
বঙ্গ-নিউজ: অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই আমাদের দেশের অর্থে বিদেশে না যাক। এদেশের অর্থ এখানে অর্জন করে এখানে খরচ করতে হবে। আর যারা খরচ করতে চান না, এখান থেকে তারা একবারেই চলে যাক না।” শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বিদেশে টাকা পাচার নিয়ে এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। দেশের টাকা অবৈধভাবে যারা বিদেশে বিনিয়োগ করছেন, তাদের ধরতে বিদ্যমান আইনগুলোর ত্রুটি-বিচ্যুতি ঠিক করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
যারা দেশে টাকা না খাটিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠাচ্ছেন, তাদের একেবারে দেশ ছেড়েই চলে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করতে গিয়ে মুস্তফা কামাল তার বক্তৃতায় বলেন, দেশ থেকে আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং এবং ভুয়া বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এ ধরনের প্রবণতা রোধ করতে যে পরিমাণ অর্থ আন্ডার ইনভয়েসিং বা ওভার ইনভয়েসিং করে পাচার করা হয়েছে এবং যে পরিমাণ প্রদর্শিত বিনিয়োগ ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হবে, তার ওপর ৫০ শতাংশ হারে করারোপ করার প্রস্তাব করেন তিনি।
সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের একটি ব্যবসায়িক গ্রুপের সম্পদ ও বিনিয়োগের তথ্য সংবাদমাধ্যমে আসার কথা জানিয়ে ওই সাংবাদিক অর্থমন্ত্রীকে বলেন, ওই গ্রুপ বিদেশে বিনিয়োগ করার জন্য বৈধ কোনো অনুমতি নেয়নি বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী তখন বলেন, “যেটা আগে চলে গেছে… দুই-একটা জায়গায় মামলা হয়েছে, বেশিরভাগ জায়গায় মামলা হয়নি। পুরানোগুলো তদন্ত করে কিছু করা যায় কি না।
“আমার মনে হয় আইন পর্যালোচনা করা দরকার। আইনে যদি কোনো ক্রটি-বিচ্যুতি থাকে, সেটাকে…। কোনো আইনই নেই, টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। আমরা যদি অটোমেশন করতে পারি, যদি এটা করা যায়…।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ পাচার কমেছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “আগে পত্রিকা খুললেই দেখা যেত মাল আসেনি, কিন্তু টাকা চলে গেছে, এটা এখন অনেক কমেছে। গত দেড় বছরে অনেক কমেছে। অটোমেশনের মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বাকিটা আইনি প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে হবে।
যারা অপরাধ করবে তাদের চিহ্নিত করে আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা। আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার জন্য যদি আইন থাকে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব, আর যদি না থাকে আমরা প্রয়োজনীয় আইনগুলোকে আরো শক্তিশালী করে তৈরি করব। আমরা এই কথা দিতে পারি।”
বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ থেকে লভ্যাংশ তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। সেই অর্থ তাদের এখানে বিনিয়োগ করতে বলা হবে কি না- এই প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, বিদেশে লভ্যাংশ নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো ধরনের বাধা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। ট্যাক্স দিয়ে থাকলে বেতনের টাকা নেওয়া যায়। শুধু সম্পদ বিক্রি করতে হলে অনুমতি নিতে হয়।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “দেশিরা বিনোয়োগ করে ট্যাক্স দেওয়ার পর এটা তাদের টাকা। এটা তারা নতুন করে বিনিয়োগ করবে নাকি নিজেদের টাকা নিজেরা নিয়ে যাবে বা নিজেরা ব্যবহার করবে, এটা সম্পূর্ণ তাদের এখতিয়ার।
“ঠিক তেমনিভাবে বিদেশিরা যখন এদেশে বিনিয়োগ করে, বিনিয়োগ থেকে প্রফিট আর্ন করবে, ট্যাক্স দেবে, এরপর যে ইনকাম থাকে সেটা তাদের ইনকাম, এর উপরে সরকারের কোনো নিষেধ নাই। দেশি-বিদেশি সবাইকে সমানভাবে ট্রিমমেন্ট দেওয়া হয়।”
আসছে বছরের বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এই টাকা সরকার ব্যাংক থেকে নিলে ব্যাংকের সমস্যা হবে কি না, সেই প্রশ্নে করেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, “চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৭৪ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে, আরও কিছু নেওয়া হবে। সংশোধিত বাজেটে ৮২ হাজার কোটি টাকা ধরা আছে।
“আমার মনে হচ্ছে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না ব্যাংক ব্যবস্থায়। কারণ ব্যাংকে তারল্য পরিস্থিতি এখন খুবই ভালো। ৩০ এপ্রিল ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি হল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত আছে। তাছাড়া রিজার্ভ খুবই হেলদি। আমি মনে করি কোনো অসুবিধা হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
বাংলাদেশ সময়: ১০:১১:১৬ ৬২৬ বার পঠিত #বাজেট #মুস্তফা কামালের বাজেট #সঙ্কটের বাজেট করোনাকালীন বাজেট