বঙ্গ-নিউজ- অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক বাংলাদেশি সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সে দেশের এক নারী ব্যবসায়ীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিচার বিভাগ।
আরব টাইমস জানিয়েছে, কুয়েতের শীর্ষস্থানীয় এক হোম ডেকর কোম্পানির মালিক ওই নারীকে পাপুলের দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তলব করে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন।
আল-সেয়াস্সাহ পত্রিকার বরাতে আরব টাইমস লিখেছে, ঘুষ ও অর্থ পাচারের অভিযোগে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ওই নারী ব্যবসায়ীকে। পরে দুই হাজার দিনার জামানতে তাকে জামিন দেওয়া হলেও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিচার বিভাগ।
পাপুলের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণকারী হিসাবে চিহ্নিত কুয়েতি কর্মকর্তাদের একজন ওই নারী ব্যবসায়ীর ভাই। ওই কর্মকর্তাসহ তিনজনকে এর আগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন দেশটির সরকারি কৌঁসুলিরা।
কুয়েতি গণমাধ্যমের খবরে ওই নারী ব্যবসায়ী ও তার কোম্পানির নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে তার কোম্পানির মূলধনের পরিমাণ আড়াই লাখ কুয়েতি দিনার বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে আরব টাইমসের খবরে।
পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির মত ওই নারীর কোম্পানিরও অনেক সরকারি কাজের চুক্তি রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। কুয়েতে তার স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।
পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। আটকের পরদিন থেকে টানা ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার তাকে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশের এই এমপি রিমান্ডে যা বলেছেন, তা প্রসিকিউটরদের বরাতে প্রকাশ করছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। কুয়েতি কর্মকর্তাদের তিনি কীভাবে কত টাকা ঘুষ দিয়েছেন, সেসব কথাও সেখানে আসছে।
কুয়েতি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পাপুলের মদদদাতা হিসাবে ইতোমধ্যে সাতজনকে চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারীরা; তাদের মধ্যে কুয়েতের দুইজন বর্তমান এবং একজন সাবেক পার্লামেন্ট সদস্যও রয়েছেন। তবে কুয়েতের বর্তমান দুই এমপি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলে খবর দিয়েছে কুয়েত টাইমস।
সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি।
প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে।
মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির প্রায় ৯ হাজার কর্মী রয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের এর আগে জানিয়েছিলেন পাপুল। যাদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশি। লোক নিয়োগে ৩৪টি সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে বলেও তথ্য দিয়েছিলেন তিনি।
এর মধ্যে পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে কুয়েত কর্তৃপক্ষ। কোম্পানির হিসাবে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা রয়েছে বলে এর আগে পাবলিক প্রসিকিউশনের বরাতে জানিয়েছিল কুয়েতি গণমাধ্যম।
বাংলাদেশেও পাপুলের অবৈধ সম্পদের খোঁজে তৎপর হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে পাপুল এবং তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব হিসাবের লেনদেন স্থগিত করেছে সংস্থাটি।
আগামী ৬ জুলাই এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠনের কথা রয়েছে। এর আগ পর্যন্ত পাপুলকে কারাগারেই থাকতে হবে।
অপরাধ প্রমাণ হলে পাপুলের পাঁচ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে বলে লিখেছে কুয়েতের বিভিন্ন পত্রিকা।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৮:১৪ ৬৭৫ বার পঠিত #কুয়েতে কেলংকারী #কুয়েতে মানব পাচার #নারী #নিষেধাজ্ঞা #পাপল #মানব পাচার