( রঙে ভরা লেখক-পাঠক ফোরামের জন্য লিখিত একটি রম্যরচনা।)
আমার অজ্ঞতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। যখনই কোন কিছুই বুঝতে ব্যর্থ হই, তখনই বুঝি কি ভয়ানক ভাবে আমি একজন অজ্ঞ মানুষ। বেশ কয়েকটি দিন শুধুই ভাবছি, কোন হিসাব মিলাতে পারছি না। আমাদের জালাল স্যার, বলতে গেলে খুব জনপ্রিয় একজন মানুষ। একই সংগে একজন সুলেখকও বটে। তিনি সম্প্রতি রঙ লেপায় একটি গানের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ফুলের শিথিল হয়ে যাবার বিষয়টি জানাতে পাঠকগণকে প্রশ্নটি করেছিলেন। পরে আবার তিনি নিজেই গানটির তাৎপর্য ব্যাখ্যাও করেছেন। গানটি ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেম পর্বের গান। ” কেন যামনী না যেতে জাগালে না, বেলা হলো মরি লাজে “। গানটি চমৎকার। ভাবার্থও যথার্থ। খুব উপভোগ্য সব। কিন্তু জালাল স্যার এখানে নিরীহ নববধুকে দোষী করলেন বরকে অতি ভোরে জাগিয়ে না দেবার জন্যে। কবি গুরু এবং জালাল স্যারের জ্ঞানের অসীম পরিধি নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা আমার নেই। কিন্তু আমার অভাজন অজ্ঞ মনে প্রশ্ন জগে, কেন শুধু নববধুকেই দায়টুকু নিতে হবে ? দুজনইতো রাত জেগেছেন সমান তালে। তবে কাজি নজরুল ইসলাম কেনইবা সাম্যতার কথা বলেছেন,” অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক শুধু নর। তর্কের খাতিরে না হয় মেনেই নিলাম, নববধুই দায়ী। কিন্তু রায়ের দিবার পূর্বে বিবাদীকেও তো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিবার বিধান রয়েছে। রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের এই প্রেম পর্বের গানেইতো অন্য একটি আর্থনাদ নীরবে গোমরে কাঁদে। ওখানে আছে ” ও যে মানে না মানা, আঁখি ফিরাইলে বলে, না,না, না । “যত বলি “নাই রাতি-মলিন হয়েছে বাতি” মুখপানে চেয়ে বলে,না,না,না”। —-আমি যত বলি “তবে এবার যে যেতে হবে ” ,দুয়ারে দাঁড়ায়ে বলে, না,না,না। -বেচারিনী নববধু আর কি করবে ? কি করার ছিল ? শুধু মিনতী করা ছাড়া ?
আমি “রঙে ভরা ব্যাংকিং জীবন” রঙ লেপার একজন সদস্য হবো কিনা তাই নিয়ে অনেক ভেবেছি। পরে আহ্বান উপেক্ষা করতে পারিনি। কিঞ্চিৎ লোভ যে ছিল না ,তা কিন্তু নয়। তার কারন হলো আমার জ্ঞানের সীমিত পরিধি। এই গ্রূপে অনেক শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তিবর্গ আছেন। লেখক আছেন, পাঠক-সমালোচকও আছেন। আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা যে নগণ্য, তা উপরে বর্ণিত গান দুটির মর্মার্থ বুঝতে ব্যর্থ হওয়া থেকে পাঠক বুঝতে পারবেন। এ ছাড়াও জালাল স্যারের সাথে সম্মানীত সদস্য/ সদস্যাদের সওয়াল জবাবও দেখেছি কাব্যিক ঢংয়ের হয়ে থাকে। এটাও সম্যক আত্মস্থ করা আমার ক্ষমতার বাইরে ছিল। বুঝতে পারলেও কাব্যিকভাবে সুন্দর করে জবাব দেওয়া ছিল আমার বড় অপারগতা। এমন অনেক দৃষ্টান্ত থেকে যৎসামান্যই নীচে লিখছি।
স্কুলজীবনে বহু কষ্ট করে মুখস্থ করেছিলাম-পরিবার কাকে বলে ? “মাতা-পিতা, ভাই-বোন,স্ত্রী পুত্র কন্যা সকলকে নিয়ে একত্রে বসবাস করাকেই একটি পরিবার বলে।” কিন্তু মাথাটা ঘুরে গেল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা পড়তে গিয়ে। কবিতাটির এক জায়গায় দেখলাম লিখা, ” পরিবার তায়,সাথে যেতে চায়, বুঝায়ে বলিনু তারে-,পতির পূণ্যে সতীর পূণ্য, নহিলে খরচ বাড়ে।” এখানে কাকে ভুল বলবো? কি বা মুখস্থ করেছিলাম।
স্কুল জীবনে পড়েছিলাম, “সাধু ও চলিত রীতির মিশ্রণ দূষনীয়। এই গুরু-চন্ডালী দূষের জন্য নাম্বারও কাটা যেতো। কিন্তু কবিদের বেলায় কোন নাম্বার কাটা গেছে বলে আমার জানা নেই। একটি কবিতার দুটি চরণ উদ্ধৃতি দেই- ” রাশি রাশি মিল করিয়াছ জড়ো,রচিতেছ বসি পুঁথি বড়ো বড়ো, মাথার উপরে বাড়ি পড়ো-পড়ো,তার খোঁজ রাখ কি !
আরও অসংখ্য কথামালা আছে যার অনেক কিছুই বুঝতে অপারগ হই। মানুষের কাছেও জিজ্ঞেস করিনা, পাছে ধমক খেতে হয় এই ভেবে। দেখুন কবি গুরু বললেন, “যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে চাঁদ উঠেছিল গগনে।” আচ্ছা ভাল কথা, কিন্তু এটাতো একজন অতি সাধারন লোকও জানে। পূর্ণিমা রাতে গগনে চাঁদ উঠে। আবার তিনি লিখলেন, “ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে ,ও বন্ধু আমার। ” আপনারাই বলুন, চাবি ভেঙ্গে ঘর থেকে নিয়ে আসবেন কি করে ? তালা খুলবেন কি দিয়ে ? চাবিটা থাকলেও একটা চেষ্ঠা করা যেতো। তার চেয়ে কাজি নজরুলের মতো কেন বলতে পারলেন না ,” লাথি মার ভাঙ্গরে তালা। ” আবার কাজি নজরুলে কিছু কথাও আমার বোধের বাইরে। তিনি কেন ফস্ করে বলে দিলেন, ” আমি বিদ্রোহী,আমি রণ ক্লান্ত, আমি সেইদিন হবো সান্ত।” সরাসরি এভাবে নিজেকে ” বিদ্রোহী” বলে স্বীকার করলে তো আত্মস্বীকৃত অপরাধীই হবেন।
কবি, সাহিত্যিক বা মহাজনদের কথার অর্থ বুঝতে আমি একেবারে অক্ষম। তাই নীরবে নিভৃতে থাকাটাই আমার কাছে উত্তম বলে মনে হয়েছে। এই দেখুন না,কবিরাইতো বলেন, ‘ভাইয়ে ভাইয়ে এমন স্নেহ, কোথায় গেলে পাবে কেহ।”, আবার পরক্ষণেই ওনারা বলেন, “ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই।” কোনটা সঠিক,আর কোনটা বিশ্বাস করবো আমি বুঝিনা। মহাজনেরা বলে গেছেন, ” নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।” খুব ভাল উপদেশ। আবার বুদ্ধি এলোমেলো হয় যখন শুনি, “কানা (দুষ্ট) গরুর চেয়ে শূণ্য গোহাল ভাল। ”
অনেক আছে সমার্থক শব্দ। কেন যে আমাদেরকে মুখস্থ করতে হয়েছিল জানিনা। যেমন, হিম-শীতল, নিরন্ন-উপবাসী,শোকে-দুঃখে,আনন্দ-উল্লাসে এইরুপ অনেক।
আধুনিক কালে লিঙ্গ প্রবিধি বোধ হয় খুব মেনে চলছে সবাই। এটা আমার জন্য আর এক দুুশ্চিন্তার কারন। কখন কোথায় ভ্রম করে ফেলি। যেমন- আপা হয়ে গেছে আপু,ম্যাডাম হয়েছে মেম, মা হয়ে মম । টয়লেটের বেলায়ও ব্যকরণবিধি যথাযথ ব্যবহৃত হচ্ছে মনে হয়। যেমন-টয়লেট, এটারও দেখলাম মহিলা টয়লেট আর পুরুষ টয়লেট লিখা হচ্ছ। কবি এর স্ত্রীলিঙ্গে মহিলা কবি অবশ্য পড়েছিলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৬:২৬ ৭৪২ বার পঠিত #বিনোদন #রঙ-লেপা #রম্যরচনা #সাহিত্য #স্বপন চক্রবর্তী