বঙ্গনিউজ ডটকমঃছাত্রদলের নবগঠিত মহানগর কমিটি বাতিলের দাবিতে গতকাল বুধবার চট্টগ্রামে দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা। এ সময় তাঁরা দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। এ ঘটনায় পুলিশ সাতজনকে আটক করেছে। নতুন কমিটিতে বিবাহিত ও অছাত্রদের রাখা হয়েছে অভিযোগ এনে পদবঞ্চিতদের একটি অংশ কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছিল। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্রদলের ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী চট্টগ্রামে নাসিমন ভবনের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে তাঁরা মিছিল নিয়ে কার্যালয়ে ঢোকেন। এ সময় দুটি ককটেল ফাটিয়ে দলীয় কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রদলের কর্মী মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘দুপুরে ক্ষুব্ধ যুবকেরা ঘোষিত মহানগর কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। এ সময় কয়েকজন যুবক ভেতর থেকে চেয়ার-টেবিল বের করে এনে আগুন ধরিয়ে দেন। দেয়ালে সাঁটানো পোস্টারও ছিঁড়ে ফেলেন। পরে পুলিশ এলে সবাই দ্রুত ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান।’
গত রোববার রাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কমিটির নয়জনই বিবাহিত ও সন্তানের জনক। কমিটিতে নিয়মিত ছাত্র আছেন মাত্র একজন।
জানা গেছে, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম রাশেদ ও যুগ্ম সম্পাদক জালালউদ্দিন ছাড়া নবগঠিত কমিটির বাকি সবাই বিবাহিত। তাঁদের মধ্যে মাঈনউদ্দিন দুই সন্তানের এবং বাকি আটজন একজন করে সন্তানের জনক। এইচ এম রাশেদই কেবল নিয়মিত ছাত্র। সংগঠনের বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা এ কমিটিকে ‘বাবা দলের কমিটি’ আখ্যায়িত করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন।
ছাত্রদলের নতুন কমিটির সভাপতি গাজী মোহাম্মদ সিরাজউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির কার্যালয়ে আগুন লাগানোর ঘটনার জন্য দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সরকারের এজেন্টরা দায়ী। ওরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ভাঙচুর করেছে।’অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ছাত্রদলের কর্মী আবু তাহের বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ভাঙচুর করা হয়নি। জিয়ার সৈনিকেরা এসব করতে পারে না। তবে ক্ষুব্ধ ছাত্ররা কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবিতে কিছু চেয়ার-টেবিলে আগুন দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল একপেশে একটি কমিটি চাপিয়ে দিয়েছে, যাদের আট-নয়জনই বিবাহিত ও সন্তানের জনক।’ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া অবশ্য দাবি করেন, যোগ্যতা, দক্ষতা এবং সংগঠনের পক্ষে দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের অভিজ্ঞতা দেখেই কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার অভিযোগ করেন, ‘বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন তাঁর পছন্দের লোকদের নিয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। এতে নগর বিএনপির সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের পরামর্শ নেওয়া হয়নি। নতুন কমিটিতে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অনুসারীরাও বাদ পড়েছেন।’ শাহাদাৎ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন জানান, কমিটিতে স্থান না পাওয়া ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন। এ ঘটনায় সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
আমাদের ঢাকার নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কমিটিরও বিরোধিতা করে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংগঠনের একটি অংশ এ বিক্ষোভ করে। এ সময় তাদের সঙ্গে ছাত্রদলের আরেকটি অংশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ এগিয়ে গেলে বিক্ষোভকারীরা দুটি ককটেল ফাটিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম মেহেদী হাসান জানান, পুলিশের তৎপরতার কারণে বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর করতে পারেনি।
পবায় এইক স্থানে ইফতার নিয়ে উত্তেজনা
আমাদের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, পবা উপজেলার বড়গাছিতে গতকাল একই স্থানে বিএনপির দুই পক্ষের ইফতার আয়োজন নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে বড়গাছি হাটে ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মাত্র ৫০ গজ দূরে ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ের সামনে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে আরেকটি ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের ওই স্থান ছেড়ে দিতে বলে।
পবা থানার ওসি আকবর আলী বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৪:৪৯:২৩ ৩৯১ বার পঠিত