জিল্লুর রহমান রাসেল, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
কলুষমুক্ত হতে চলছে ফরিদপুরের আওয়ামীলীগ। নেতৃত্বে আসছেন র্দীর্ঘদিনের লড়াই সংগ্রামের অকুতোভয় নেতৃত্বদানকারী পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা-কর্মিরা। তাদের হাত ধরেই আবার যাত্রা শুরু করবে সেই প্রকৃততায় ঠাসা সংগ্রামী আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব। যাতে স্থান হবে না গত ১০ বছরে বিএনপি ও জামাতসহ বিভিন্ন দল থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী হাইব্রীডদের।
জেলা আওয়ামীলীগের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে উপরের নির্দেশে খুব দ্রুতই বিভিন্ন কমিটিতে স্থান পাওয়া এই সব বসন্তের কোকিলদের বিদায় করা হবে। এরই মাঝে তারা কাজ শুরু করেছেন এই সব সুবিধাভোগি লুটেরা নামধারীদের দল থেকে বের করার জন্য। আর যারা তাদের বিভিন্ন পদ দিয়ে লুট করার জন্য পুরুস্কৃত করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে অনেক ত্যাগী নেতারা জানিয়েছেন। আর এ বিষয়টি জেলা থেকে প্রস্তাব আকারে কেন্দ্রে পাঠানোর কথা রয়েছে তাদের। আর এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে দুজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে দল থেকে।
মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতারা জানান, গত ১১ বছর অনেকে ব্যথা, অপমান সইতে না পেরে রাজনীতি থেকে সড়ে রয়েছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ প্রবাসে গিয়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছেন। আবার কেউ ঢাকায় কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। আবার জেলায় মাটি আগলে থাকা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ত্যাগী নেতা বিপুল ঘোষ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডঃ সামসুল হক ভোলা মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন (যিনি দলের পদ পেয়েও দায়িত্ব বিহীন অবস্থায় ছিলেন ঘরবন্দি) পড়ে আছেন জেলায়। যদি কখনো পরিবর্তন হয় এই মহা দুঃশাষনের সেই আশায়।
তারা আরো জানান, গত ১১ বছর দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করেছেন প্রকৃত আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মিরা। এই এগারো বছরে আওয়ামীলীগ নামটি উচ্চারন করতে পারেন নাই অনেকে। বরং বিরোধী শিবিরের তকমা দিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে তাদের উপর। তাদের এতো ক্ষমতা ছিলো প্রতিবাদতো দূরের কথা বাড়ি ঘরেও থাকতে দেয়া হয়নি অনেককে। এখন অনেকটা মুক্ত এখন বলতে পারেন বুক ভরে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারছি। সেই বিভিষিকাময় অবস্থা থেকে শহর/জেলা আজ প্রায় মুক্ত। মনে হয় এখন নব্য হাইব্রীডদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছি।
জানাযায়, ফরিদপুরের দুঃসময়ে লড়াই, সংগ্রামে যারা আওয়ামী লীগের যোদ্ধা হয়ে মানুষের পাশে থেকেছেন, কল্যাণে, উন্নয়নে বিগত দুঃসময় গুলো পাড় করেছেন তারা এই জেলারই সন্তান। দেশের দুঃসময়ে তাদের শ্লোগানে কাপানো মিছিল, আন্দোলন সংগ্রামের সেই প্রতিটিদিন আওয়ামীলীগের ত্যাগী এসব নেতা কর্মীদের দ্বারা রাজপথ মূখর থাকতো। সেই দিনের সেই সৃতি ভুলতে বসেছিলো নেতারা। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে আবারো জেগে উঠছে ফরিদপুরের সেই দুঃসময়ে বছরের বছরের পর জেল খাটা ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা ও কর্মিরা। নব উদ্যোমে দলের দায়িত্ব নিতে তারা এখন প্রস্তুত।
ফরিদপুরের ইতিহাসে সেইসব বীর সাহসী যোদ্ধারা অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন। আর যারা এখনও বেঁচে আছেন অনেক ক্ষত আর ব্যথা, অপমান লাঞ্চনার প্রহরগুলো ইট চাপা দিয়ে রেখেছেন অভিমানের ঘোমটায়। একটি বিশেষ লুটেরা বাহিনীর আতঙ্কে নির্যাতিত, শোষিত, ক্ষতিগ্রস্থরা কথা বলার সাহস পায়নি এখানে।
ফরিদপুর গণমানুষের মধ্যে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করা মানুষেরা এই মুহুর্তে ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুঃসময়ের যোদ্ধাদের ফিরে আশার প্রত্যশায় রয়েছে। তারা যদি এ জেলায় সকল অভিমান সড়িয়ে আবারও আসেন তাহলে জেগে উঠবে প্রকৃত আওয়ামীলীগ। শান্তির বাতাসে ভরে উঠবে আবার ফরিদপুরের মাটি, আকাশ ও বাতাস। আর এক্ষেত্রে দরকার ত্যাগী নেতাদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী সকলকে নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করা।
এদের মধ্যে ফরিদপুর জেলার আওয়ামীলীগ ইতিহাসের দুঃসাহসিক যোদ্ধাদের মধ্যে প্রয়াত হয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ভাঙ্গা-৪ আসনের সাবেক সাংসদ এ্যাডঃ সামসুদ্দিন মোল্যা, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন, সাবেক সভাপতি ইমামউদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস.এম. নুরুন্নবী, মরহুম আব্দুল হাই মিয়া, মরহুম সোলায়মান আলী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সাংসদ ভাঙ্গার মরহুম হায়দার হোসেন, সাবেক সাধারন সম্পাদক হাসিবুল হাসান লাভলু, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আশরাফুজ্জামান মজনুসহ অনেকে।
আর এই এগারো বছরে অনেক সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তূখর নেতা বিপুল ঘোষ। যাকে বলা হয় জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক নেতৃত্বের এক মহান নাম। দুঃসময়ের সেই সময়ে বিপুল ঘোষ, প্রয়াত হাসিবুল হাসান লাভলু ও প্রয়াত আশরাফুজ্জামান মজনুর নেতৃতেই চলতো জেলা আওয়ামীলীগ। এই তিন নেতার ভিতর দুজন গত হয়েছেন। বেচেঁ রয়েছেন ১৭ বার জেল জীবন ভোগ করা ও দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের এক যোদ্ধা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য বিপুল ঘোষ। তাদের নেতৃত্বকে এখনো জেলার প্রকৃত আওয়ামী নেতা কর্মিরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করে থাকে।
এদের সাথে গত ১১ বছরে সংগ্রাম করে চলছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডঃ সামসুল হক ভোলা মাস্টার, বর্তমান সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন, মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী আইভি মাসুদ, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি মোঃ ফারুক হোসেন, ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শামীম হক, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সমীর বোস, মনিরুল হাসান মিঠু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুর রহমান খান, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শ্যামল কুমার ব্যানার্জী, কোতয়ালী থানা কমিটির সাবেক সভাপতি খলিফা কামাল উদ্দিন, কেএম সেলিম প্রমূখ। তবে এদের সাথে বিভিন্ন মামলা, জেল সহ নানা নির্যাতনে অতিষ্ঠি মাঠের আরো একঝাকঁ ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মি রয়েছেন যারা ভূমিকা রেখেছেন প্রতিটি মূহুর্তে। তারাও এখন জেগে উঠেছে সকল অভিমান ভুলে দলকে সাজাতে।
যারা রাজপথে এলে আবারও ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রাণ শুধু ফিরেই পাবে না আওয়ামীলীগ হাটবে মূল স্রোতধারায়। আর এতে প্রকৃত আওয়ামীলীগ জেগে উঠবে নব উদ্যোমে গতির সঞ্চারে। আর সেই প্রেক্ষাপট শুরু হওয়াই জেলার আওয়ামী সেনারা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন আওয়ামী সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। উল্লেখিত ব্যক্তিদের প্রত্যেকেরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে মানুষের মাঝে।
সংগ্রামের ঘামে ভেজা প্রহরগুলো নেতা-কর্মীদের প্রাণে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ইচ্ছের স্বপ্ন গড়েছে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সফল রাষ্ট্র নায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে সমস্ত প্রতিকুলতার সাথে যুদ্ধ করে করে পথ চলা নেতৃবৃন্দদের আবারও ফরিদপুরের রাজপথে মাঠে, ময়দানে মানুষের কল্যাণেই আনা দরকার। সময় কালে দূর্যোগ আসে আদর্শিক চেতনার ধারায় শুদ্ধতার সূর্য কিরণে সমস্ত গ্লানি আর প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর ভেঙে যায়। আছে ক্ষত, আছে ব্যথা। তারপরও স্বপ্ন ভাঙা দহন জ্বালার মর্মর বেদনায় জননী শেখ হাসিনার মর্ম বাণীর অমৃত শুধায় আবারও জাঁগতে চায় প্রকৃত আওয়ামী সেনারা। যাদেরকে অসুস্থ্যসহ নানা মিথ্যা কথা কেন্দ্রে বলে বলে পদ না দিয়ে ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা জানান, উপর থেকে নির্দেশনা থাকায় আমরা কাজ শুরু করেছি অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে। এরই মধ্যে শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে দুজনের বহিস্কার আদেশ সুপারিশ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে দলের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের বরাবর। তিনি বলেন আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো মানবতার জননী সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। আমি তাকে মানবতার জননী বলি এই কারনে যে তিনি কাজে কর্মে প্রমান করলেন ফরিদপুরের এই ঘটনায়।
জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নির্বাহী সদস্য তূখর নেতা বিপুল ঘোষ বলেন, জীবনের পুরো সময়টাই ব্যয় করেছি রাজনীতি করতে গিয়ে। এর জন্য ১৭ বার কারাজীবন ভোগ করতে হয়েছে। দলকে বিপদের দিনে সাজালাম প্রেক্ষাপট তৈরি করলাম আর নেতৃত্বে আসলো কারা সেটা সবাই জানে। আমি এই ফরিদপুরের মাটি ছেড়ে যাইনি এই কারনে যে দল একদিন তার ভুল বুঝতে পারবে এবং মূল্যায়ন করবে। আজ আমাদের প্রানের নেত্রী মানবতার জননী জেলার লুটেরা হাইব্রীড অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আমরা এই দিনটির জন্যই এতো দিন অপেক্ষায় ছিলাম। আমি এর জন্য আমাদের প্রানের নেত্রী মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে তেমনি ফরিদপুর আবার জেগে উঠবে মূল আওয়ামীলীগের গতি ধারায়। আর এই ক্ষেত্রে আমরা সকলে এক যোগে কাজ করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আর এই দায়িত্ব পালনে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
ফরিদপুর ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা কর্মিরা প্রাণের দাবি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ হোক অনুপ্রবেশকারী মুক্ত। আর আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে আসুক দীর্ঘদিনের প্রকৃত ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৩০:৫৬ ৯৮৯ বার পঠিত #আওয়ামীলীগ #জামাত #ফরিদপুর #বিএনপি