স্বপন চক্রবর্তী, বঙ্গ-নিউজ: ভাইরাসের বিস্তার কমলে আগামী সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারে এমনটা ধরে নিয়ে এই পরিকল্পনার ছক তৈরি করা হচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা কাটিয়ে উঠতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার।
তারা বলছেন, স্থগিত হয়ে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষা, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি, আসন্ন প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা, স্কুল-কলেজের বার্ষিক পরীক্ষা এবং ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের কীভাবে প্রমোশন দেওয়া হবে সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে থাকবে ‘রিকভারি প্ল্যান’।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রোববার বলেন, “শিক্ষা খাতের ক্ষতি পোষাতে রিকভারি প্ল্যান তৈরির কাজ করছে কয়েকটি টিম। শিগগিরই এসব টিমের কাছ থেকে সুপারিশ নিয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে।”
শিক্ষামন্ত্রীর তদারকিতে এসব টিম কাজ করছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি একটু গুছিয়ে এলেই শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে সবাইকে অবহিত করবেন।
আগামী সপ্তাহে সবাইকে নিয়ে বসে একটি সিদ্ধান্ত হবে জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন রোববার বলেন, “পড়াতে তো পারিনি, পরীক্ষা কীভাবে নেব? পরীক্ষা বাদ দিয়ে দিয়েছি। শিক্ষকদের বলেছি, হোম ওয়ার্ক দিতে।
“ছাত্রছাত্রীরা বিষয়ভিত্তিক হোমওয়ার্ক বিদ্যালয় খোলার পর জমা দেবে, সেই হোমওয়ার্ক দেখে মূল্যায়ন করব। টিভির ক্লাসের ওপর নির্ভর করে বাড়ির কাজ দিতে বলা হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ে আপাতত কোনো চিন্তাভাবনা করছি না।”
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলেন, সামনের দিনগুলোতে মহামারীর পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে কেউ জানে না। কিন্তু ভাইরাসের বিস্তার না কমলে স্কুল খোলা সম্ভব না। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয় খোলার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, তেমনটা ধরেই তারা পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন।
“বিদ্যালয় খোলার পর লার্নিং লস কীভাবে রিকভারি করা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। রোজার ঈদের পরে বিদ্যালয় খোলার মত পরিস্থিতি হতে পারে ধরে নিয়ে একটা প্ল্যান করেছিলাম, সেটা বাস্তবায়ন করা যায়নি। এখন সেপ্টেম্বর মাস সামনে রেখে আমরা নতুন করে রিকভারি প্ল্যান করছি। সে অনুযায়ী বার্ষিক পরীক্ষা ও সমাপনী পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”
মুক্তিযুদ্ধের বছর শিক্ষার্থীদের অটো প্রমোশন দেওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে সচিব আকরাম বলেন, “ওই সময় যারা অটো প্রমোশন পেয়েছিলেন, তাদের খুব বেশি সমস্যা হয়েছে বলে মনে হয় না। এখন শিক্ষক ও শিশুদের জীবনই আমাদের কাছে সব থেকে বড়।”
যদি সেপ্টেম্বর মাসে বা এ বছর বিদ্যালয় খোলার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, তখন কী হবে- সেই প্রশ্নে গণশিক্ষা সচিব বলেন, “এখনও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি, সময় হোক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”
করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় গত ১৭ মার্চ থেকে দেশর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ৬ অগাস্ট পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা আছে। ৬ অগাস্টের পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধই থাকবে বলে ধারণা দিয়েছেন কর্মকর্তারা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার প্রাথমিকের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা হয়নি। ৯ থেকে ২০ অগাস্টের মধ্যে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও সে সম্ভাবনা আর নেই। ১৩ থেকে ২৫ জুনের মধ্যে মাধ্যমিকের অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষা নেওয়ার কথা, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটাও আর হচ্ছে না।
গত ৩১ অগাস্ট এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হলেও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। স্থগিত হওয়া এইচএসসি পরীক্ষা কবে থেকে শুরু করা যাবে সে বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বোর্ড কেন্দ্রীয়ভাবে দেশের সরকারি-বেসরকারি সব কলেজের একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসছে। এবার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েও একাদশে ভর্তি কার্যক্রম পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে সংক্রমণ পারিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণে।
এই বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. হারুন অর রশিদ রোববার বলেন, শিক্ষার্থীরা কোনোভাবে যেন আক্রান্ত না হয় সে বিষয়টিকেই এখন প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে একাদশে ভর্তির কার্যক্রম কবে থেকে শুরু করা যাবে, সে সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কবে থেকে শুরু করা হবে- সে বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (মাউশি) সৈয়দ গোলাম ফারুক বলছেন, বছরের অর্ধেক ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে। স্কুল কবে খোলা যাবে, সে নিশ্চয়তা নেই। ফলে অনলাইন ও সংসদ টিভির মাধ্যমে মাধ্যমিকের সিলেবাস শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তারা।
কিন্তু মাধ্যমিকের এক কোটি ৩৪ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে সাড়ে ১০ লাখ শিক্ষার্থী যে সংসদ টিভি দেখতে পারছে না, সে কথা স্বীকার করে বলেন, “এখন আমরা এদেরকে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করছি। তবে এখনও কোনো উপায় বের করতে পারিনি।”
তিনি বলেন, “সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে কীভাবে পরীক্ষাটা নেওয়া হবে সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। বার্ষিক পরীক্ষা হোক আর নাই হোক, আসল কথা হল লেখাপড়া।”
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তারা বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাড়ির কাজ মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণিতে ওঠানোর বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
“তবে সেপ্টেম্বর মাসেও যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়, সিলেবাস কিছুটা কাটছাঁট করে তা শেষ করে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া যাবে।”
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩২:৩৩ ৫৭১ বার পঠিত #ক্লাস #শিক্ষা #শিক্ষা বোর্ড #শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান #সিলেবাস