গুলশান হলি আর্টিজান হামলা: ৭ জঙ্গির ‘ডেথ রেফারেন্স’ বিজি প্রেসে

Home Page » জাতীয় » গুলশান হলি আর্টিজান হামলা: ৭ জঙ্গির ‘ডেথ রেফারেন্স’ বিজি প্রেসে
বুধবার, ১ জুলাই ২০২০



ফাইল ছবি   স্বপন চক্রবর্তী,বঙ্গ-নিউজ:২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে একদল তরুণ  ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলা চালায়। এই হামলায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়। অনুমোদনের জন্য নথি (ডেথ রেফারেন্স) পেপারবুক তৈরির পর্যায়ে রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতের রায়ে আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য উচ্চ আদালতের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে তা উচ্চ আদালতে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা থাকে।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসে এ মামলার পেপারবুক ছাপার কাজ আটকে আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

তবে তা ‘শেষ পর্যায়ে’ আছে বলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাই কোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানিয়েছেন।

সে অনুযায়ী গত বছর ২৭ নভেম্বর এ মামলায় রায় ঘোষণার পর মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য মামলার নথি গত বছর ৫ ডিসেম্বর ডেথ রেফারেন্স আকারে বিচারিক আদালত থেকে হাই কোর্টে আসে।

ফাইল ছবি

হাই কোর্টের ডেসপাস (আদান-প্রদান) শাখা সেগুলো গ্রহণ করার পর তা ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠানো হয়। পরবর্তীতে সেসব নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে ডেথ রেফারেন্স শাখা পেপারবুক তৈরির জন্য বিজি প্রেসে পাঠিয়ে দেয়।

হলি আর্টিজান বেকারিতে অস্ত্রধারীদের হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা গুলি চালানোর পাশাপাশি গ্রেনেড ছোড়ে। তাতে আহত হন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম। তিনিও মারা যান হাসপাতালে।  এ শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “হলি আর্টিজান মামলার ডেথ রেফারেন্স, রায়ের অনুলিপি ও আনুষাঙ্গিক নথিপত্র পেপারবুক তৈরির জন্য ফেব্রুয়ারিতে বিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। কোন পর্যায়ে আছে ঠিক জানি না। করোনা পরিস্থিতির কারণে সব কিছুই তো আটকে আছে। হয়ত এ কারণে পেপারবুক মুদ্রণের কাজটিও থেমে আছে।”

তবে পেপারবুক মুদ্রণের কাজটি শেষ পর্যায়ে আছে জানিয়ে হাই কোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, “পেপারবুক ছাপানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিজি প্রেসে আছে। করোনা পরিস্থিতি শেষ হলে আমরা পেয়ে যাব। তারপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রাষ্ট্রপক্ষ বা অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় উচ্চ আদালতে এ মামলার নিষ্পত্তি নিয়ে কী ভাবছে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেন, তিনি ও তার দপ্তর এ বিষয়ে তৎপর। তবে পেপারবুক প্রস্তুত হয়ে আসা পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে।

মাহবুবে আলম বলেন, “আমরা পেপারবুকের অপেক্ষায় আছি। পেপারবুক তৈরি হয়ে আসলে এ মামলা দ্রুত শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হবে।”

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলাটি খুবই সিরিয়াসলি নিয়েছে। করোনাভাইরাসের এ পরিস্থিতি না থাকলে এতদিনে হয়ত পেপারবুকও হয়ে যেত। আমরা হয়ত মেনশনও করে ফেলতাম এবং সেটি শুনানির পর্যায়ে চলে যেত। এখন আমাদের পেপারবুক আসার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।”

হলি আর্টিজান বেকারির চারপাশে ঘেরা নিরাপত্তা বেষ্টনির বাইরে ২ জুলাই দুপুরে দেখা যায় উদ্বিগ্ন এক জাপানি নারীকে। আগের রাতের হামলায় নিহতদের মধ্যে সাতজন ছিলেন জাপানি। হলি আর্টিজান বেকারির চারপাশে ঘেরা নিরাপত্তা বেষ্টনির বাইরে ২ জুলাই দুপুরে দেখা যায় উদ্বিগ্ন এক জাপানি নারীকে। আগের রাতের হামলায় নিহতদের মধ্যে সাতজন ছিলেন জাপানি।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মনে করেন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি রয়েছে তার মূল ভিত্তির উপর আঘাত করেছে হলি আর্টিজান হামলা।

তিনি বলেন, “ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিস্টরা এদেশে আছে, ইসলামিক স্টেটের অস্তিত্ব এখানে (বাংলাদেশে) আছে এটা প্রমাণ করার জন্যই বিদেশিসহ দেশি লোকদের মারা হয়েছে। সুতরাং এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির উপর দেশের ভাবমূর্তিও নির্ভর করছে।”

বিচারিক আদালতের রায় যাতে উচ্চ আদালতে বহাল থাকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে জানান মাহবুবে আলম।

বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া আসামির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অবস্থা ভালো হলে নথিপত্র দেখে যদি মনে করি যে, একজনের ব্যাপারে আপিল ফাইল করা দরকার তাহলে সেটা করব। আর যদি দেখি ফাইল করে কোনো লাভ হবে না সেক্ষেত্রে করব না।”

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান গত বছর ২৭ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২)(অ) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে। আরও দুটি ধারায় তাদের কয়েকজনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড।

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।

মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়ে বিচারক তার রায়ে বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে আসামিরা ‘জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ’ ঘটিয়েছে। সাজার ক্ষেত্রে তারা কোনো অনুকম্পা বা সহানুভূতি পেতে পারে না।

অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়েছে রায়ে।

গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকের তীরে হলি আর্টিজান বেকারির সবুজ লন ছিল বিদেশিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বিদেশিদের নিয়মিত আনাগোনা এবং শিথিল নিরাপত্তার কারণেই ওই রেস্তোরাঁকে জঙ্গিরা হামলার জন্য বেছে নিয়েছিল বলে তদন্তকারীদের ধারণা।

রোজার ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ আগে যেদিন ওই হামলা হয়, সেদিন ছিল শুক্রবার। পিস্তল, সাব মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র হাতে পাঁচ তরুণ রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই ক্যাফেতে ঢুকে শুরু করে নৃশংসতা।

জবাই ও গুলি করে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে তারা। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। অভিযানের সময় ও পরে হাসপাতালে মারা যায় হলি আর্টিজান বেকারির দুই কর্মচারী।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই হামলার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনামে চলে আসে; তখনও অনেকে হলি আর্টিজানের ভেতরে কার্যত জিম্মি হয়ে ছিলেন।

জিম্মিদের উদ্ধারে কমান্ডো অভিযানে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান ব্যবহৃত হয়। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ১১ ঘণ্টা পর এ অভিযান শুরু হয়।  রুদ্ধশ্বাস রাত পেরিয়ে ভোরে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা নামে অভিযানে; ‘থান্ডারবোল্ট’ নামের সেই অভিযানে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়ে। ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় মোট ১৩ জনকে।

এরপর দুই বছরে হামলায় জড়িত আরও অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন। গুলশান হামলার তদন্তে মোট ২১ জনকে চিহ্নিত করা হলেও তাদের মধ্যে জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার আটজনকেই কেবল বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দেন।

২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য শুনে বিচারক ২৭ নভেম্বর রায় দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৩:০৫   ৪৭৭ বার পঠিত   #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ