বঙ্গ-নিউজ:আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, “ভ্যাট জটিলতার সমাধান না হলে সীমিত আকারে সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছি।” মহামারীকালে যখন ভার্চুয়াল যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেটে মানুষের নির্ভরতা অনেক বেড়েছে, তখন ব্রডব্যান্ড সেবাদাতারা শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই হুমকি দিল। ইন্টারনেট খাতে ভ্যাট জটিলতার সমাধান না হলে সারাদেশে কিছু সময়ের জন্য ইন্টারনেট বন্ধের হুমকি দিয়েছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি।
তবে কবে তা হবে নির্দিষ্ট করে না জানিয়ে তিনি বলেন, “সুবিধামতো সময়ে দুই থেকে এক ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ রাখব। কবে কখন এই কর্মসূচি নেওয়া হবে তা সংগঠনের নেতাদের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।” জুলাই মাসের মধ্যে দাবি না মানা হলে এ ধরনের কর্মসূচিতে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আমিনুল বলেন, দাবি মানা না হলে ইন্টারনেট বন্ধের এ কর্মসূচি ধাপে ধাপে অর্থাৎ প্রতিমাসে বা সপ্তাহে সপ্তাহে চলমান থাকবে।
বর্তমানে করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে ইন্টারনেট কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ব্রডব্যান্ডের পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেটও ব্যবহার হচ্ছে।
আমিনুল জানান, বর্তমানে সারা দেশে ৮০ লাখের বেশি বাড়িতে তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন প্রায় সাড়ে ৩ কোটি গ্রাহক।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও বিল আদায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেলেও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।
ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) খাতে ১৫% আরোপিত ভ্যাট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সৃষ্টি হওয়া জটিলতার কারণে চলমান ইন্টারনেট সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে আইএসপিএবি মনে করছে।
আমিনুল বলেন, “৫ শতাংশ ভ্যাট ইন্টারনেট গ্রাহক থেকে আদায় করে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো আর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ভ্যালু চেইনের অন্যান্য খাত আইএসপিগুলো থেকে আদায় করে থাকে।
“এর ফলে ৫ শতাংশ ভ্যাট গ্রাহক থেকে আদায় করা হলেও আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএনকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হচ্ছে। সবমিলে প্রায় ৩৫ শতাংশ ভ্যাট বাবদ খরচ দিতে হচ্ছে আইএসপিগুলোকে।”
তিনি জানান, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য খাতে ১৫% ভ্যাট নির্ধারিত হওয়ায় ইন্টারনেট সেবা খাতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। পরে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ইন্টারনেটের প্রতিটি স্তরে (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) ৫% ভ্যাট আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর।
“কিন্তু এর কয়েক মাসের ব্যবধানে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে পুনরায় ইন্টারনেট সেবায় ৫% ভ্যাট এবং অন্যান্য স্তরে ১৫% ভ্যাট আরোপ করায় বিষয়টিতে আবারও আগের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য ৩০% থেকে ৪০% বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য খাতে ১৫% ভ্যাট আরোপকে ‘বৈষম্যমূলক’ এবং মূসক আইনের ‘পরিপন্থি’ বলেও মনে করছে আইএসপিএবি।
ইন্টারনেটে ভ্যাট আরোপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইএসপিএবির প্রস্তাব তুলে ধরে আমিনুল বলেন,“ইন্টারনেটের সকল ক্ষেত্রে ৫% অথবা ০% হারে ভ্যাট আরোপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে (ইন্টারনেট সেবায় ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য ১৫% ভ্যাট) জটিলতা নিরসন হবে।
“প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য ৩০% থেকে ৪০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও দূর হবে। এর ফলে সর্বস্তরের ইন্টারনেট গ্রাহক ও দেশের জনসাধারণ অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আসতে পারবেন।”
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও দেশের সকল শ্রেণির জনগণের কথা বিবেচনা করে ইন্টারনেটে ভ্যাট জটিলতা নিরসন করে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ইন্টারনেটে ভ্যাট আরোপের পরিবর্তিত কাঠামোটি অর্ন্তভুক্ত করার অনুরোধ জানায় আইএসপিএবি।
আমিনুল হাকিম বলেন, “আইএলডিসি (ইন্টারন্যাশনাল লং ডিসটেন্স কেবল),আইআইজি এবং আইএসপি একসঙ্গে নির্ভরযোগ্য উচ্চ গতির ইন্টারনেট এক্সেস সরবরাহ করে যা অনেক সংস্থাকে আইটি এনাবেলড সার্ভিসেস ( আইটিইএস) এ সফলতা অর্জন করতে সক্ষম করে তোলে। “যৌক্তিক কারণেই আইএলডিসি, আইআইজি ও আইএসপিকে আইটিএস ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।”
প্রতি ১ হাজার ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ১০ জন কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান হয় দাবি করে আমিনুল বলেন, ভ্যাট জটিলতা সমাধান হলে আগামী ১ বছরে প্রায় ১২ হাজার কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:২৫:০৯ ৪৫৫ বার পঠিত # #আইএসপিএবি #ব্র্রডব্যাান্ড #ভ্যাট জটিলতা #হুমকি