ইংরেজকন্যা স্যান্ডেলিনা পর্টারের প্রেমকাহিনির নিদারুণ চিত্রপট এঁকেছেন চৌকশ কলমে। লেখিকা গুলশান আরা রুবী এখানে তাঁর রোমান্টিকতা পরিচয় দিয়েছেন। দেখিয়েছেন নিজস্ব মুন্সীয়ানা।
সানজু এ গল্পের নায়িকা, অষ্টাদশী কুমারী। নিজস্ব চরিত্রে বারবার মুগ্ধ করবে পাঠককে।
তেল চকচকে চুল, শিক্ষিত তরুণ সাজল। সানজুর পাগল প্রেমিক। আড়ালে থেকে সানজুকে খুব ভালোবাসে। তারপর একদিন সামনে এসে জানিয়ে দেয় মনের কথাগুলো।
আবেগ,প্রেম আর ভালোবাসা দিয়ে সুন্দরভাবে সুসজ্জিত করেছেন উপন্যাসের এ দৃশ্য। পাঠকের মনের চাহিদা মেটাবো সানজু-সাজলের রোমান্টিক কথোপকথনগুলো। মনের মাঝে গেঁথে রবে কবিতার মতো কথাগুলো।
সুমনা- জমিদারপুত্র আফজাল চৌধুরীর অসম প্রেমের গল্প স্থান পেয়েছে “কুরুক্ষেত্রের সমাধি” উপন্যাসে। এ গল্প এক হৃদয়াবিদারক গল্প। এ গল্প আমাদের শেঁকড়সন্ধানী ও দেশপ্রেমিক হতে শেখায়। আমাদের বলে দেয় সব থেকে দেশ বড়ো।
করিম- সানজুর বড়ো ভাই। প্রতিবাদী সাহসী তরুণ। ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মিথ্যা খুনের অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামী। এ চরিত্রটি উপন্যাসের কাহিনিকে পূর্ণতা দিয়েছে। সমাজ বাস্তবিতার পরিপ্রেক্ষিতে এ চরিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে।
ছোটদেরকে দেশ,যুদ্ধ আর সত্য ইতিহাস বলে বেড়াতো শমসের আলী। ইংরেজরা তাঁকে মারতে চেয়েছিলো পরী দিঘীর পানিতে ফেলে। সজল তাঁকে বাঁচিয়ে নেয়। শমসের আলী প্রতিবাদী চরিত্র। দেশদ্রোহী,যুদ্ধাপরাধী,রাজাকারের বিরুদ্ধে শমসের আলীর তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভ দিয়ে পরিসমাপ্তি হয় উপন্যাস “কুরুক্ষেত্রের সমাধি”!
ঔপন্যাসিক গুলশান আরা রুবী একজন প্রতিভাবান লেখিকা।
তিনি একাধারে কবি,প্রাবন্ধিক,ঔপন্যাসিক ও গল্পকার। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে লিখে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
কবি গুলশান আরা রুবীর “লন্ডনী বধূর আত্মকথা” খুব জনপ্রিয় একটি বই। যা ইতোমধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে পাঠক সমাজে। কবির প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলো-
“স্মৃতির পাতা”, “না বলা কথা”, “মন যার শাওনের মেঘ”, “লন্ডনী বধূর আত্মকথা”,” আমার মনের কথা”, “অপেক্ষা”, “ভালোবাসার কমলাদিঘী”, “জীবন নদীর মোহনায়”, “পারিবারিক জীবনে নৈতিক পরিচর্যা”।
ঔপন্যাসিক,কবি গুলশান আরা রুবী ও তাঁর সৃষ্টি “কুরুক্ষেত্রের সমাধি” উপন্যাসের উত্তোরোত্তর সফলতা ও সমৃদ্ধি কামনা করি। “কুরুক্ষেত্রের সমাধি” উপন্যাসটি পাঠকের মন জয় করবে বলে আমার বিশ্বাস। বইটির বহুল প্রসার কামনা করি।
লেখক-
জেনারুল ইসলাম
তরুণ কবি ও গল্পকার
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৩:৪৩ ১০১৯ বার পঠিত