বঙ্গ-নিউজ:করোনা সংক্রমণের আশংকা। তাই ভার্চুয়াল কোর্টে বিচার ব্যাবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উচ্ছ আদালত। কয়েকটি রায়ও হয়েছিল এই পদ্ধতিতে। এখন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সীমিত পরিসরে যান বাহন ও অফিস চলবে। এরই প্রেক্ষিতে উচ্ছ আদালতও কোর্ট খোলার পক্ষেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার। এমন পরিস্থিতিতে রবিবার থেকে খুলছে সরকারি অফিস, চলবে গণপরিবহনও। তবে তা স্বল্প পরিসরে। ওইদিন থেকে দেশের আদালতসমূহে স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম চালু করা হবে কিনা সেই বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি সুপ্রিম কোর্ট।
তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভা থেকে শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
এদিকে করোনাকালে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণকে সুরক্ষা দিতে চালু করা হয়েছে ভার্চুয়াল কোর্ট। গত ১০ কার্যদিবসে দেশের অধস্তন আদালতসমূহে পরিচালিত ভার্চুয়াল কোর্টগুলো হতে জামিন পেয়েছেন ২০ হাজার ৯৩৮ জন আসামি। জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, শিশু আদালত ও বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালে জামিনের জন্য ৩৩ হাজার ২৮৭টি জামিন আবেদন দাখিল করেন আইনজীবীরা। এইসব আবেদনের বিপরীতে ২১ হাজার আসামিকে জামিন দেয় আদালত। আর খারিজ করা হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার জামিন আবেদন। আর এ সময়ে শিশু আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন ২৮৭ শিশু। এরা দেশের বিভিন্ন শিশু ও কিশোর সংশোধনাগারে বন্দি ছিলো।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধস্তন আদালতের ভার্চুয়াল কোর্টে শুধু জামিন শুনানি হচ্ছে। কিন্তু মামলার অন্যান্য বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না। ফলে মামলা জটসহ বিভিন্ন জটিলতা নিরসনে সুপ্রিম কোর্টকে এখনই যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা ল’ রিপোর্ট (ডিএলআর) এর সম্পাদক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি অফিস খুলবে রবিবার। আগেই খুলেছে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। শুধু আমাদের দেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউন তুলে নিয়ে অফিস আদালত খুলে দিচ্ছে। সেখানে আমাদের সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালত দ্রুত খুলে দেওয়া উচিত। কারণ আদালতের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ঠিক হবে না। কোর্ট পরিচালনার সময় স্বাস্থ্য বিধি ও সরকারি নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে সবাইকে অনুসরণ করতে হবে।
তবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন বলেন, স্বাভাবিক না ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থায় কোর্ট পরিচালিত হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের। আমি মনে করি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই আইনজীবী সমিতি মেনে নেবে।
গত ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পায় আইইডিসিআর। গত আড়াই মাসে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী জনগণ যাতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত না হয় সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে বিচার কাজ পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে আপত্তি জানান একদল আইনজীবী। পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ভার্চুয়াল কোর্টে বিচার কাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই এ সংক্রান্ত কোর্ট পরিচালনা করতে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করেন। ওই অধ্যাদেশ জারির পর গত ১১ মে থেকে সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিচার কাজ চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৩৪:৪৩ ৫৮৫ বার পঠিত #আইন-আদালত #কোর্ট #বিচার বিভাগ #স্বভাবিক কোর্ট চলা