রোগীরা প্রতারণার প্রতিবাদ করলে হুমকি দিতেন সাহেদ
Home Page » এক্সক্লুসিভ » রোগীরা প্রতারণার প্রতিবাদ করলে হুমকি দিতেন সাহেদস্বপন চক্রবর্তী,বঙ্গ-নিউজ, র্যাব-১ এর পরিদর্শক জুলহাস মিয়া বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন। মামলায় বলা হয়, কোনো রোগী প্রতারণার কথা বুঝতে পেরে প্রতিবাদ করলে হুমকি দিতেন মোহাম্মদ সাহেদ। বিনামূল্যে চিকিৎসার নিয়ম থাকলেও প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা করে নেওয়া হত। রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা এই মামলায় বলা হয়, প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তির কোভিড-১৯ পরীক্ষার নামে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আয় করলেও বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা বলে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার একটি বিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করা ঢাকার বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে র্যাব, যাতে অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
“এই হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ নিজেকে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে সে একজন ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু ও পাষণ্ড।”
সোম ও মঙ্গলবার টানা দুই দিনের অভিযানের পর মঙ্গলবার রাতে এই মামলার দায়ের করা হয় বলে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান।
দণ্ডবিধির ৪০৬/ ৪১৭/৪৬৫/৪৬৮/৪৭১ ও ২৬৯ ধারা উল্লেখ করে মামলার এজাহারে বলা হয়, কোভিড-১৯ রোগীদের টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে প্রতারণা, বিশ্বাস ভঙ্গ জাল-জালিয়াতি, ভুয়া রিপোর্ট তৈরি, ভূয়া রিপোর্টকে খাঁটি বলে চালিয়ে দেওয়া এবং কোভিড-১৯ রোগ সংক্রমণের বিস্তারে ভূমিকা রাখার অপরাধ করেছে আসামিরা।
এ মামলায় যে সব ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার সর্বোচ্চ শাস্তির ধারা হচ্ছে দণ্ডবিধির ৪৬৮। প্রতারণা করার উদ্দেশে জালিয়াতির এ ধারায় সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং সেই সঙ্গে জরিমানাও হতে পারে। এ ধারায় শুধু অর্থদণ্ডের কথা উল্লেখ নেই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শারীরিক সাজা খাটতেই হবে।
অন্য ধারাগুলোর শাস্তি এর থেকে অনেক কম। সেখানে শারীরিক শাস্তির আদেশ বাধ্যতামূলক নয়।
এর মধ্যে ৪০৬ নম্বর ধারায় বিশ্বাসভঙ্গের সাজা হচ্ছে তিন বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম অথবা বিনাশ্রম কারাদণ্ড, সেই সঙ্গে জরিমানাও অথবা শুধু অর্থদণ্ড হতে পারে।
৪১৭ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা শুধু জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। এ ধারায় শুধু অর্থদণ্ডও হতে পারে।
৪৬৫ এর অভিযোগ শুধু জালিয়াতির। সাজা হচ্ছে, দুই বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম-বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড অথবা শুধু অথর্দণ্ড হতে পারে।
ভুক্তভোগীদের একজন মাহারুজ্জামান জানান, “আমার পরিবারের আটজনের কোভিড-১৯ পরীক্ষার পর প্রতিবেদন জিমেইলে পাঠানো হয়। নিপসমের (জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান) ওয়েবসাইটে না পাওয়ায় এবং জিমেইলের মাধ্যমে আসায় প্রতিবেদনগুলো নিয়ে সন্দেহ হয়। পরে আবারও পরীক্ষা করানোর পর নিপসমের ওয়েবসাইটে ফল পেয়ে সন্দেহ দূর হয়।” তার এক সহকর্মীর পরিবারের সদস্যরাও একই সমস্যায় পড়েছিলেন বলে জানান মাহারুজ্জামান।
ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, মামলার ১৭ আসামির মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাহেদসহ বাকি নয়জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
র্যাবের দুই দিনের অভিযানে সরাসরি অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনুসন্ধানে সাহেদের বিরুদ্ধে তিন ডজন মামলা থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছেন তারা। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশই প্রতারণার মামলা।
তিনি বলেন, সাহেদের প্রকৃত নাম সাহেদ করিম। নিজেকে কখনও কখনও ইফতেখার বলেও পরিচয় দিতেন তিনি।
“উত্তরা, ধানমন্ডিসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় এবং ঢাকার বাইরে বরিশালসহ অন্য জেলার বিভিন্ন থানার পাশপাশি ঢাকার আদালতেও তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। সাহেদ এক সময় এমএলএম ব্যবসা করতেন, সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। এ ব্যাপারেও তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
“ধুরন্ধর হিসাবে তিনি সব সময় ক্ষমতাসীন দলের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। এসব নেতাদের টাকা দিয়ে নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করার চেষ্টা তার সব সময় ছিল।”
বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক শো গুলিতে প্রায়সই বক্তব্য দিতে দেখা যেতো মোঃ সাহেদকে। তার মধ্যে এস এ টিভি চ্যানেল অন্যতম।
বিভিন্ন ব্যাংকে সাহেদের কী পরিমাণ টাকা ও সম্পদ রয়েছে, সে বিষয়েও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বলে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
র্যাবের মামলায় বলা হয়, মোহাম্মদ সাহেদ যে গাড়ি ব্যবহার করতেন তাতে কোভিড-১৯ জরুরি সেবা লিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তার স্বাক্ষর করা স্টিকার লাগানো থাকত।
সাহেদের পাশাপাশি পালিয়ে থাকা তার এপিএস পলাশ (২৮), মাসুদ পারভেজ (৪০), তরিকুল ইসলাম (৩৩), আব্দুর রশিদ খান জুয়েল (২৯), শিমুল পারভেজ (২৫), দীপায়ন বসু (৩২), মাহবুব (৩৩) ও সৈকতকে (৩৯) মামলায় আসামি করা হয়েছে। আর মঙ্গলবারের অভিযানে আটক আহসান হাবীব (৪৫), আহসান হাবীব হাসান (৩৯), হাদিম আলী (২৫), কামরুল ইসলাম (১৭), রাকিবুল ইসলাম সুমন (৩৯), অমিত বনিক (৩৩), আব্দুস সালাম (২৫) ও আব্দুর রদি খান জুয়েলকেও (২৮) আসামি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতাল থেকে এবং অপর চারজনকে প্রধান অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে মামলায় বলা হয়, এই আসামিদের মধ্যে কেউ আইটি বিশেষজ্ঞ, কেউ প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
মামলায় উদ্ধার করা আলামতের মধ্যে রয়েছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ১০ জন রোগীকে নিপসমের নাম করে দেওয়া ১০টি করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রতিবেদন, যেখানে ল্যাব টেকনোলজিস্ট ও অথরাইজড পারসোনালের স্বাক্ষর স্ক্যান করা। সেখানে রোগীর নাম, আইডি ও ফোন নম্বরও উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া নয়টি কম্পিউটার, চারটি ল্যাপটপ, নয়টি চেকবই, দুটি ওয়াকিটকি, একটি প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়েছে।
র্যাবের মহাপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন আজ বিকালে বলেন, মোহাম্মদ সাহেদকে গ্রেপ্তারের জন্য মাঠে নেমেছে র্যাব।
সাহেদের বিরুদ্ধে আগের আর কী কী অভিযোগ আছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর পাশাপাশি তিনি যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন সে বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে বলে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান সারোয়ার বিন কাশেম জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তার রিজেন্ট হাসপাতালের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে কামরুল ইসলাম ছাড়া বাকি সাতজনকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কামরুলকে গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার দুপুরে ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী এ আদেশ দেন।
এর আগে উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক আলমগীর গাজী আট আসামিকে আদালতে হাজির করেন। সাত আসামির সাত দিন করে রিমান্ড এবং কামরুল ইসলামকে কিশোর সংশোধনাগার কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করেন তিনি।
এ সময় আসামিদের পক্ষে রিমান্ড আবেদন বাতিল এবং জামিন আবেদন করেন শহীদুল ইসলামসহ কয়েকজন আইনজীবী। এই আইনজীবীরা যুক্তি দেন, গ্রেপ্তাররা সবাই কর্মচারী, হাসপাতালের নিয়ম-অনিয়মের সঙ্গে তাদের ‘কোনো সম্পর্ক নাই’। মূল অভিযুক্তরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের জিজ্ঞাসাবাদে ‘কোনো লাভ নাই’। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে রিমান্ডে নেওয়া হলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
রাষ্ট্রপক্ষে আদালত পুলিশের সংশ্লিষ্ট সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল উদ্দিন অসুস্থ থাকায় তার জায়গায় অন্য কর্মকর্তা এসআই শেখ রাকিবুর রহমান তাদের আবেদনের বিরোধিতা করেন।
পরে বিচারক সাতজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:২৭:১৭ ১৩৭৮ বার পঠিত #করোনা #ভূয়া পরিচয় #ভূয়া রিপোর্ট #রিজেন্ট হাসপাতাল #রিমান্ড
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)এক্সক্লুসিভ’র আরও খবর
এস এস সি পাশের হার কমছে বেড়েছে জিপিএ-৫
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে সানি লিওনের ছবি!
শক্তিশালী প্রসেসরে নতুন স্মার্টফোন বাজারে আনছে মটোরোলা
ভারত ৩৬টি স্যাটেলাইট স্থাপন করল একসঙ্গে !!
স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস, পরে কথিত স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে পদযাত্রা
রাশিয়ার নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সাবমেরিন!
টিকিট দুর্নীতির প্রতিবাদে রনি, সহজ ডটকমকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
ট্রাকচাপায় মেয়েসহ তারা তিনজন নিহত; রাস্তায় গর্ভস্থ শিশু ভুমিষ্ঠ
রোহিঙ্গা যুবক নুর বারেক আটক ,২০ লাখ টাকা উদ্ধার
-
সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত ওসমানীনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২ -
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]