বর্ষার দিনগুলি যদি ফিরে পেতাম!

Home Page » ফিচার » বর্ষার দিনগুলি যদি ফিরে পেতাম!
বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০



ফাইল ছবি

ছোটবেলা থেকেই ছোট্ট এক গাঁয়ে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে বড় হচ্ছি। গোমতী নদীর পাশে অবস্থিত শান্তিপ্রিয় সেই গ্রামের নাম শিকারপুর। ঐ গ্রামেই কাটে আমার ছেলেবেলা। বর্ষায় আমাদের গ্রামের চিত্রপট ছিলো অন্য রকম।বর্ষাকালটা বেশ উপভোগ করতাম! বর্ষাকালে গ্রামে প্রচুর বৃষ্টি হতো। চারদিকে তাকালে মনে হতো,পৃথিবীর সব পানি বোধহয় আমার গ্রামে এসে পড়েছে । পানিতে ভরে যেতো এলাকার খাল-বিল। বর্ষা এলে যেন গোমতী প্রাণ ফিরে পেতো।ঠিক,স্রোত হারা নদী যেভাবে প্রাণ ফিরে পায়।গ্রামের রাস্তার গাছগুলোতে সচরাচর দেখা মেলতো কেয়া আর কদম ফুল।দিব্যি প্রস্ফুটিত হয়ে সুগন্ধীর রেশ ছড়াতো। দীঘির মাঝখানে দু’চারটা শাপলা বড় বড় পাতা নিয়ে ভাসতে দেখা যেতো। বাতাসের দোলায় দোল খেতো পাতাগুলো।বন্ধু-বান্ধব মিলে ভেলা বানিয়ে যথারীতি শাপলা ফুল কুড়াতে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়তাম। তখনকার বর্ষায় ভরপুর বৃষ্টি হতো। কখনো মাঠ-ঘাট কাঁপানো বৃষ্টি, কখনো বা টুপটাপ শব্দে বৃষ্টি। কখনো বা মেঘে মেঘে দ্বন্দ্ব লেগে যেত। হুংকার ছাড়ত ওরা গুড়ুম গুড়ুম শব্দে। বজ্রপাতের ভয়ে তখন আমরা কাঁথার নিচে মাথা লুকাতাম। কখনো আবার দেখতাম মেঘ শেষে রংধনু উঠেছে কিনা। তখন আমাদের গ্রামের অবস্থা ভাল ছিলো না।এখনকার মতো ছিল না পাকা রাস্তা।ছিল কাঁচা মেঠো পথ। দু’একদিনের বৃষ্টিতে কাদায় ভরে যেতো এলাকার সব রাস্তাঘাট। এখন সেখানে গেলে কাদা কেন পানির চিহ্ন পাওয়া যাবে না।

তখন বৃষ্টি নামলে সহজে থামতো না। সেই বৃষ্টিতে কখনো ভেসেছে মাঠ, আউস ক্ষেত কখনো বা বাড়ীর উঠোন। তখন গ্রামে মাছ ধরার ধুম পড়ে যেতো। কেউ খালে বিলে চই পাততো। কেউ বা মাছ ধরার জন্য তীর নিয়ে মাছের পেছনে ঘুরতে গিয়ে দিন-রাত এক করে ফেলতো। রাত একটা- দু’টো পর্যন্ত চলত মাছ শিকারীদের আনাগোনা। কেউ আবার খালে বিলে মাছ শিকারের জাল পাততো। আবার কখনো মেঘ ডাকলে ছুটে আসত কৈ মাঝের ঝাঁক। রাস্তা ঘাট, উঠানে দলবেঁধে উঠে আসতো ওরা। কানে হেঁটে চলাচল করে ওরা। কখনো মানুষের হাতে ধরা খায় আবার কখনো বা নেমে যায় পুকুর কিংবা খালে। যখন বৃষ্টির জন্য বাইরে বের হওয়া যেতো না তখন দেখতাম মা-চাচীরা নকশী কাঁথা বুনতো। আর আমরা মজা করে বয়স্কদের কাছে গল্প শুনতে যেতাম। বৃষ্টি এলে আমি খুব খুশি হতাম এবং মনে মনে বৃষ্টির কামনা করতাম। কারণটা সবাই জানে।বৃষ্টি এলে স্কুলে যাওয়া লাগবে না। ছুটি আর ছুটি। তখন একটাই কাজ ছিল, চুপি চুপি বৃষ্টিতে ভেজা, শ্যাওলা পড়া ওঠানে আছাড় খাওয়া।বৃষ্টির দিনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্মৃতি ছিল ফুটবল খেলা। কখনো মায়ের কথা অমান্য করে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধাতাম। কখনো বা বাবার হাতে মার খেতাম। আবার স্কুলের অর্ধেক পথে এসে পৌঁছে ইচ্ছে করে কাদায় আছাড় খেতাম, তারপর স্কুলে না গিয়ে বাড়ি ফিরে আসতাম। বৃষ্টি এলেই মা পিঠা বানাত, চাল-ডাল ভাজত। আমার ছেলেবেলার বর্ষাকাল সত্যিই মজার ছিল। হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো ভাবতে সত্যিই ভালো লাগে। মনে হয়, আহা, আগের বর্ষা মুখর দিনগুলো যদি ফিরে পেতাম।

ফাইল ছবি

লেখকঃ

হাছিবুল বাসার মানিক

শিক্ষার্থী,

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩৬:০৮   ১৪৯২ বার পঠিত   #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ফিচার’র আরও খবর


অ্যানেন্সেফ্লাই কী? - রুমা আক্তার
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
“ম্রো’ আদিবাসীর গো হত্যা’ অনুষ্ঠাণ ” - তানিয়া শারমিন
আলোকিত স্বপ্ন নিয়ে তৃতীয় বর্ষে রবিকর ফাউন্ডেশন
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন রক্ষায় প্রয়োজন জেন্ডার সংবেদনশীল নীতির পর্যালোচনা
জিনগত ত্রুটির অপর নাম “ডাউন সিনড্রোম”- রুমা আক্তার
মোহাম্মদ শাহ আলমের জীবন ও কর্ম
ইসফাহান নেসফে জাহান
সিলেটে গ্রুপ ফেডারেশনের কর্মশালায় বির্তকিত মুরাদ- আয়োজকদের দুঃখ প্রকাশ
ডলারের দাম যেভাবে বাড়ছে, টাকার দাম কেন কমছে

আর্কাইভ