
স্বপন চক্রবর্তী, বঙ্গ-নিউজ:আপনার সুরক্ষা আপনার হাতেই। যতদিন কোভিড থাকবে, ততদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে আপনাকে চলতেই হবে। আপনার অবহেলা বা অসাবধানতা আপনারই ক্ষতি করতে পারে। নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি অচিরেই ঘটছে না বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ। ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শততম দিন অতিক্রান্ত করলো। আর বাংলদেশ আক্রান্তের দিক থেকে এক লক্ষ ছাড়াল।
তিনি বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ আরও দুই থেকে তিন বছর স্থায়ী হতে পারে দেশে, যদিও এর মাত্রার কমতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিন প্রকাশের সময় এ্ই আশঙ্কার কথা বলেন ডা. আজাদ।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে প্রাদুর্ভাবের পর গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী ধরা পড়ে। এর একশ দুই দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা লক্ষ ছাড়ায়।
ডা. আজাদ নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেরে ওঠার পর বৃহস্পতিবারই প্রথম বুলেটিন প্রকাশের সময় ফেইসবুকে আসেন তিনি।
তিনি বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী পরিস্থিতি বিবেচনা করে করোনা পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না।
“এটি দুই থেকে তিন বছর বা তার চেয়েও বেশি দিন স্থায়ী হবে। যদিও সংক্রমণের মাত্রা উচ্চহারে নাও থাকতে পারে।”
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিএমএইচে ছিলেন, জানালেন স্বাস্থ্যের ডিজি। কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলার লড়াইয়ে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা হিসেবে সহায়তকারী বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক হোসেন দুদিন আগে বলেছিলেন, “এই ভাইরাস কিন্তু আপনাআপনি পিকে উঠে নেমে যাবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নাই।
“এটার সাথে সিজনের কোনো সম্পর্ক নাই, এটার সাথে ভাইরাস দুর্বল হয়ে পড়ার কোনো সম্পর্ক নাই। এটা সে ধরনের ভাইরাস নয়।”
বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ডা. আজাদ বলেন, “বিশ্বব্যাপী অর্জিত অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছুকাল পরে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমনের উচ্চ হার কমে আসতে পারে।
“কিন্তু করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ালে অনেক মৃদু ও লুকায়িত কেসও শনাক্ত হবে। সেক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যার পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর নাও হতে পারে।”
“বাংলাদেশ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। করোনাভাইরাসও অত্যন্ত ছোঁয়াচে ভাইরাস। এ জন্য অসতর্কভাবে চলাফেরা ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে না চললে এ দেশে সংক্রমনের হার মোকাবেলা করা কঠিন।
“লক্ষণ থাকলে অবহেলা করবেন না। পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিন। যাদের বয়স বেশি, অন্য রোগবালাই যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ আছে, তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। তারা অধিকতর সাবধানে থাকবেন,“ বলেন এই চিকিৎসক।
সামাজিক পর্যায়ে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ মার্চ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে এক ধরনের অবরুদ্ধ অবস্থা তৈরি করেছিল।
গত ৩১ মার্চ তার অবসানের পর দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমনের হার ক্রমাগত বাড়ছে থাকে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু।
শনাক্ত রোগীর সংখ্যার বিচারে বিশ্বের সপ্তদশ দেশ এখন বাংলাদেশ। করোনাভাইরাস: বাংলাদেশে শনাক্ত রোগী লাখ ছাড়াল।
এই পরিস্থিতিতে এখন সংক্রমনের হার বিবেচনায় বিভিন্ন এলাকা রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করে সেসব স্থান অবরুদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখলে কর্মহীনতা, আয় রোজগারের পথ বন্ধ হওয়া, অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণেও ব্যাপক অপুষ্টি, রোগবালাই, নিত্য ঘটতে পারে। সে কারণে জীবন ও জীবিকার মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য, সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে।
কোনো স্থানে করোনা রোগ সংক্রমন প্রশমনের জন্য যদি কৌশলগত রেড জোন ঘোষণা করতে হয়, সেসব স্থানে যখন যেমন প্রয়োজন তেমনভাবে তা করা হবে, এ ব্যাপারে একটি বিশেষজ্ঞ গ্রুপ কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী কোনো দেশ নয়। আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্যে যা করা সম্ভব, যা করা বাস্তবমুখী,সরকার সে রকম ব্যবস্থাই নিচ্ছে।
কোভিড পরীক্ষার কাজ বেসরকারি পর্যায়ে আরও সম্প্রসারিত হবে বলে জানান তিনি।
ডা. আজাদ বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায় পর্যন্ত আরটি-পিসিআর পরীক্ষা যত দ্রুত সম্ভব সম্প্রসারিত হবে। আরও নতুন নতুন ও সহজে করা যায়, এমন পরীক্ষা চালু করা হবে। উপজেলা হাসপাতাল পর্যন্ত এ ধরনের পরীক্ষা চালু করার প্রচেষ্টা নেওয়া হবে।
রোগীর চিকিৎসায় সব জেলা হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা সম্প্রসারণে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন সম্প্রসারণও করা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, অক্সিজেন কনসানটেটর,সিটাব মেশিন দ্রুত সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পরীক্ষার কিট ও পিপিইর যেন কোনো অভাব না হয়, তার জন্য ‘সুপরিকল্পিত’ সংগ্রহ ও সরবরাহ পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, কোভিড ও নন কোভিড রোগীর চিকিৎসা দেন, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালের বিষয়ে মূল্য নির্ধারণ, তদারকি ও প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা সকল ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ডা. আজাদ বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি খাত যেন যৌথভাবে এই গুরুদায়িত্ব পালন করে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।”
বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৭:০৩ ৬৩৩ বার পঠিত # #করোনা ভাইরাস #মহামারি আকারে করোনা ভাইরাস #সারা বিশ্বে করোনা