ববি শিক্ষার্থী সুপ্রিয়া দাসের আত্মহত্যা এবং ফেসবুকিয় সুইসাইড

Home Page » শিক্ষাঙ্গন » ববি শিক্ষার্থী সুপ্রিয়া দাসের আত্মহত্যা এবং ফেসবুকিয় সুইসাইড
রবিবার, ২ আগস্ট ২০২০



Md.ismail বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:-
সুপ্রিয়া দাস
তিন-চার মাস আগে টিউশন থেকে হলে ফিরে ফেসবুকে লগ-ইন করে স্ক্রল করতে করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছোট বোনের স্ট্যাটাস দেখে আতঙ্কিত হয়েছিলাম। সে কী লিখেছিল তা হুবহু মনে নেই। তবে সেখানে আত্মহত্যার স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিলো। এর আগে কোনোদিন কথা না হলেও সাথে সাথে মেসেঞ্জারে নক করেছিলাম। আমার মনে হচ্ছিলো- তার সাথে কথা বলা উচিত। আমি ভেবেছিলাম- সে হয়ত সুইসাইড করে ফেলবে দ্রুত। কিন্তু রিপ্লাই পেলাম। তার সাথে অনেকক্ষণ জীবন সম্পর্কে আমার যত ইতিবাচক চিন্তা সেসব নিয়ে কথা হয়েছিলো। সাইকোলজির একাডেমিক জ্ঞান না থাকলেও আমার নিজস্ব যেসব জীবন উপলব্ধি তা দিয়ে তাকে বোঝাচ্ছিলাম। সে তো কিছুতেই বোঝে না। জীবন যে একটা মহা তিক্ত বিষয় এই ধারণা থেকে কোনভাবেই সে বের হলো না। পরে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরেরদিন সকালে তাকে ফেসবুকে এক্টিভ দেখে ভালো লেগেছিলো।

কোথাও পড়েছিলাম- আত্মহত্যাকারীরা কথা বলার কাউকে পেলে অধিকাংশ সময় ফিরে আসেন। এই চিন্তা থেকে আমি অনেক মানুষের সাথে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলেছি। সব সময়ই তাদের কথা পরিপূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। আমার ক্ষুদ্র জীবন উপলব্ধি দিয়ে তাদের সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। এতে কিছু হোক বা না হোক ঐসব মানুষেরা একজন খুব ভালো শ্রোতা পেয়েছেন। আর আমি বিশ্বাসও করি,  আমার ইতিবাচক গুণগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে ধৈর্যশীল শ্রোতা হবার ক্ষমতা।

তো কয়েকদিন পরে সেই ছোট বোনটি আবার স্ট্যাটাস দিয়েছে এবং স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ হচ্ছে আত্মহত্যার কথা। যথারীতি আমি এবারো প্রথমে কমেন্টে এবং পরে ইনবক্সে তাকে ভুল প্রমাণ করতে গেলাম। এতে আবারো অনেক কথা হলো এবং সে যথারীতি পরের দিন সকালে সে ফেসবুকে এক্টিভ। এরকম অনেকের সাথেই আমি কথা বলেছি তাদের দেওয়া জীবন সংক্রান্ত হতাশার স্টেটমেন্ট পড়ে। এদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা আত্মহত্যার কথা ভাবেন এবং খুবই বিষন্নতায় দিন কাটান। আমি এরকম কয়েকজনের সাথে এখনো কথা বলি। যোগাযোগ হয় বন্ধুর মতন। তারাও শ্রোতা পেয়ে কথা বলেন। এখনো যাদের সাথে তাদের হতাশা নিয়ে কথা বলি, ব্যক্তিজীবনে তাদের আসলেই তেমন কোনো শ্রোতা নেই।

পরে আবারো সেই ছোট বোনের টাইম লাইনে সুশান্ত সিং এর আত্মহত্যা নিয়ে লেখা দেখলাম। এজাতীয় ফেসবুক এক্টিভিটিতে আমি অনেকবার অনেকের জন্য আতঙ্কিত হয়েছি এবং সৎচিন্তা থেকেই ছুটে গিয়েছি তাদের ইনবক্সে। আবার অনেক সময় অনেকে আমাকে নক করেছেন সিনিয়র হিসেবে। যথারীতি খুব মনোযোগী শ্রোতা হয়ে তাদের কথা শুনেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি এবং জীবনকে ইতিবাচক করে উপস্থাপন করেছি।

কিন্তু আজ সুপ্রিয়া দাসের আত্মহত্যার ঘটনা নতুন করে পুরোনো একটি বিষয় শেখালো। কত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছিলো সম্ভাবনাময় এই মেয়েটির! সবার সাথে স্বাভাবিকই ছিল সে। গণিত বিষয়ে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্কলারশিপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। হ্যা! পূর্বের আরেকটি আত্মহত্যার ঘটনায় তাকে নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠরা চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু কেউ-ই কিছু বুঝতে পারেন নাই বা সে বুঝতে দেয় না। কয় মিনিট বা কয় সেকেন্ডে সে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো জানতে পারবো না আমরা কেউ। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো এবং তার বাস্তবায়নও করেছে যখন বাবা বাড়ি ছিলো না আর মা পাশের ঘরে টেলিভিশন দেখছিলেন। অর্থাৎ শান্তভাবে, পরিকল্পনা করে; ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নয়।

খুব ভালো করে বুঝেছি, একজন আত্মহত্যা করতে চাওয়া মানুষ এমন মানসিক স্থিতিতে থাকেন না যে অবস্থায় ফেসবুকে আমার ঐ ছোট বোনের মত সাজিয়ে একটা হতাশার স্টেটমেন্ট দেওয়া যায়- যাতে অনেক কান্নার ইমোজি আর কমেন্ট হয়। ফেসবুকে যারা তিন বেলা খাবার পরে ঔষধ গ্রহণের মত হতাশার বিবৃতি দেন, এরা আসলে তেমন কোনো হতাশায় নেই বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এনারা জাস্ট মজা করেন, না হলে প্রেমিক বা প্রেমিকার দৃষ্টি কাড়েন। শুনেছি, হতাশায় ডোবা ছেলেদের পাশে মেয়েরা নায়িকাদের মতন এসে দাড়ান। অতি চতুররা এই ফেসবুকিয় সুইসাইডকে অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করেন। আত্মহত্যা চিন্তাকে যারা এরকম খেলো করে ফেলছেন তারা নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন, এটা কোনো ফুটবল নয়। জীবিত মানুষের পৃথিবীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের নাম আত্মহত্যা। এরপর- গেইম ওভার!

আমরা এখন সবাই একবাক্যে বলবো সুপ্রিয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো। তপু’র সিদ্ধান্তও ভুল ছিলো। কিন্তু সত্যিকার অর্থে নিজেকে মেরে ফেলার মত সিদ্ধান্ত যিনি বা যারা নিয়ে থাকেন, নিজেদের কাছে নিশ্চই সেই সিদ্ধান্তকে তারা শতভাগ যৌক্তিক মনে করেন। আমার আপনার কাছে এই ধরনের চিন্তাকে যতই ভুল মনে হোক বা বোকা বোকা মনে মনে হোক, একজন আত্মঘাতী’র কাছে এই সিদ্ধান্তই সর্বোত্তম পথ। এরকমটা না হলে কেউ আত্মহত্যা করতে পারতেন না।

চিকিৎসা বিজ্ঞান আত্মহত্যাকে  সিজোফ্রেনিয়া, বাই-পোলার, মুড ডিজঅর্ডারের মত মানসিক সমস্যার সাথে জড়িত বলে মনে করেন। তবে সরলযুক্তিতে আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্তকে সব সময়  ভুল প্রমাণ করতে চাইবো, এমনকি আত্মহত্যার পরেও তার সিদ্ধান্তকে ভুলই বলবো! কিন্তু আফসোস, কোনো আত্মহত্যাকারী আমাকে ভুল প্রমাণ করতে ফিরে আসবেন না কখনো! আসলে আমি নির্ঘাত হেরে যেতাম। এটাই একজন সুপ্রিয়া দাস আর আমার পার্থক্য; আমাদের পার্থক্য! তবে যারা বেচে আছেন তাদের সাথে আমি এবং আমরা ডিবেট করে যাবো। সে উল্লেখিত ছোট বোনটির মত হলেও।

ভালো থেকো সুপ্রিয়া!

লেখকঃ

ছোটন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (অনুপ)

কবি ও কলামিস্ট

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২৫:০৯   ২৫৯৬ বার পঠিত   #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

শিক্ষাঙ্গন’র আরও খবর


মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
জানুয়ারি থেকে স্কুলে কোডিং, ডিজাইন ও অ্যানিমেশন শেখানো হবে :শিক্ষামন্ত্রী
এস এস সি পাশের হার কমছে বেড়েছে জিপিএ-৫
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস, —”পুরুষ ও ছেলেদের সাহায্য করো”
এ মাসেই হতে পারে এসএসসি’র ফল প্রকাশ
এইচএসসি বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা: ৫ শিক্ষক চিহ্নিত
প্রায় ৪ বছর ভারপ্রাপ্ত থেকে পূর্নাঙ্গ প্রক্টর হলেন জাবির আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান
কারিগরি বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা স্থগিত !
সারাদেশে ১২ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে রোববার

আর্কাইভ