বঙ্গ-নিউজ: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। মুত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলছে। শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। দু বেলা দুমুঠো খবারের নিশ্চয়তা নেই অনেকের। কর্ম হারিয়ে লাখো শ্রমিক বিদেশ থেকে চলে এসেছে। এমনি এক নজিরবিহীন মহামারীর বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে অনিশ্চিত এক আগামীর জন্য বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী জনাব আ হ ম মুস্তফা কামাল। সরকারকে অর্থনীতির ধস ঠেকানোর কথা ভাবতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে করতে হচ্ছে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চিন্তা।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ‘সমৃদ্ধ আগামীতে’ পৌঁছানের লক্ষ্য স্থির করে যে পথযাত্রা বাংলাদেশ শুরু করেছিল, এক ভাইরাসের প্রবল ত্রাসে তা থমকে গেছে।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে ভাবতে হচ্ছে আগের উন্নয়ন দর্শনের বাজেটের চেয়ে ভিন্নভাবে। এখন তার প্রধান লক্ষ্য অর্থনীতির ক্ষত সারিয়ে তোলা।
বছরের ব্যয়ের ফর্দ সাজাতে গিয়ে তাকে মাথায় রাখতে হচ্ছে- স্বাস্থ্য খাত যেন মহামারী সামাল দেওয়ার সক্ষমতা পায়, উৎপাদন যেখানে বড় ধাক্কা খেয়েছে, সেখানে কৃষক যেন অন্তত ফসল ফলাতে পারে; ষোল কোটি মানুষের এই দেশে খাদ্য সঙ্কট যেন না হয়; হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষকে যেন সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া যায়, বেকারত্ব যেন সমাজকে নতুন সঙ্কটের পথে নিয়ে না যেতে পারে।
এসব দিক সামাল দিয়ে আগামী এক বছরে সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল মোটামুটি পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা খরচের একটি পরিকল্পনা বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন, যা আকারে গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি।
এই দুর্যোগের মধ্যে বিদায়ী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি যে ৮ দশমিক ২ শতাংশের লক্ষ্যের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারবে না, সে বিষয়ে মোটামুটি একমত দেশি-বিদেশি অর্থনীতিবিদরা।
তবে অর্থমন্ত্রী তার আশাবাদে লাগাম দিতে রাজি নন, এবারও তিনি আগের বারের মত ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরে নতুন অর্থবছর শুরু করতে চাইছেন বলে আভাস মিলেছে।
তিনি বলেন, এক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সবাই। কোভিড-১৯ গোটা বিশ্বকে ওলোটপালট করে দিয়েছে। বাংলাদেশও গভীর সঙ্কটে পড়েছে।
“এই সঙ্কট মোকাবেলা করা বিরাট চ্যালেঞ্জ। আর সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করাই হবে এবারের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য।”
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেখানে প্রতিদিন বাড়ছে, তিন মাস ধরে অচল হয়ে থাকা অর্থনীতিকে সচল করার চেষ্টা যেখানে কোনো স্পষ্ট আকার এখনও পায়নি, সেখানে সরকার কীভাবে এই ‘কঠিন চ্যালেঞ্জ’ মোকাবেলা করার কথা ভাবছে?
মুস্তফা কামাল বলছেন, “বাজেটের আকার বড় কথা নয়; আসল কথা হচ্ছে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা করা; সংকটে নিমজ্জিত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা। তার যথাযথ প্রতিফলনই থাকবে বাজেটে।”
জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদে প্রবেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে এবারের পরিস্থিতি থাকবে ভিন্ন।জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদে প্রবেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে এবারের পরিস্থিতি থাকবে ভিন্ন। অর্থমন্ত্রী আভাস দিয়েছেন, তার নতুন বাজেটের আকার থাকবে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে।
তবে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার যে খসড়া এবার তৈরি করা হয়েছে, সেখানে নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। মহামারীর সঙ্কটে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে সেই বাজেটের গতিপথ আর লাইনে থাকেনি। সংশোধনে তা ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে।
মুস্তফা কামালের দেওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ছিল আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৮ শতাংশ বেশি। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দেওয়া বাজেটের আকার ছিল তার আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ২৫ শতাংশ বেশি।
অর্থাৎ, উন্নয়নের জন্য ব্যয় বাড়িয়ে উচ্চাভিলাষী বাজেট দেওয়ার পথে এবার যেতে পারছেন না অর্থমন্ত্রী। তবে মহামারীর মধ্যে আয়ের উৎস যেভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে, তাতে ওই খরচ মেটানোর টাকা যোগাড় করাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
বাজেটের অংক মেলাতে গিয়ে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা, যা হবে মোট বাজেটের ৫৮ শতাংশের মত।
এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হচ্ছে ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে সম্ভাব্য বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান পরিশোধযোগ্য নয় বলে একে সরকারের আয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
অনুদানসহ হিসাব করলে মুস্তফা কামালের এই পরিকল্পনায় আয় ও ব্যয়ের ঘাটতি থাকবে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হবে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। ঘাটতির এই পরিমাণ আগের যে কোনো বছরের তুলনায় বেশি।
মহামারীর মধ্যে গত তিন মাস ধরেই ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্থবির, শিল্প উৎপাদনও গতিহারা। আমদানি-রপ্তানি নেমে এসেছে তলানিতে। এ সঙ্কট দীর্ঘ হলে ক্ষতির মাত্রাও বাড়বে। ফলে রাজস্ব আহরণের ওই লক্ষ্য যৌক্তিক হচ্ছে কি না তা নিয়ে সন্দিহান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর ধাক্কার মধ্যে চলতি অর্থবছরে ২ লাখ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মত রাজস্ব আদায় হতে পারে, যেখানে লক্ষ্য ছিল ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা।
“কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না। তাহলে নতুন বাজেটের ৫০/৫৫ শতাংশের বেশি রাজস্ব আসবে কোথা থেকে? মানুষের আয়-উপার্জন যদি না থাকে, ব্যবসা-বাণিজ্য যদি পুরোদমে চালু না হয়, তাহলে ট্যাক্স দেবে কে?”
যে ঘাটতি রেখে সরকার নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ণ করেছে, তা পূরণ করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ করে।
সেজন্য অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা এবং বিদেশ থেকে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা ঋণ করার পরিকল্পানা ধরা হচ্ছে নতুন বাজেটে।
অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হতে পারে এবার।
চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। আর চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।
করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাসের লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। কোভিড-১৯ সংকটের এই সময়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালও স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতকে ‘সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব’ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ‘এক ইঞ্চি আবাদি জমিও অনাবাদী থাকবে না’ ঘোষণার বাস্তব প্রতিফলন পাওয়া যাবে এবারের বাজেটে। কৃষি হবে শতভাগ যান্ত্রিক কৃষি। অনেক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হবে কৃষি খাতে। আর এজন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হবে।”
তিনি বলছেন, মহামারী থেকে ‘শিক্ষা নিয়ে’ স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানো হবে। সেজন্য এ খাতের বরাদ্দ বাড়নোসহ ‘বেশ কিছু পদক্ষেপের’ ঘোষণা থাকবে বাজেটে।
করোনাভাইরাসের কারণে সবেচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ। প্রায় তিন কোটি মানুষের রুটি-রুজিতে আঘাত হেনেছে এই মহামারী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “সংকটের এই সময়ে গরীব মানুষকে খাবার দিতে হবে। যে করেই হোক দিতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। নতুন বাজেটেও অব্যাহত থাকবে। সে জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর পাশপাশি বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বাজেট বক্তৃতার খসড়ায় দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য খাতে এবার বরাদ্দ হতে পারে ২৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় ২৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।
কৃষি খাতে বরাদ্দ হতে পারে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকার মত, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের প্রায় ১১ শতাংশের মত বেশি।
আর সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে এবার বরাদ্দ হতে পারে ৩২ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের চেয়ে সোয়া ৩ দশমিক ৪ শতাংশের মত বেশি।
ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে লকডাউনের প্রথম দেড় মাসে কৃষকের ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
এই ক্ষতি পোাষাতে আগামীতে কৃষি খাতের ভর্তুকির পরিমাণও বাড়বে। নতুন বাজেটে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা কৃষি ভর্তুকি রাখা হতে পারে। আর অন্যান্য খাতে ভর্তুকি মিলে থাকতে পারে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে নতুন অর্থবছরে সরকারের পরিচালন ব্যয়ে লাগাম দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।
সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বন্ধ রাখা, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সভা সেমিনার হ্রাস, মুদ্রণ কাজ কমিয়ে আনার নির্দেশ সব মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে।
এরপরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবর্তক ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এ আবর্তক ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে যাবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ শোধে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা।
এছাড়া সম্পদ সংগ্রহ, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্তকাজ, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগসহ মূলধনী ব্যয় হবে ৩৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণ ও অগ্রিম বাবদ ব্যয় ৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা এবং খাদ্য হিসেবে ব্যয় হবে ৫৬৭ কোটি টাকা।
গত কয়েক বছরে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে উন্নয়ন খাতকে। এর মধ্যে কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে করোনাভাইরাসের কারণে।
ফলে নতুন অর্থবছরে উন্নয়ন বরাদ্দের পরিমাণ খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। সব মিলে নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
আর এডিবি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।
যা ছিল, যা হচ্ছে
২০১৯-২০ (মূল বাজেট),২০২০-২১ (প্রস্তারিত),মোট ব্যয়-৫,২৩,১৯০ কোটি টাকা,৫,৬৮,০০০ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-২,০২,৭২১ কোটি টাকা
২,০৫,১৪৫ কোটি টাকা
মোট আয়
৩৭,৭৮১০ কোটি টাকা। ৩,৮২,০১৬ কোটি টাকা। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর-৩২,৫৬০০ কোটি টাকা, ৩,৩০,০০০ কোটি টাকা,এনবিআর বহির্ভূত কর
১৪,৫০০ কোটি টাকা, ১৫,০০০ কোটি টাকা ,কর বহির্ভূত রাজস্ব, ৩৭,৭১০ কোটি টাকা, ৩৩,০০৩ কোটি টাকা।
ঘাটতি
১৪৫৩৮০ কোটি টাকা। ১,৮৯,৯৯৭ কোটি টাকা ,ঘাটতি পূরণে বিদেশি ঋণ ,৬৩,৮৪৮ কোটি টাকা ,৭৬,০০৪ কোটি টাকা ,অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ
৭৭,৩৬৩ কোটি টাকা, ১,০৯,৯৮০ কোটি টাকা, ব্যাংক থেকে ঋণ, ৪৭,৩৬৪ কোটি টাকা ,৮৪,৯৮০ কোটি টাকা ,সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ২৭০০০ কোটি টাকা
২০,০০০ কোটি টাকা।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা বাংলাদেশ চলতি অর্থ বছরের জন্য ৮ দশকি ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল। কিন্তু মহামারীর মধ্যে দুই মাসের লকডাউন আর বিশ্ব বাজারের স্থবির দশার মধ্যে তা বড় ধাক্কা খেয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রতি বার নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাব কষে জিডিপির প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য তথ্য প্রকাশ করে। এবার তা করেনি।
বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে; আর আগামী বছরে তা হতে পারে ১ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশ এ বছর ৩ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। আর আগামী বছর তা ৫.৬ শতাংশ হতে পারে।
কঠিন এই পরিস্থিতিতেও অর্থমন্ত্রী নতুন বাজেটে বড় প্রবৃদ্ধির আশা দেখাতে যাচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
বাজেট বক্তৃতার খসড়া ঠিক থাকলে আগামী অর্থবছরেও তিনি ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের হিসাব কষছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতেও এক ধরনের সুফল পাওয়া যাবে বলে সরকার আশা করছে। সেজন্য নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে আটকে রাখার পরিকল্পনা ধরা হচ্ছে।
চলতি বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ছিল। মে মাস শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।
মহামারীর উৎকণ্ঠার মধ্যে এবার নিজের দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশের ৪৯তম বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার বিকালে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়ে গেছে, বৃহস্পতিবার বিকালে অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট উপস্থাপন শুরু করবেন। এবার বাজেট অধিবেশন হবে খুবই সংক্ষিপ্ত।
অধিবেশনে সংসদ সদস্য ও সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসা সীমিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র যাদের প্রয়োজন হবে তারাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসবেন। মাত্র ১০/১২ কার্যদিবস চলতে পারে বাজেট অধিবেশন।
প্রতিবছর বাজেট অধিবেশনকে ঘিরে সংসদে সাজ সাজ রব থাকলেও এবার তা নেই। বরং সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরাই আতঙ্কে আছেন। এরই মধ্যে সংসদে কর্মরত ৪৩ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
সংসদ সদস্যদের আসাও সীমিত করা হয়েছে। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন সংসদ সদস্যকে নিয়ে অধিবেশন চলবে। বয়স্ক সংসদ সদস্যদের সংসদে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অধিবেশন কক্ষে সদস্যদের বসার ক্ষেত্রেও সামাজিক দূরত্বের নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা হয়েছে।
প্রতিবছর বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সংসদে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এবার তাও হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৪:৪৮ ৭৩৬ বার পঠিত #বাজেট #মুস্তফা কামালের বাজেট #সঙ্কটের বাজেট করোনাকালীন বাজেট