জীবনসঙ্গী যাচাই-বাছাই করার পদ্ধতি

Home Page » বিনোদন » জীবনসঙ্গী যাচাই-বাছাই করার পদ্ধতি
বৃহস্পতিবার, ১১ জুন ২০২০



 মঞ্জুর চৌধুরী, ডালাস (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে

ফাইল ছবি

আমি যদি একজন ছেলে হই তাহলে আমাকে বিয়ে করতে হবে। প্রথমেই দরকার একজন পাত্রীর। তা পাত্রী কেমন হতে হবে? অবশ্যই ঐশ্বরিয়ার মতোন সুন্দরী, মাদার মেরির মতোন চরিত্রবান, আইরিন এডলারের মতন বুদ্ধিমতী, সর্ব কর্মে চৌকস, পশ্চিমা নারীদের মতোন স্মার্ট, দ্রৌপদীর চেয়েও ভালো রাঁধুনি ইত্যাদি হতে হবে। এদিকে আমি কিন্তু নিজে মঞ্জুর চৌধুরী, অতি সাধারণ একজন পুরুষ।

এখন ধরা যাক, আমি মেয়ে। তাহলে আমার পাত্র কেমন হতে হবে? অবশ্যই বিল গেটসের কাছাকাছি ধনী হতে হবে। ওমার বোরকান আল গালার মতোন গুড লুকিং হতে হবে।

যাঁরা ওমার বোরকান আল গালাকে চেনেন না, তাঁদের জ্ঞাতার্থে, ছেলেটি মিডল ইস্টার্ন মডেল। সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যাঁকে এক অনুষ্ঠান থেকে ডিপোর্ট করা হয়েছে শুধু এই অভিযোগে, সে মেয়েদের মাথা নষ্ট করে দেওয়ার মতোন সুন্দর।

কিংবা লেখাপড়ায় ড. হরদয়াল সিংয়ের মতোন ৩৫টা ডিগ্রি থাকতে হবে, বুদ্ধিতে নিউটন-আইনস্টাইনের উত্তরসূরি হতে হবে, অ্যাপস অবশ্যই এইট প্যাক হতে হবে (সিক্সপ্যাক এখন যে কেউ বানিয়ে ফেলছে), বুড়ো-হাবড়া হলে চলবে না। আবার কোম্পানির আপার মিড লেভেল থেকে টপ লেভেল এমপ্লয়ি হতে হবে। চরিত্র হতে হবে সেই পর্যায়ের। আমি কে? আমি মোসাম্মৎ জরিনা খাতুন।

সমস্যা হচ্ছে, এসব একসঙ্গে একমাত্র বলিউডি ও বাংলা সিনেমা ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না। আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই কোথাও না কোথাও ছাড় দিতেই হবে। আমরা কেউই পারফেক্ট নই। ইম্পারফেকশনের মধ্যেই আমাদের পারফেকশন। কথাটি মাথায় গেঁথে রাখুন।

দেখা যায় অতি রূপবান ছেলেদের হয়তো চরিত্রের দোষ আছে। অতি সুন্দরী নারীর জিহ্বায় সমস্যা আছে। মুখ দিয়ে যা বেরোয়, কলিজা খানখান করে দেয়।

অন্যদিকে, ঘরোয়া পরিবেশে বেড়ে ওঠা অতি সহজ সরল ও সাধারণ দর্শন মেয়েটি হয়তো যার জীবনে যাবে, তাকে ধন্য করে দেওয়ার যোগ্যতা রাখে।

লেখাপড়ায় অতি সাধারণ, চেহারায় অতি সাধারণ, স্কুল-কলেজের বন্ধুবান্ধবের টিটকারির শিকার, গরিব মধ্যবিত্ত পুরুষটি হয়তো তাঁর জীবনসঙ্গিনীর জন্য প্রাণ উজাড় করা ভালোবাসা জমা করে রেখেছেন।

কথা হচ্ছে, আমরা কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেব।

ডিল পরিষ্কার—আমি পারফেক্ট মেয়ে এই পৃথিবীতে খুঁজে পাব না। আমাকে কোথাও না কোথাও ছাড় দিতেই হবে। আমাকেই ঠিক করতে হবে আমি কোন গুণটা বেশি করে চাই। কোন দোষটা সামান্য পরিমাণে থাকলেও আমি ইগনোর করতে পারব। সেই অনুযায়ী আমাকে জীবনসঙ্গিনী বেছে নিতে হবে।

টিভিতে মডেলিং করে এমন একজনের রূপ-ফিগারে মুগ্ধ হয়ে উ-লা-লা বলতে বলতে আমি বিয়ে করলাম এবং তারপর আবিষ্কার করলাম তাঁর মডেলিং ক্যারিয়ারটা আমার পছন্দ না। বরং আমি চাই গৃহিণী টাইপ বধূ। তাহলে আমার গালে কষে একটা চড় আমি ডিজার্ভ করি।

দেশে হাজার হাজার, কোটি কোটি গৃহিণী মেয়ে ফেলে রেখে কেন একটা মডেলকে আমি বেছে নিলাম। তারপর জোর জবরদস্তি করে তাঁর মতের বিরুদ্ধে তাঁর ক্যারিয়ারের ওপর হস্তক্ষেপ করতে গেলাম?

ডিসক্লেইমার—যদি কেউ স্বেচ্ছায় পেশা পরিবর্তন করতে চান, তখন ওপরের যুক্তি খাটে না। আমার বউ সাবেক মডেল, এখন পুরোদস্তুর গৃহিণী এবং তার চেয়ে বড় কথা, সে সুখী, তাহলে কারও নাক গলানোর কিছু নেই। আজকের লেখা জোরজবরদস্তির বিরুদ্ধে, স্বেচ্ছা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নয়।

কথা প্রসঙ্গে বলে ফেলি, সেদিন বন্ধুদের মধ্যে সানি লিওনি নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমি তাঁর সাম্প্রতিক কিছু ইন্টারভিউতে মুগ্ধ হয়ে গেছি। মেয়েটির পারসোনালিটি দারুণ। অন্তত বলিউডের আইটেম গার্ল ও মেইন স্ট্রিম অনেক নায়িকার থেকে ভালো। সবচেয়ে ভালো যা লেগেছে তা হচ্ছে, কারওর নামে কোনো কুৎসা রটানোতে তিনি নেই। এই এক গুণই হাজার হাজার নারী থেকে তাঁকে কয়েক লাখ মাইল ওপরে নিয়ে এসেছে।

তিনি পূর্বজন্মে কী কর্ম করেছে, সেটা থেকে আমার মনে হয় এখন তিনি কী করছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। তিনি এখন আইটেম গানে নাচে। অন্তত পর্নো ছবিতো করছেন না। আশা করি তিনি ভালোর দিকে আরও এগিয়ে আসবেন। আমেরিকায় বহু পর্নো তারকা আছেন যাঁরা অ্যান্টি পর্নো কর্মী হিসেবে অ্যাকটিভ আছেন। অনেক অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে নিজেদের মূল্যবান বক্তব্য দিয়ে বেড়ান। তাঁরা তাঁদের অতীত জীবন পরিবর্তন করেছেন। আমরা আমাদের জাজমেন্টাল মেন্টালিটি না হয় পরিবর্তন করি?

প্রসঙ্গে ফেরা যাক।
অনেক মেয়েই সচ্ছল স্বামী চান। চান অফিসে উচ্চপদে কাজ করনেওয়ালা পতি। আবার একই সঙ্গে চান সেই স্বামী তারঁ সঙ্গে ম্যাক্সিমাম সময় কাটান। ঠিক পাঁচটায় বাড়ি ফিরে আসবেন, রাতে ডিনারে যাবেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

তাঁকে বলতে চাই, যে ছেলে অফিসে উচ্চপদে কাজ করেন, কিংবা ব্যবসায় ব্যস্ত থাকেন, তাঁর বাড়িতে ফিরতে প্রায়ই মধ্যরাত হয়ে যাবে। ভালোবেসে টাইম কাটানেওয়ালা স্বামী চাইলে সাধারণ চাকরিজীবীকে বিয়ে করুন। কোনটা প্রায়োরিটি?

এক ধরনের মেয়েদের দেখা যায় যাঁরা বিয়ের কয়েক দিন পর থেকেই যৌথ ফ্যামিলি থেকে স্বামীকে আলাদা করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। ‘আমার সঙ্গে সংসার করতে হলে তুমি তোমার মা-বাবা, ভাই-বোন কারোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবা না।’ ইত্যাদি।

তাঁকে বলতে চাই, এমন যদি চান, তাহলে এতিমখানা থেকেই কোনো ছেলেকে বিয়ে করুন না। শুধু শুধু মায়ের বুক থেকে ছেলে সরিয়ে নিজের ও অন্যের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করছেন কেন? জোর করে আপনি একটা ছেলেকে তাঁর মা-বাবা, ভাইবোন থেকে সরিয়ে আনছেন। আপনার কী ধারণা, এই ছেলে আপনাকে মন থেকে ভালোবাসতে পারবেন?

বিয়ের আগেই ঠিক করা উচিত ছেলে কি বিয়ের পরে মা-বাবার সঙ্গে থাকবেন, নাকি আলাদা। যদি ছেলে রাজি থাকেন, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। যদি রাজি না হন, অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করুন।

একই ভাবে ছেলেরও উচিত বিয়ের আগেই মেয়েকে পরিষ্কার করে বলা তিনি যৌথ পরিবারে থাকবেন কি না। যদি মেয়ে রাজি না হন, তাহলে কোনো রকম জোর জবরদস্তি করা যাবে না।

মা-বাবার থেকে আলাদা থাকলেই তিনি দোষী হয়ে যাবেন, এমন নিয়ম কোথায় পেয়েছেন? আমাদের দেশে অনেক মা-ই বিয়ের পরও ছেলের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে গিয়ে গিট্টু বাঁধিয়ে ফেলেন। একটু ঢিল দিন। আপনার ছেলে, আপনি তাঁকে পেটে ধরেছেন, নিতান্তই খুব খারাপ কিসিমের স্বভাব না থাকলে তিনি আপনার অসম্মান করবেন না। মাঝে দিয়ে আপনি এমন কিছু করে বসবেন, যার ফলে তাঁকে বিপদে ফেলে দেবেন। উদাহরণ দিই।

ছেলে অফিস থেকে বাসায় ফিরতে দেরি হচ্ছে, আপনি ছেলের বউকে দোষ দিচ্ছেন। ‘তোমার সঙ্গে বিয়ের আগে ও কখনো এত দেরি করে নাই।’

ছেলে হয়তো আপনার সঙ্গে সামান্য কথা-কাটাকাটি করেছে, আপনি ছেলের বউকে দোষ দিচ্ছেন, ‘তোমার সঙ্গে বিয়ের পরই আমার ছেলেটা একদম বেয়াদব হয়ে গেছে।’

কিংবা বউ সাধারণ কোনো ভুল করেছে, ‘মা-বাবা কিছু শিখিয়ে পাঠায়নি?’

এসব পরিস্থিতি অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে। বাধ্য করে ছেলেকে আলাদা হয়ে যেতে। কাজেই এসব মাথায় রাখুন। আপনি বড়, আপনি অ্যাডজাস্ট করুন, তাঁরাও অ্যাডজাস্ট করবেন।

বিয়ের আগেই ঠিক করা উচিত মেয়ে বাইরে চাকরি করবেন, নাকি গৃহিণী হবেন। অনেক ছেলেও হয়তো বাইরের চাকরি পছন্দ করেন না। তিনি বাড়িতে থাকতে চান। বউ যদি রাজি থাকেন, তাহলে তা তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যকার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। আমরা না হয় নাক না গলাই।

আগেও বলেছি, আবারও বলি, গৃহকর্ম মোটেও খারাপ কিছু নয়। নিজের সংসারের জন্য কাজ কেন ছোট হবে? আমাদের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, যিনি হার্ভার্ড থেকে এমবিএ করে এসেছেন এবং যাঁর বেতন বছরে হাফ মিলিয়ন ডলারের বেশি, তিনি নিজের বাচ্চাকে নিজের হাতে গোসল করান। ওই সময়ে অফিস থেকে কোনো জরুরি ই-মেইল বা ফোন টেক্সট পাঠালে তিনি অতিশয় বিরক্ত হন।

অনেক পুরুষ আবার ঘরের কাজ করলে মনে করেন জাত চলে যাবে। তুমি কোথাকার কোন লাটসাহেব এসে গেছ বাছা? আলগা ফুটানি আমাদের অঞ্চলের লোকজনের মধ্যেই দেখা যায়। বিদেশে নয়।

আবার আরেক দল মানুষও পাওয়া যায়। যারা বিয়ের সময়ে টাকাপয়সা কিচ্ছু দেখে না। শুধু ছেলে-মেয়ের চরিত্র বিবেচনায় আনে এবং বিয়ে করে ফেলে। সমস্যা কিন্তু এখানেও থেকে যায়। দুজন পারফেক্ট চরিত্রের অধিকারী স্বামী-স্ত্রীরও কিন্তু ডিভোর্স হওয়ার ঘটনা ঘটে। চরিত্র অবশ্যই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর, কিন্তু তার চেয়েও বেশি জরুরি পারস্পরিক সংগতি। একজন আরেকজনের জন্য উপযুক্ত কি না। ফ্যামিলি upbringing সমপর্যায়ের কি না।

ব্যাখ্যা করি
বাংলা সিনেমার উদাহরণ নেওয়া যাক। নায়িকা বিরাট ধনীর কন্যা। বাবার টাকাপয়সা ঐশ্বর্যে ডুবে ডুবে বড় হয়েছে। নায়ক একজন সৎ রিকশাওয়ালার ছেলে। যিনি চরিত্রবান। গরিবের বন্ধু।

টেকনিক্যালি এদের দুজনের বিয়েতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। না ধর্মে, না দেশের আইনে। বাস্তবে অবশ্যই সমস্যা হবে। বিয়ের পর মেয়ে বস্তিতে এসে কোনো অবস্থাতেই মানিয়ে নিতে পারবেন না। মাটির চুলায় নিজে রান্না করা, শেয়ার করা মোটামুটি উন্মুক্ত গোসলখানা, বদনা হাতে চাটাই দিয়ে ঘেরা কাঁচা পায়খানায় প্রাতঃকৃত্য সারতে যাওয়া, তাও আবার লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের টার্নের অপেক্ষা করা, ইম্পসিবল ব্যাপার! তা তাঁর স্বামী যত মহানায়কই হোন না কেন।

বিয়েশাদিতে একটু আপ-ডাউন হবেই। কিন্তু দুজনের সংগতি যতটা কাছাকাছি হবে, তত ভালো।

আরেকটা কথা, একজন আপু ক্যানভাসে শেয়ার করেছিলেন, আমি সেটা যোগ করছি, মেয়েদের মধ্যে আরেকটা বিষয় অত্যন্ত বিরক্তিকর। ‘আমি কি মা-বাপের টাকা খরচ করে অন্যের ছেলের জন্য ভাত রাঁধার জন্য বড় হয়েছি?’

ছেলেটার এখানে অবশ্যই বলার অধিকার আছে, ‘আমিও কি আমার মা-বাপের টাকা খরচ করে অন্যের মেয়ের জন্য খেটে মরার জন্য বড় হয়েছি?’

বিয়ে কোনো কমপিটিশন না। বিয়ে কম্পেনিয়নশিপ। আমি আমার জীবনসঙ্গিনীকে সাহায্য করব, তিনিও আমাকে সাহায্য করবেন। দুজন মিলে একটা সংসার গড়ে তুলব। প্রচুর ঝড়-তুফান আসবে। কিন্তু বুড়ো-বুড়ি হওয়ার পরে যখন পেছন ফিরে তাকাব, তখন নিজেদের মজবুত ইমারত দেখে নিজেরাই মুগ্ধ হব।

যে আপা ও ভাই কথায় কথায় নিজের স্বামী/স্ত্রীকে ছেড়ে চলে আসেন, বার্ধক্যে গিয়ে আবিষ্কার করেন কতটা একা তাঁরা। আফসোস করে ভাবেন, হয়তো সামান্য আলোচনাতেই সমস্যার সমাধান হওয়াটা সম্ভব ছিল। এইটা ফ্যাক্ট, বাস্তব উদাহরণ দিচ্ছি, আশপাশে খুঁজলেই দেখতে পাবেন।

আবারও বলি, আমাকেই আগে খুঁজে বের করতে হবে নিজের জীবনসঙ্গিনীর মধ্যে আমি কোন গুণটা সবচেয়ে বেশি কামনা করব এবং কোন দোষটা সবচেয়ে বেশি অপছন্দ। আমি যদি চরিত্রের ওপর প্রাধান্য দিই, তাহলে হয়তো চেহারায় ছাড় দিতে হবে। আবার দেখা যাবে আমি বিশ্ব সুন্দরী বিয়ে করে ফেলেছি, লোকজনকে দেখিয়ে বেড়াই আমার বউ কত সুন্দর। কিন্তু এদিকে সে যেকোনো পুরুষের সঙ্গেই একটু বেশিই ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়। আমাকে সেটাও মাথায় রাখতে হবে।

আপনি চান না আপনার বউ হিজাব পরুক। তাহলে নন হিজাবি মেয়েই বিয়ে করুন না। আপনি যদি তাকে সম্মান করতে শেখেন, তাহলে তার পোশাককে অবশ্যই সম্মান করতে শিখতে হবে। তিনি হিজাব পরুন কিংবা বিকিনি, আপনাকে সেই বিষয়টা আগে বিবেচনায় এনে তারপরে বিয়ে করতে হবে। তবে হ্যাঁ, ভালগারিটি যদি সমস্যার কারণ হয়ে থাকে, তাহলে দুজনে বসে আলোচনা করুন, সমাধানের মধ্যপথ খুঁজুন। তাঁরও উচিত আপনার পছন্দ-অপছন্দকে সম্মান করা। আপনি যদি সঠিক হয়ে থাকেন এবং তার পরও তিনি জেদ ধরে বেঠিক কর্ম করতে থাকেন, তাহলে সমস্যা তাঁর, আপনার না।

এক নারীকে চিনতাম, বিয়ের আগে খুবই ভদ্র ছিলেন। বিয়ের পরে বাচ্চা হওয়ার পরও সব ভালো ছিল। হঠাৎ করেই তাঁর মাথায় যেন জিনের আসর হলো, শরীরের জামা-কাপড় খুলতে শুরু করলেন। এমনই খুললেন যে তাঁর স্বামী বেচারা কিছুতেই নিজের বউকে নিয়ে বাইরে বেরোবার সাহস করতেন না। আল্টিমেটলি তাঁদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। সেই নারী এখন মহা সুখে জামা-কাপড় ছাড়াই ঘুরে বেড়ান। স্বামীও একা হয়ে সুখী আছেন। এখন যিনি যাঁর মতোন জীবন সঙ্গী/নী খুঁজে নেবেন। আমরা বাঙালিরা তাঁদের নিয়ে আলোচনা না করলেই বরং তাঁরা সুখী হবেন।

আপাদের বলছি, বিয়ের আগেই ঠিক করুন কেমন স্বামী আপনার পছন্দ। অতি ভদ্র ছেলে বিয়ে করেছেন, এদিকে রাস্তায় বখাটে ছেলে আপনাকে টিটকারি করেছে এবং তিনি কেন গিয়ে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন না, এই অভিযোগে আপনি তাঁর ওপর রাগ করতে পারবেন না। ভদ্রদের সমস্যা হচ্ছে, তাঁরা একটু ভিতুও হয়। যদি মারপিট করনেওয়ালা স্বামী চান, তাহলে ধরে নিতে হবে তাঁর মুখের ভাষা খারাপ হবে। মাথায় রাখতে হবে, এই স্বামী নিয়ে আপনার (ভদ্র) পারিবারিক সার্কেলে মেলামেশা করতে আপনি কতখানি কমফোর্টেবল থাকবেন।

মোট কথা, বিয়ের আগে কথাবার্তা বলে যাচাই-বাছাই করে নিন কে কার জন্য কতখানি যোগ্য। জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত এটি। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। ‘মনকে ফলো করো, কারণ তোমার মন তোমাকে ভুল করতে দেবে না’ বলিউডের (বিশেষ করে শাহরুখ খানের) এই সব বুলশিট ডায়ালগে বিশ্বাস করবেন না। মন সব সময়েই ভুল পথেই যেতে বলবে, মস্তিষ্ক বলবে কোনটা সঠিক, কোনটা বেঠিক। মন বলবে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে, মস্তিষ্ক বলবে, এর ফল হবে অত্যন্ত খারাপ।

এখনকার জেনারেশন আবার ‘টাইমপাস’ সম্পর্কে বিশ্বাসী। কেউই সিরিয়াস না। ফেসবুকে পরিচয়, ইনবক্সে মেসেজিং, ফোনে টেক্সটিং ও তারপর উল্টাপাল্টা কোনো কর্ম সম্পাদন এবং তারপর কেলেঙ্কারি ইত্যাদি ইত্যাদি।

কেন নিজেকে এতটা সস্তা বানানো যে অন্যের টাইমপাসের আইটেম হবেন আপনি? নিজের আত্মসম্মান কি নেই? ওই সব ফালতু ‘হাই’, ‘হ্যালো’, ভাব ভালোবাসা ফেসবুক পোস্টে লাইক ও কমেন্ট কি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ? নিজের মেরুদণ্ড কবে শক্ত করতে শিখবেন? একবার নিজের আত্মসম্মান ধরে রাখার চেষ্টা করুন। জীবনের ৯০ ভাগ ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবেন।

নিজেকে বোঝান যে আপনি এতটা সস্তা নন যে কেউ একজন এসে আপনার সঙ্গে টাইমপাসের সম্পর্ক পাতিয়ে ফেলতে পারবে। একটা জিনিস মনে রাখবেন, সমাজে সম্মান কামাতে একটা জীবন চলে যায়। মানুষের চোখে নেমে যেতে কেবল একটা অ্যাকসিডেন্টই যথেষ্ট। কিছু করার আগে ভাবুন, নিজেকে নিয়ে ভাবুন, নিজের মা-বাবা, ভাইবোন, ছেলেমেয়ে পরিবারের কথা মাথায় রাখুন, একবার কল্পনা করুন, আপনার অপকর্মের খবর ওদের কাছে ফাঁস হলে কেমন হবে সিচুয়েশন। তারপরে সিদ্ধান্ত নিন কী করবেন।

সূত্রঃপ্রথম আলো

বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪০:৫৩   ২০৮৮ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

বিনোদন’র আরও খবর


১৬ ব্যান্ডের সবচেয়ে বড় কনসার্ট আজ আর্মি স্টেডিয়ামে
এবার হিন্দি সিনেমার নায়িকা বাংলাদেশের জয়া আহসান
আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস, —”পুরুষ ও ছেলেদের সাহায্য করো”
শুভ জন্মদিন সুরের পাখী রুনা লায়লা
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে সানি লিওনের ছবি!
রক্তাক্ত অমিতাভ বচ্চন হাসপাতালে
চঞ্চল,মেহজাবীন, তিশা, ফারিণ,পলাশ, শাহনাজ খুশি -সবাই গেলেন আমেরিকায়
দুই না তিন পুত্র সন্তানের বাবা শাকিব খান! সূত্রঃ জনকন্ঠ
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
বুবলীর সন্তানের বাবা শাকিব খান, বয়স আড়াই বছর

আর্কাইভ