ইনাম মাহমুদ রিমন,প্রতিবেদক,বঙ্গ-নিউজঃ
প্রতি বছরের মতো এবারও সেই দিনটি আমাদের কাছে সমাগত। মোবারক ঈদুল আজহা।
কোরবানির ঈদ। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালিত হয় ঈদ এবং কোরবানি। এর সঙ্গে যুক্ত আছে হজ। হজের প্রধান কার্যক্রম পালিত হয় মক্কা মোকাররমায় জিলহজ মাসের ৯ তারিখে।
এ হজ এবং কোরবানি প্রতি বছর আসে, যুগ যুগ ধরে আসছে, এর ইতিহাস অনেক পুরনো। হজ, কোরবানি এবং কোরবানির ঈদ মুসলমানদের উৎসব ও ইবাদত। তবে এসবের সূচনা উম্মতে মুহাম্মদির অনেক আগে। অনেক সুদূরপ্রসারী উত্তরাধিকার ও শিা বহন করে এই মহতি দিনটি আমাদের কাছে আসে।
সাধারণ অর্থে কোরবানি বলতে আমরা মনের পশুত্বকে দূর করা ও পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে প্রিয়তম বস্তুর উৎসর্গকেই বুঝি। কোরবানিকে ত্যাগও বলা হয়ে থাকে। মূলত কোরবানি শব্দটি উর্দু হলেও বাংলা ভাষায় এটি বহুল ব্যবহৃত। আরবি পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘নুসুক’ এবং ইংরেজিতে কোরবানি বলতে ‘সেক্রিফাইস’ বোঝায়।
কোরবানির উৎসর্গ বা ত্যাগ হতে পারে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। জান, মাল, স্বার্থ, ইচ্ছা-ইরাদা যেকোনো জিনিস কোরবানি বা উৎসর্গ করা যেতে পারে। তবে ইসলামি শরিয়তের ভাষায় কোরবানি ব্যাপকভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করা বুঝায়। ত্যাগ এবং তিতিক্ষা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং উচ্চমানসম্পন্ন ইবাদত।
কোরবানির শুরুর ইতিহাস: আল্লাহর খলিল হজরত ইব্রাহিম আঃ স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় ধৈর্যশীল পুত্র (হজরত ইসমাইল আঃ)-কে জবাই করছেন (সূরা সাফফাতের ১০২ নম্বর আয়াতে এ স্বপ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে)। হজরত ইব্রাহিম আঃ-এর এই স্বপ্ন প্রত্যক্ষভাবে আল্লাহর আদেশ না হলেও পরোক্ষভাবে এবং বাস্তবে তা ছিল আল্লাহপাকেরই হজরত ইব্রাহীম আঃ-এর প্রতি এক পরীক্ষামূলক নির্দেশ। সূরা আস্-সাফফাতের ১০৬ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এ ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা’।
অসীম ধৈর্যশীল পুত্র এবং আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পিত পিতা ইব্রাহিম আঃ আল্লাহ কর্তৃক প্রদর্শিত স্বপ্নের আদেশের প্রতি যখন সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করলেন এবং হজরত ইব্রাহিম পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়ে দিলেন তখনই মহান আল্লাহপাক তার মহা কুদরতি ক্ষমতা বলে ইব্রাহিম আঃ-এর উৎসর্গকে (কোরবানিকে) এক পশু কোরবানিতে রূপান্তরিত করে দিলেন। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে সূরা সাফ্ফাতের ১০৭-১০৮ নম্বর আয়াতদ্বয়ে এই রূপান্তরিত কোরবানিকে এইভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘আর আমরা একটি পশু জবাইয়ের বিনিময়ে তার পুত্রকে জবাই করা থেকে এক মহৎ কোরবানিতে পূর্ণ করলাম এবং এইভাবে পরবর্তী মানুষের জন্য পশু কোরবানির মাধ্যমে কোরবানির শিক্ষাকে প্রচলিত রাখলাম।’
কুরআনের এই আয়াতদ্বয় দ্বারা পশু কোরবানি মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব হয়ে রইল। (আরো বিস্তারিত সূরা হজে বর্ণিত আছে)। যেহেতু জীবন উৎসর্গ করে কোরবানি দেয়া অত্যন্ত দুরূহ কাজ, তাই আল্লাহ সোবহানতায়ালা পশু কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগের এই ইবাদতকে মানুষের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা আল-কাওসারেও আল্লাহপাক নবী করিম সাঃ-কে কোরবানির পরামর্শ দিয়েছেন।
কোরবানি কেন? আমরা অনেকেই কোরবানি দিয়ে থাকলে এর যথার্থ কারণ কিংবা কোরবানি কেন দেয়া হয় সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখি না। এই কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষের তাকওয়া, কর্তব্যপরায়ণতা, আনুগত্য এবং ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
সূরা হজের ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক উল্লেখ করেছেন ‘এই পশু কোরবানির রক্ত এবং গোশত কিছুই আমার কাছে উপনীত হয় না, শুধু উপনীত হয় তোমাদের অন্তরের তাকওয়া,সদিচ্ছা এবং আমার আদেশের প্রতি তোমাদের আনুগত্য’।
দুয়ারে কড়া নাড়ছে খুশির ঈদ। কোরবানির ঈদ। এই ঈদে দেশের প্রতিটি প্রান্তেই মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা পশু কোরবানি দেবেন। আপনার কোরবানি তখনই হালাল হবে যদি আপনি আত্মসমর্পণকারী হন। বাজার থেকে পশু কিনে এনে জবাই করলেই কোরবানি হয়ে যাবে না। আপনার, আমার মাঝে কোরবানিতে কতটুকু প্রাণপ্রিয়তা আছে, আল্লাহর ইচ্ছার কাছে কতটুকু আত্মত্যাগের অভিপ্রায় আছে সেটি প্রধান বিবেচ্য।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৪:৩৯ ৭৩৪ বার পঠিত #ঈদ #ঈদুল আজহা #কোরবানি #গুরুত্ব #মহত্ত্ব