বঙ্গ-নিউনঃ নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার ৬৬ দিন পর আজ ৩১ মে, রবিবার থেকে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হচ্ছে। নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘সীমিত পরিসরে’ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলে সরকারি নির্দেশনায় জানানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আজ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত গণপরিবহন ও কলকারখানা ‘সীমিত পরিসরে’ চালু থাকবে। তবে এসময় বন্ধই থাকবে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
একই সঙ্গে ‘সীমিত পরিসরে’ স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ ও ট্রেন বা গণপরিবহনও চালু হচ্ছে। তবে দূরপাল্লার বাস ও ৪টি অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান চলাচল শুরু হবে আগামীকাল ১ জুন, সোমবার থেকে।
আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত অফিস, গণপরিবহনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হবে এবং কোন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গত ২৮ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘গত ২৩ মার্চ জারি করা নিষেধাজ্ঞাই বহাল থাকছে। তবে এ নিষেধাজ্ঞা থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও গণপরিবহনকে বের করে আনা হয়েছে। এ সময়ে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধিনিষেধ নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে।’
তবে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে আরো বলা হয়, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী ও সন্তানসম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। জরুরি অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্র ছাড়া সব সভা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আয়োজন করতে হবে।’
এদিকে অফিস খোলার পর করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১৮টি নির্দেশনা মানতে হবে। গতকাল ৩০ মে, শনিবার এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এসব কারিগরি নির্দেশনা জানানো হয়।
তথ্যবিবরণীতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র ‘কোভিড-১৯ এর সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কারিগরি নির্দেশনা’ প্রণয়ন করেছে। এই নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জন্য করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠানে পালনীয় কারিগরি নির্দেশনাসমূহ নিম্নরূপ-
১. কাজ আবার শুরু করার আগে মাস্ক, তরল হ্যান্ডসোপ, জীবাণুনাশক, স্পর্শবিহীন থার্মোমিটার এবং অন্যান্য মহামারী প্রতিরোধক জিনিসপত্র সরবরাহ করতে হবে এবং একটা জরুরি কর্মপরিকল্পনা রাখতে হবে এবং তার জবাবদিহিতা বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. প্রতিদিন কাজের আগে এবং পরে কর্মীদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করুন। যাদের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেবে তাদের স্ক্রিনিংয়ের জন্য সময়মতো চিকিৎসা করানো উচিত।
৩. ইউনিটের স্টাফ এবং বাইরে থেকে যারা আসবে তাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপতে হবে। যাদের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে না তাদের ইউনিটে ঢুকতে দেয়া যাবে না।
৪. অফিস, ক্যান্টিন এবং টয়লেটে ভেন্টিশেলন সুবিধা বাড়াতে হবে। সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এয়ার কন্ডিশনারের স্বাভাবিক ক্রিয়াকে নিশ্চিত করুন, বিশুদ্ধ বাতাস বৃদ্ধি করুন এবং সকল এয়ার সিস্টেমের ফিরে আসা বাতাসকে বন্ধ রাখুন।
৫. ক্যান্টিন, ডরমিটরি, টয়লেটসহ অন্যান্য জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে ও জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৭. কাগজবিহীন এবং সংস্পর্শবিহীন অফিস ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে হবে।
৮. ব্যক্তিগত মেলামেশা বা একত্র হওয়া কমাতে হবে এবং একত্র হতে হয় এমন কাজ যেমন মিটিং, ট্রেনিং এসব কাজ সীমিত করে ফেলতে হবে।
৯. অফিস, ক্যান্টিন, টয়লেটে হাত ধোয়ার জন্য সাবান অথবা জীবাণুনাশক সরবরাহ করতে হবে, যদি হাত ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. কর্মচারীরা একে অপরের সংস্পর্শে আসার আগে মাস্ক পরবে। যখন হাঁচি অথবা কাশি দেবে তখন মুখ এবং নাক, কনুই অথবা টিস্যু দিয়ে ঢেকে নেবে। ব্যবহৃত টিস্যু ঢেকে ডাস্টবিনে ফেলবে। হাঁচি-কাশি শেষে তরল হ্যান্ড সোপ দিয়ে হাত ধুতে হবে।
১১. পোস্টার, সচেতনতামূলক ভিডিও এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
১২. জরুরি পৃথকীকরণ এলাকা স্থাপন করুন। যখন কেউ সন্দেহভাজন হবে, সময়মতো জরুরি স্থানে তাদের সাময়িকভাবে কোয়ারেন্টাইনে প্রেরণ করা এবং তাদের চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করুন।
১৩. যদি কোনো এলাকায় একটা কোভিড-১৯ কেস পজিটিভ হয় তাহলে ওই এলাকার এয়ার কন্ডিশন সিডিসির গাইডলাইন অনুযায়ী জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং কাজ পুনরায় শুরু করা যাবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যগত পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা বা হাইজেনিক নিশ্চিত করা যাবে।
১৪. নমনীয় কর্মঘণ্টা ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে হবে।
১৫. মানসিক এবং মনোসামাজিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
১৬. মোটিভেশনাল কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের আশ্বস্ত ও চাঙ্গা রাখতে হবে।
১৭. কর্মচারীদের কেউ অসুস্থবোধ করলে বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তার ও তার পরিবারের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে তাকে সরকারি বিধি মোতাবেক যথাসাধ্য সহায়তা দিতে হবে।
১৮. ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিতদের বীমা বা প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
দেশজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে এর সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথমবারের মতো ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণা করে সরকার। এরপর সাত দফায় বাড়ানো হয় এই ‘সাধারণ ছুটি’ । এর মধ্যে রমজানের এক মাস রোজা শেষে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এই ‘সাধারণ ছুটি’ অবশেষে গতকাল ৩০ মে শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৭:৪৬ ৬৭৬ বার পঠিত # #খুলছে অফিস #নভেল করোনাভাইরাস #সাধারণ ছুটি শেষ