বঙ্গ-নিউজ: নির্দেশনা মেনেই বায়তুল মোকাররমে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হলো। নিরাপদ দূরত্ব এবং করোনা ভাইরাস পরিস্থিতর জন্য অন্যান্য নির্দেশনা মেনে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল ৭টায় এই জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম জামাত শেষ হলে দ্বিতীয় জামাত শুরু হয় সকাল ৮টায়। সকাল ৯টায়, সকাল ১০টায় এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে পর্যায়ক্রমে আরও তিনটি জামাতের আয়োজন রয়েছে এ মসজিদে।
মহামারীর মধ্যে এবার ঈদগাহ বা খোলা ময়দানে ঈদের জামাত করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ঈদের নামাজ মসজিদে মসজিদেই হচ্ছে।
শারীরিক দূরত্ব রেখে কাতার করতে হয়েছে বলে ভেতরে জায়গা না পেয়ে মসজিদের বাইরের প্রাঙ্গণে, রাস্তায়, খোলা জায়গাতেও অনেককে নামাজে দাঁড়াতে দেখা গেছে।
করোনাভাইরাস অতি সংক্রামক বলে এবার বেশ কিছু বিধিনিষেধ মেনে নামাজ পড়তে হয়েছে সবাইকে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নুরুল ইসলাম বলেন, “যারা মসজিদের আসছেন, তাদের প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করতে হচ্ছে। সবাইকে বলা হয়েছে বাসা থেকে ওজু করে মাস্ক পরে মসজিদে যেতে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসা বাধ্যতামূলক।”
নামাজ শেষে কোলাকুলি বা হাত মেলানোতেও এবার নিষেধ ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ তা মেনে চললেও দুই-একটি ব্যতিক্রমও দেখা গেছে।
ঈদ জামায়াতে শিশু ও বৃদ্ধদের অংশ না নিতে বলা হলেও দেখা গেছে অনেকে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের নামাজে প্রবীনদেরকও বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে দেখা গেছে।
প্রথম জামাতে যোগ দিতে সকাল সাড়ে ৬টা থেকেই বায়তুল মোকাররমে আসতে শুরু করে মানুষ। নিয়ম মাফিক মাঝে দূরত্ব রেখে তারা বসেন।
মাইকে বার বার অনুরোধ জানানো হয়েছে যাতে সবাই দূরত্ব বজায় রেখে বসেন। মসজিদের ভেতরে তা মেনে চলেছেন প্রায় সবাই। তবে মসজিদের বারান্দা ও সিঁড়িতে কোথাও কোথাও ভিড় হয়েছে। নামাজ শেষে গেইটেও বের হওয়ার জন্য কিছুটা হুড়াহুড়ি দেখা গেছে।
সকাল ৭টার প্রথম জামাতের খুতবা পাঠের সময় বায়তুল মোকাররমের দুই গেইটের বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন দ্বিতীয় জামাতে যোগ দিতে আসা মানুষ।
মেরুল বাড্ডা ডিআইটি প্রোজেক্ট মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের প্রথম জামাত হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই সবাইকে জমাতে অংশ নিতে দেখা যায়।
তিন তলা মসজিদের পুরোটা ভরে গেলে মসজিদের সামনের মাঠটিতে কাতারে দাঁড়ায় মানুষ। নামাজ শেষে কাউকে কোলাকুলি করতে দেখা যায়নি।
মিরপুর রূপনগর আবাসিক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং সাড়ে ৮টায় দুটি জামাতে এক হাজারের বেশি মানুষ নামাজ পড়েন।
নামাজ শেষে করোনাভাইরাস থেকে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষকে বাঁচাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়।
মসজিদের ভেতরে সবাইকে দূরত্ব বজায় রেখেই বসতে দেখা যায়। নামাজ শেষে কোলাকুলি বা হাত মেলানোর সেই চেনা দৃশ্য ছিল না।
আবহাওয়া ভালো থাকলে এমনিতে দেশে ঈদের প্রধান জামাতটি হয় ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সেই জামাতে নামাজ পড়েন ঈদের সকালে। এবার তা হয়নি।
প্রতিবছর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের আয়োজন হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় খোলা মাঠে ঈদ জামাত আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় শোলাকিয়া ময়দানেও এবার ঈদ জামাতের আয়োজন নেই।
অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে আসা ঈদের আগের দিন করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে কেড়ে নিয়েছে ২৮ জনের প্রাণ। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে মোট ৩৩ হাজার ৬১০ জনকে।
প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। মুকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেয কারী কাজী মাসুদুর রহমান। জামাত শেষে খুতবা পেশ করা হয়। এর পর অনুষ্ঠিত হয় দোয়া ও মোনাজাত। মোনাজাতে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করা হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও নিহতদের জন্য দোয়া করা হয়েছে। এছাড়া মোনাজাতে সব উম্মতে মোহাম্মদির গুনাহ মাফ চাওয়া হয়েছে। সব মৃত ব্যক্তির কবরের আজাব মাফ চাওয়া হয়েছে। যেকোনও বিপদ থেকে দেশকে হেফাজতের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাত, জামাত শেষে কোলাকুলি ও হাত মেলাতে মানা থাকায় সেগুলো মেনেই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লীরা। নামাজ শেষে কাউকেই দেখা যায়নি হাত মেলানো বা কোলাকুলি করতে। ফলে অনেকই একটু কষ্ট মনে নিয়েই ফিরেছেন ঘরে।
মুসল্লিরা জানিয়েছেন, ঈদের নামাজের পর প্রধান আনন্দ কোলাকুলিতেই। তবে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এবার তারা বিরত থাকছেন সেসব থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩২:৫২ ৪৮৪ বার পঠিত #ইদুল ফেতর #ঈদ জামাত #ঈদুল ফেতর জামাত #প্রধান জামাত