যৌতুক বাংলা শব্দ। এর প্রতিশব্দ পণ।ইংরেজিতে Dowry।
ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় এর সঙ্গা দেয়া হয়েছে এভাবে-
“Dowry: The proper that a wife or wifes family to give her husband upon marriage.”
যৌতুক হলো বিবাহ উপলক্ষে কন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বর কে প্রদেয় সম্পদ।
(The Encyclopedia Britannica V.4,p.205)
যৌতুক নামক সামাজিক ব্যাধির বিষক্রিয়ায় আমাদের গোটা সমাজ আক্রান্ত।যৌতুক নামক শব্দটা শুনলেই ঐসব নিম্নবিত্ত পরিবারের কান্নার ঢেউ ভেসে আসে,যেসব নিম্নবিত্ত পরিবারে বিবাহযোগ্য কন্যা রয়েছে।বহুকাল আগে থেকেও এই প্রথা প্রচলিত হয়ে আসলেও বর্তমানেও এর ভয়াবহতা কমেনি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে।নারী জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ এই যৌতুক প্রথা।প্রতিনিয়ত অসংখ্য নারী অত্যাচারিত ও নিপীড়িত হচ্ছে এই যৌতুক নামক বিষাক্ত অভিশাপের ফলে। পুরুষ শাসিত সমাজে অনেক নারীর সুখের সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে যৌতুকের কারণে।এই প্রথার করাল গ্রাসে নারীর সামাজিক ও মানবিক মর্যাদা লাঞ্চিত হচ্ছে।যৌতুক প্রথা কেবল নারীকেই মর্যাদাহীন করছে না,বরং গোটা নারী জাতির উন্নয়ন কে বাঁধা গ্রস্ত করে সমগ্র দেশের উন্নয়ন কে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এই যৌতুকের কারণেইই মেয়েরা বাল্য বিবাহের শিকার হচ্ছে।কারণ সমাজে এরকম ধারনা প্রচলিত আছে যে,মেয়ের বয়স যত বেশি হবে, তারজন্য নাকি তত বেশি যৌতুক দিতে হবে।যার ফলে গ্রামের দরিদ্র পরিবার সমূহ তাদের কন্যাদের দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিয়ের নির্দিষ্ট বয়স হওয়ার পূর্বেই বিয়ে দেয়।যার ফলে ঐসব মেয়েদের নানা রকম শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়।
যৌতুকের প্রভাবটা শহরে ও গ্রামে দুই জায়গাতেই বর্তমান।কিন্তু শহরের তুলনায় গ্রামেই বেশি দৃশ্যমান।গ্রামে এই কথা সরাসরিই বলা হয় যৌতুক না দিলে মেয়ের বিয়েই হবে না।
এই যৌতুক নামক ব্যাধির প্রধান কারণ হলো অর্থলোভ।অনেক সময় অর্থের লালসায় ছেলের পরিবার ছেলেকে তারাতারি বিবাহ দিচ্ছে।তাছাড়া আমাদের দেশের দারিদ্র্য বা আর্থিক দুরবস্থাও এই প্রথার অন্যতম কারণ।দারিদ্র্যের চাপে বা অভাবে পরে অনেকে যৌতুক নিয়ে থাকে।কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস নারীদের উপযুক্ত মর্যাদা দানে বাঁধা দেয় যা যৌতুক প্রথাকে উৎসাহিত করে।শিক্ষা দীক্ষায় অনগ্রসর নারীকে সমাজ মূল্যহীন ভাবে আর এর ফলে সৃষ্ট নারীর অজ্ঞতা ও অর্থনৈতিক পরনির্ভরশীলতা যৌতুক প্রথা সৃষ্টির অন্যতম কারণ।এছাড়া অধিকারহীনতা,অশিক্ষা,সামজিক প্রতিপত্তি ও প্রতিষ্ঠা লাভের মোহে,উচ্চ বিলাসী জীবন যাপনের বাসনা যৌতুক প্রথার অন্যতম কারণ বলে আমি মনে করি।
যৌতুকের লোভে পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে না হওয়ার অনেক সময় স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ভাল হয় না।যৌতুকের অর্থের পরিমান সামান্য কম হলেই দেখা যায় যে দরিদ্র পরিবারের মেয়ের উপর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা নানা নির্যাতন শুরু করে।এর ফলে অনেক মেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।
অথচ আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী যৌতুক নেয়া ও দেয়া দুটোই অপরাধ।এছাড়া যৌতুকের কারনে কেউ আত্মহত্যা করলে প্ররোচনাকারীর শাস্তি হবে যাবজ্জীন কারাদণ্ড। কিন্তু বাস্তব অবস্থা কি?যৌতুক কি বিদায় নিয়েছে আমাদের সমাজ থেকে??
আসুন আমরা এখন থেকেই যৌতুক নামক বিষাক্ত ব্যাধির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।
মোঃ শাহ্ আলম
শিক্ষার্থী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৭:৩০ ১২৪৪ বার পঠিত #একটি সামাজিক ব্যাধ #যৌতুক #যৌতুক প্রথা #যৌতুক প্রথাঃ একটি সামাজিক ব্যাধি