বঙ্গ-নিউজ: অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির হিসাব জব্দ হচ্ছে।
এর মধ্যে মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অ্যাকাউন্টে পাঁচ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা বাংলাদেশি টাকায় ১৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ টাকা রয়েছে বলে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের বরাতে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
শনিবার রাতে আরব টাইমস জানিয়েছে, পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক হিসাব জব্দের জন্য ইতোমধ্যে কুয়েতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছেন সরকারি কৌঁসুলিরা।
প্রসিকিউশনের বরাতে পত্রিকাটি লিখেছে, ওই কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৫ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার রয়েছে। যার মধ্যে ৩ মিলিয়ন ডলার কোম্পানির মূলধন।
”সন্দেহভাজন এই অর্থ যাতে তোলা বা স্থানান্তর করা না যায় এবং আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা যায়, সেজন্য নেওয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ।”
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের কুয়েতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।
পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। আটকের পরদিন থেকে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের এই এমপি রিমান্ডে যা বলেছেন, তা প্রসিকিউটরদের বরাতে প্রকাশ করছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। কুয়েতি কর্মকর্তাদের তিনি কীভাবে কত টাকা ঘুষ দিয়েছেন, সেসব কথাও সেখানে আসছে।
কুয়েতি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পাপুলের মদদদাতা হিসাবে ইতোমধ্যে সাতজনকে চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারীরা; তাদের মধ্যে কুয়েতের দুইজন বর্তমান এবং একজন সাবেক পার্লামেন্ট সদস্যও রয়েছেন। তাদের সবার নাম দ্রুত প্রকাশ করে বিচারের আওতায় আনার দাবি উঠেছে দেশটিতে।
সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি।
প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে।
মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির প্রায় ৯ হাজার কর্মী রয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের এর আগে জানিয়েছিলেন পাপুল। যাদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশি। লোক নিয়োগে ৩৪টি সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে বলেও তথ্য দিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদে পাপুল দুই সরকারি কর্মকর্তাসহ যে তিনজনকে ঘুষ দেওয়ার বর্ণনা দিয়েছিলেন, তাদেরকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে শনিবার রাতে খবর দিয়েছে আরব টাইমস।
তাদের নাম প্রকাশ না করে পত্রিকাটি লিখেছে, এদের একজন সরকারি জনশক্তি কর্তৃপক্ষের পরিচালক এবং অন্যজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্নেল পর্যায়ের কর্মকর্তা।
এ তিনজনের মধ্যে দুইজনকে বাংলাদেশি এমপি চেকে ও নগদে মোট ২১ লাখ দিনার ঘুষ দিয়েছিলেন বলে এর আগে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
ব্যাংক হিসাব জব্দ করার পাশাপাশি পাপুলের কোম্পানি কার্যালয়ে গচ্ছিত অর্থ, নথিপত্র এবং সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত জব্দ করার খবরও দিয়েছে আরবি দৈনিক আল-কাবাস।
পাপুলের আয়ের একটি সম্ভাব্য হিসাবও দেওয়ার চেষ্টা করেছে কুয়েতি গণমাধ্যম। সরকারি কৌঁসুলিদের বরাতে বিভিন্ন পত্রিকা লিখেছে, পাপুলের বার্ষিক মুনাফা ছিল ২০ লাখ দিনার (প্রায় ৫৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা)।
কুয়েতে পাপুলের অফিসের কর্মীরাই তদন্তকারীদের এ তথ্য জানিয়েছেন বলে আরব টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আগামী ৬ জুলাই পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উত্থাপনের কথা রয়েছে। এর আগ পর্যন্ত তাকে কারাগারেই থাকতে হবে। অপরাধ প্রমাণ হলে কুয়েতি আইনে পাপুলের পাঁচ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং সেইসঙ্গে জরিমানা হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০০:৫০ ৪৯০ বার পঠিত #অর্থ পাচার #পাপুল #মানব পাচার #মানি লন্ডারিং