আসসালামু আলাইকুম। আশা করি এই করোনা কালীন সময়েও আমরা আল্লাহ্ তায়া’লার রহমতে ভালোই আছি।
আজকে আমি যে ব্যাক্তির সম্পর্কে আপনাদের বলবো তিনি হলেন জনাব জীবন কৃষ্ণ সরকার। তিনি ছোটবেলা থেকেই হাওর ও হাওরের মানুষদের নিয়ে ভাবতেন।
অবশ্য তার পিছনে একটা বড় কারণ লুকায়িত।
আর কারণটি হলো উনার জন্মও যে এই হাওর বেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল ধর্মপাশা উপজেলার দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের বাট্টা গ্রামে।
নিজ গ্রামে হাতে কড়ি শেষ ও ধাপে ধাপে মাধ্যমিক,উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ( শাবিপ্রবি) গণিতের উপর স্নাতকোত্তর করে ছুটে যান হাওর বেষ্টিত অঞ্চল ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডায় উনার শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে।
যোগ দেন “লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে” গণিতের শিক্ষক হিসেবে।
আর আমি তখন সেই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।শুরুর দিকেই আমি কেমন যেন উনার ভক্ত হয়ে যাই। আর উনিও কেমন যেনো খুব আপন করে নেন।এক সময় উনি হয়ে উঠেন আমার একজন প্রিয় শিক্ষক ও প্রিয় ব্যাক্তি হিসেবে। আমি আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করলাম যে না উঁনি তো শুধু আমার একজন শিক্ষকেই নন বরং আমার একজন অভিভাবক। ফলস্বরূপ
আমি অষ্টম শ্রেণির পর থেকে এখন পর্যন্ত যেকোনো প্রয়োজনে উনাকে আমার পাশে পাই। যাই হোক,
মাধ্যমিক এ পড়ার সময় উনি প্রায়ই উনার স্বপ্নের খন্ড খন্ড অংশ আমার সাথে ভাগাভাগি করতেন।
এদের মধ্য দু একটি হলোঃ
১) হাওর নিয়ে সঠিক তথ্য সবার সামনে তুলে ধরা। যার ফলশ্রুতিতে উনি হাওর নিয়ে লেখা শুরু করেন।একসময় হয়ে যান “জীবন কৃষ্ণ সরকার” থেকে “হাওর কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার”। উনি হাওর নিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি কাব্যগ্রন্থ বের করেন।ও এখন পর্যন্ত লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন।
২) হাওরের সঠিক তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি উনি হাওরের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলার জন্য উনার প্রিয় কিছু বন্ধু ও আমাদের নিয়ে পরিকল্পনা করে গড়ে তুলেন ‘হাওর
সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা(হাসুস) বাংলাদেশ নামে হাওরভিত্তিক দেশের প্রথম সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠন ” ও একটি সাহিত্য পাঠাগার ” কেন্দ্রীয় হাওর সাহিত্য গণপাঠাগার, বংশীকুন্ডা”। যাই হোক,
শুরু থেকেই আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি এই সাহিত্য সংস্থা ও পাঠাগারের মাধ্যমে হাওরের প্রতিভা গুলো বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য।
ফলস্বরূপ আমরা আমাদের সাহিত্য সংস্থা টির হাওর বেষ্টিত জেলা গুলোতে জেলা শাখা করতে চাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা ” হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা(হাসুস) বাংলাদেশ,সুনামগঞ্জ জেলা শাখা করেছি আরও নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার ইত্যাদি জেলা শাখার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে পাঠাগারটির জন্য আমরা আমাদের ইউনিয়ন বংশীকুন্ডা একটি অস্থায়ী আবাসে পাঠাগারের সমস্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি তবে বর্তমানে আমরা পাঠাগারটির জন্য স্থায়ী নিবাস করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।যেকেউ চাইলে আমাদের এই উদ্যোগে সাহায্য, সহযোগিতা করতে পারেন। তবে আমরা নিয়মিত ভাবেই আমাদের পাঠাগারে নানা কিছুর আয়োজন করে থাকি যেগুলোর দ্বারা হাওরের সুপ্ত প্রতিভা গুলো বিকশিত হয়।
যেমনঃ
১) সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা। এখন পর্যন্ত প্রায় ১২০+ টি সাহিত্য আড্ডা আমরা করেছি। যেখানে আমরা গজল,গান,হাওর নিয়ে কবিতা আবৃত্তি, একক দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদি।
২) পাঠাগারে আছে প্রায় ৩০০০+ বই। যেগুলোর বেশিরভাগ বই সংগৃহীত হয়েছে জীবন কৃষ্ণ সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে। যার কারনে যে কেউ, যেকোনো সময় এসে পাঠাগারে বই পড়তে পারেন এবং নিয়ম মেনে বাড়িতেও নিয়ে যেতে পারেন।
দোয়া করবেন আমাদের জন্য ও নিম্নের ছবির মানুষটির জন্য যেনো উনি আজীবন হাওর ও হাওরের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে পারেন।
দোয়া করবেন আমার জন্য যেনো আমি আজীবন উঁনার মতো একজন ব্যক্তির সান্নিধ্যে থাকতে পারি।
ভূলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
ধন্যবাদ।
লেখক
আকিব মাহমুদ আকাশ
শিক্ষার্থী,সিলেট সরকারি কলেজ,সিলেট।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩৬:২৮ ৭০৩ বার পঠিত