সর্বক্ষেত্রেই সাহেদের প্রতারণা, নামও বদল করেছিল

Home Page » প্রথমপাতা » সর্বক্ষেত্রেই সাহেদের প্রতারণা, নামও বদল করেছিল
শুক্রবার, ১৭ জুলাই ২০২০



ফাইল ছবি-সায়েদ করিম

স্বপন চক্রবর্তী,বঙ্গ-নিউজ: সর্বক্ষেতেই ছিল সাহেদের প্রতারণা। নয়তো প্রতারণার উদ্দেশ্যে কোন কাজ করা। সাহেদ নির্বাচন কমিশনে তার নামও পরিবর্তন করেছিলেন। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এখন বলছেন, সাহেদের ওই শিক্ষাগত সনদের সত্যতা তারা খতিয়ে দেখবেন। রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান স্কুল শেষ করেননি বলে সোশাল মিডিয়ায় আলোচনা থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম সংশোধন করে ‘সাহেদ করিম’ থেকে ‘মোহাম্মদ সাহেদ’ হওয়ার সময় তিনি ‘ও’ লেভেলের সনদ দাখিল করেছিলেন নির্বাচন কমিশনের কাছে।

বিতর্কিত এই ব্যবসায়ীকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় বুধবার সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার দশ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার পর গত ৬ থেকে ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

র‌্যাবের ওই অভিযানের পর রিজেন্টের মালিক মোহাম্মদ সাহেদের নানা প্রতারণা ও জালিয়াতির খবর সংবাদমাধ্যমে আসতে শুরু করে।

জানা যায় এমএলএম ব্যবসায় লোক ঠকানো এই সাহেদের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম নাম নিয়ে প্রতারণা করা এই ব্যক্তির দুই নামে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার তথ্যও তখন প্রকাশ্য হয়।

সাতক্ষীরার ছেলে সাহেদ স্কুলের শেষ দিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় ঢাকায় চলে আসেন। সামাজিক মাধ্যমের আলোচনায় কেউ বলছেন সাহেদ এসএসসি পাস, আবার কেউ বলেছেন, তিনি স্কুলই শেষ করেননি। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য দেওয়া তথ্যে সাহেদ নিজেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী বলেছেন।

তাকে নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে, তখন এক ফেইসবুক পোস্টে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কথা তুলে ধরেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, যিনি একসময় নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এসএসএফের মহাপরিচালক ছিলেন।

তিনি ওই পোস্টে দাবি করেন, সাহেদের আসল নাম সাহেদ করিম, বাবার নাম সিরাজুল করিম, মা- মৃত সুফিয়া করিম। কিন্তু এখন তিনি যে এনআইডি ব্যবহার করছেন, সেখানে তার নাম মোহাম্মদ সাহেদ।

২০০৮ সালের ২৫ অগাস্ট সাহেদের নামে যে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়েছিল, তার নম্বর ছিল ২৬৯২৬১৮১৪৫৮৮৫। আর এখন তার নামে থাকা স্মার্ট এনআইডির নম্বর ৮৬৫০৪০৬১৮৭।

দৈনিক নতুন কাগজ নামের একটি পত্রিকা খুলে সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে তথ্য অধিদপ্তরের পিআইডি কার্ড নেওয়ার সময় তিনি ওই নম্বরই ব্যবহার করেছেন।

নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইংয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাহেদ গতবছর তার এনআইডি সংশোধন করার সময় জন্মনিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদ, পাসপোর্টের কপি এবং ‘ও’ লেভেলের সার্টিফিকেট জমা দেন। এনআইডির তথ্য সংশোধনে তার নাম সাহেদ করিম থেকে মোহাম্মদ সাহেদ হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, “ওই ব্যক্তি সাহেদ। আমারা এনআইডি যাচাই করেছি। আঙ্গুলের ছাপ ও বায়োমেট্রিক তথ্য মেলানো হয়েছে। তথ্য সংশোধনে প্রয়োজনীয় দালিলিক কাগজপত্র সঠিকভাবে দিলেই এনআইডি উইং তা করে।”

এক প্রশ্নের জবাবে সাইদুল ইসলাম বলেন, সাহেদের দেওয়া জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদ ও পাসপোর্ট তারা যাচাই করে দেখেছেন, সেগুলো ‘আসল’।

কিন্তু যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল সার্টিফিকেশনের দেওয়া ওই ‘ও’ লেভেলের সনদ এনআইডি উইং যাচাই করতে পারেনি, কারণ অনলাইনে সনদ যাচাইয়ের জন্য তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি নেই নির্বাচন কমিশনের।

এনআইডি উইংয়ের অফিসার ইনচার্জ (কমিউনিকেশনস) স্কোয়াড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান বলেন, “মোহাম্মদ সাহেদ এনআইডিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক দিয়েছেন। কিন্তু পরিচয়পত্রের জন্য সব সময় এসএসসি ও সমমানের সনদ দেখাতে হয়।

“উনি এখানে কেমব্রিজের ও লেভেল সার্টিফিকেট দিয়েছেন। সেটা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করে সঠিক পাওয়ায় এনআইডির তথ্য সংশোধন করা হয়েছে।”

সাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণার যেসব তথ্য এখন আসছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তথ্য গোপন করে কিংবা মিথ্য তথ্য দিয়ে দিয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির (সাহেদ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জাতীয় পরিচয়ন নিবন্ধন আইনের ১৪ ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্য বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করলে তা এ আইনের অধীনে অপরাধ বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে অনুর্ধ্ব ১ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলেন, “আমরা কোনো ধরনের ছাড় দেব না। সঠিক ব্যক্তি হওয়ার পরও যদি তথ্য গোপন করে থাকে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারব। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩২:৩৮   ১০৪৫ বার পঠিত   #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রথমপাতা’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ