প্রিয়তমার স্বপ্নদর্শন-মোন্নাফ হোসেন নিরব
Home Page » সাহিত্য » প্রিয়তমার স্বপ্নদর্শন-মোন্নাফ হোসেন নিরব
তারিখটা এখনো মনে আছে। ২৫ নভেম্বর ২০১৯ । আমি তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ। কিন্তু ভাইভা স্থগিত করা হয়েছে। সেই ছুটিতে আমার এই স্বপ্ন দেখা।
পরীক্ষা শেষ করে বাড়িতে গেছি।
গিয়ে দেখি আমার বিয়ে দিয়ে দিছে।আমার অনুপস্থিতিতে বিয়ে!!! কেমনে কি,,!!??
আমার অনুপস্থিতিতে আমার বিয়ে দিয়ে দিছে তাই মনটা খারাপ। কিন্তু মা বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই কিছু না বলেই বাকি দিনটা কাটিয়ে রাতে ঘুমাতে গেলাম।
হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেল। অনুভব করে বুঝলাম কেউ তার নরম হাতের কোমল ছোঁয়ায় আমাকে জাগাতে স্পর্শ করে জাগাতে চাচ্ছে। ভালো করে দেখলাম আমার পাশে কেউ একজন শুয়ে আছে।ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে, দেখতে খুব অসহায় লাগছে, একেবারে অপরিচিত তাই কিছু করলাম না, কিছু বললামও না।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে আমার দেরি, ভাবতে লাগলাম যেখানে ফজরের নামাজের সময় না উঠলে বড় ভাইয়ের দরজার ধাক্কা দিতো। মেজো ভাই জানালা দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিত। পাশের রুম থেকে মা আমার মোবাইলে কল দিত।
অথচ আজ তারা কেউ ডাকলো না কেন ?
এসব ভাবতে ভাবতেই সে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে কিছু বলবে বলবে ভাব কিন্তু কিছুই বলছে না। তাই সুযোগ দিয়ে বললাম। কিছু বলবেন ?
সে বললো মা আপনাকে খেতে ডাকছে।
মেজাজটা যেন গরম হয়ে গেল।
নিজেকে প্রশ্ন করলাম মা কেন আজ আমাকে ডাকছে না?
অথচ মায়ের ডাক না শোনা পর্যন্ত আমি উঠতাম না।
এমনকি মায়ের ডাক বারবার শোনার জন্য ইচ্ছা করেই মাঝে মাঝে উঠেও কোন সাড়া দিতাম না।
যাই হোক, বিছানা থেকে উঠলাম, ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম । এরপর আগের মতই বাড়িতে যাওয়ার পরের দিন পুরো গ্রামটা ঘুরতে বের হলাম। এভাবে আমার বিয়ে হলো তাই অনেকেই অনেক কথা বললো। কয়েকজন ভাবী দাদিকে দেখলাম আমাকে নিয়ে গল্প করছে।
একজন বলছে মেয়েটা কালো। আরেকজন বলছে এগুলোকে কালো বলে না, সেমলা।
মেয়েটা অনেক ভাগ্যবতী। হ্যাঁ এটাই হয়তো শুনতে চেয়েছিলাম। আমি চাই আমার বউ আমাকে নিয়ে গর্ব করবে। যখন দুজনে একসাথে পথ চলবো সবাই দেখবে আর বলবে,দেখো মেয়েটা কত সুন্দর একটি বর পেয়েছে।
গ্রামটা দেখে বাড়িতে এসে দুপুরে খাবার পরে বিশ্রাম নিতে খাটে শুয়ে আছি।এমন সময় সে এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো।আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম। দুজন দুদিকে মুখ করে আছি। এমন সময় আমার ভাতিজার কান্না শুনে উঠতে চাইলাম। ভাতিজার সাথে একটু খেলবো। কিন্তু কিভাবে খাট থেকে নামবো?? সে তো আউট সাইডে শুয়ে আছে তার শরীরের উপর দিয়ে কিভাবে পার হই। আমার নড়াচড়া করতে দেখে সে উঠে বসল। আর আমিও খাট থেকে নেমে ভাতিজাকে নিয়ে খেলা শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর চাচা ভাতিজা মিলে বাজারে গেলাম।
বাজারে থেকে এসে,খাওয়া দাওয়া করে রুমে মোবাইল টিপছি।বাবা তখনো বাজার থেকে আসেনি।একটু পর বাবা আসলো। সাইকেলের বেল শুনে ভাগ্নে ভাগ্নি ভাতিজা সবাই রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাই এসেছে এখনো যায়নি।বাবা তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছেন। এরপর বাবা যখন খেতে বসেছে, আমি তখন পাশের রুমে অপেক্ষা করছি। বাবা আমাকে তার সাথে খেতে ডাকবে বলে। কেননা এটা নিত্যদিনের ঘটনা। বাবা যত রাতেই খেতে বসুক না কেন আমাকে ডাকবেই।আর আমিও না উঠে পারতাম না। বাবার হাতে না খেলে যেন ঘুমই আসতো না। পাশে থেকে শুনতে পেলাম বাবা আমার মা’কে বলছে, ছোট বউ কি খেয়েছে?
মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাবা আমাকে ভুলে গেল!!
বড় বোন কে জিজ্ঞেস করলাম এই মেয়ের বাড়ি কোথায়? একে বাড়ি থেকে বের করতে হবে। নয়তো বাবা মায়ের ভালোবাসা আমার হাতছাড়া হয়ে যাবে।
ও আর একটা কথা, বিকেলে দু’জন আমাকে ফোন করেছে। একজন তার মেয়েকে আর একজন তার নাতনিকে আমার জন্য উপযুক্ত মনে করে। আমার বউ নাকি দেখতে ভালো না, কালো, আমার সাথে মানায় না, ইত্যাদি ইত্যাদি।আর আমি যেন তাকে গ্রহণ না করি।
যাই হোক,রুমে এসে শুয়ে শুয়ে তাদের এ কথাগুলো আর বাবার খাইতে না ডাকা এসব ভাবছি আর মোবাইল টিপছি এমন সময় ডিপার্টমেন্টের নোটিস গ্রুপে নোটিশ আসলো আমাদের ভাইভা ২৮ তারিখ। আর মাত্র দু’দিন পর। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন সকালে রাজশাহী আসবো সব প্রস্তুতি শেষ। রুম থেকে বের হবার সময় ভাঙ্গা কন্ঠে বললো আপনার জন্য অপেক্ষা করার যোগ্যতা আর অধিকার হয়তো আমার নাই। তবুও অপেক্ষায় থাকলাম। এরপর যখন গেট থেকে বের হবো তখন তাকিয়ে দেখি আমার মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সেও চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে।২৭ তারিখ রাজশাহীতে আসলাম।২৮ তারিখ ভাইভা দিলাম। পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে বন্ধুদের সাথে ছবি তুললাম। এরপর বিকেলে ক্যাম্পাসে সাইকেল নিয়ে ঘুরছি আর ভাবছি। এখন তো দীর্ঘদিনের ছুটি। কি করবো বুঝতে পারছি না। আমার কি বাড়িতে যাওয়া উচিত!!
*ক্যাম্পাসে কতশত সুন্দরী মেয়েই তো দেখি, আর বাড়িতে কি তাকে দেখতে যাব?
*আমি যদি তাকে ছেড়ে দেই তাহলে কী তার বিয়ে হবে না? অবশ্যই হবে।
*তাকে ছেড়ে দিলে হয়তো কিছু করতে পারবে না। কিন্তু কষ্ট তো ঠিকই পাবে।আর তাকে কষ্ট দেয়া কি ঠিক হবে আমার ?
*সে বাড়ি ফিরে গেলে তার মা-বাবাও তো কষ্ট পাবে। আমি তো চাইনা কোন মা-বাবা তার সন্তানের জন্য কষ্ট পাবে।
*এমনো নয় যে আমার মা-বাবা কষ্ট পাবে না। আর তারা আমার ভালোর জন্যই তো করেছেন। তাদের কষ্ট দিয়ে তো নিজেকে অবাধ্য সন্তান বলে পরিচয় দিতে পারিনা।
*এরপর যখন আমি বিয়ে করতে যাব সবাই তো বলবে এর আগে আমার একটা বিয়ে হয়েছে কিন্তু টিকে নাই। আর কোন মা-বাবাই হয়তো চাইবে না যে তার কুমারী মেয়ে কে পূর্বে বিয়ে হয়েছে এমন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে।
*এরপর তার থেকে যে ভালো মেয়ে পবো তারও তো কোন গ্যারান্টিও নাই।
*আমি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে কি সবাইকে কষ্ট দেয়াটাই শিক্ষা নিলাম।
*আর আমার যে প্রেম করার খুব ইচ্ছে ছিল সেটার কি হবে!!!
এমন সময় হঠাৎ করে বন্ধু লিখন আমার মতিহার হলের গেট থেকে ডাক দিল। কিরে কোথায় যাবি ?
লিখন আমার জেলার বন্ধু। হলে আমার পাশের রুমেই থাকে। ওর ডাক শুনে লক্ষ্য করে দেখলাম সাইকেল চালাতে চালাতে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে আবার হলের সামনে এসে গেছি। তখন সন্ধ্যা, রুমে আসলাম। রাতে একা একা ভাবছি কি করবো? এখন আর কি করা উচিত ?
এমন সময় মাথায় বুদ্ধি চলে এলো,,,
আমি তো তাকে চিনি না, জানি না, আর আমারো তো প্রেম করার খুব ইচ্ছা। এই ইচ্ছাটা না হয় হালাল ভাবেই পূর্ণ হোক। এখন আমি যদি তাকে মেনে নেই তাহলে কেউ কষ্টও পাবে না। আমার ইচ্ছা গুলোও পূর্ণ হবে।সবাই তো বিয়ের আগে প্রেম করে আমি না হয় বিয়ের পরে করলাম। আর সবার থেকে ভিন্ন হওয়ার এটাও তো একটা সুযোগ।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলাম। সন্ধ্যায় বাড়ি পৌঁছে মা আর তাকে একসাথে দেখতে পেলাম। মায়ের মুখে হাসি আর তার চোখে পানি। আমি তার চোখের দিকে তাকালাম দেখলাম প্রতি ফোঁটা অশ্রু যেন আমার জন্য তার ভালোবাসা। এর পর চোখে চোখে শুভদৃষ্টি হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলাম এইতো প্রেমের শুরু।
এরপর ঘুমানোর আগ পর্যন্ত কিভাবে কাটলো জানি না। শুয়ে আছি এমন সময় আমায় ডেকে বললো আপনি তো এশার নামাজ পড়েন নি।
এখন উঠে কি নামাজ পড়ে শুবেন,,? নাকি বড় ভাইয়া কে ডাকবো? উপায় না পেয়ে নামাজ পড়ে শুয়ে পড়লাম।সে আমাকে ভাইয়ার ভয় দেখায়। ইতোমধ্যেই সে জেনে গেছে ভাইয়া আমার শিক্ষক। আর আমি তো এমন একজনকেই বউ হিসাবে চাইবো , আমার উপর যার কোন কর্তৃত্ব থাকবে না।
একটু পর সেও শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময় তাকে ডেকে পারিবারিক কিছু রুল এন্ড রেজুলেশন শিক্ষা দিলাম। আর এই শর্তে রাজী হলাম যে, আজ রাতে কেউ কাউকে স্পর্শ করবে না।আর তাহাজ্জুদের সময় আমাকে ডেকে দিতে হবে। যদি সে এটা পারে, তাহলে ভোর হওয়ার আগেই আমি তাকে প্রপোজ করবো।
এরপর দুজনে ঘুমিয়ে গেলাম। মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম রুমটা যেন মৃদু আলোতে অন্য রকম লাগছে। বড় লাইট তো বন্ধ। মাথার উপর তাকিয়ে দেখি ডিম লাইটাও জ্বলছে না। আমার পাশেও সে নেই। ভাবলাম হয়তো প্রয়োজনে বাইরে গেছে।দোয়া দরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে ভয় নিয়ে আলোর উৎস খুঁজতে গিয়ে যেই না দরজার দিকে নজর দিলাম। দেখি সে দাঁড়িয়ে অপলোক আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমার এমন পরিস্থিতিতে তার ঠোঁটের কোণায় হাসি। মনে খুব ক্ষোভ নিয়ে দেখলাম এটা কোন উপহাসের হাসি নয়। তার মুখটা যেন পূর্ণিমা চাঁদকেও হার মানায়। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম।
এমন এক নারী হৃদয় দিয়ে অনুভব করলাম, তার সাথে আমার জন্মজন্মান্তরের সম্পর্ক রয়েছে। এই নারীকেই মনে হয় এতদিন ধরে খুজছিলাম। মনে হচ্ছে আমার মনটা তার মনের সাথে কথা বলছে। আজ আমার অন্য কিছু দেখার মতো শক্তি নেই বন্ধু। ওই অপূর্ব স্বর্গীয় নারীর জোতি, আমার দৃষ্টিকে অন্ধ করে দিয়েছে।
সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। আর এক মূহুর্ত দেরী নয়, এক্ষুনি গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরবো। প্রপোজ করবো। কিন্ত,,, যখনই খাট থেকে নামবো ঠিক তখনই প্রকৃত ঘুমটা ভেঙ্গে গেল এক সুমহান বাণীতে। হলের মসজিদের মাইক থেকে আওয়াজ এলো,
আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম।
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)সাহিত্য’র আরও খবর
সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’
-
সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত ওসমানীনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২ -
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]