স্বপন চক্রবর্তী, বঙ্গ-নিউজ: আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ ১৭ মে রোববার । ১৯৮১ সালের এই দিনে ছয় বছরের নির্বাসন শেষে তিনি দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজটি সেদিন বিকেলে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকায় নামলে বিমানবন্দরে লাখো মানুষ তাঁকে স্বাগত জানায়।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের জন্য নয়াদিল্লি থেকে ঢাকা রওয়ানা হওয়ার কয়েকদিন আগে মার্কিন সাপ্তাহিক নিউজউইক পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কীভাবে গ্রহণ করেন এবং কোন উদ্দেশ্য সাধনে তা প্রয়োগ করবেন সে-সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা এক হৃদয়গ্রাহী ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ১১ মে নিউজউইক-এ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বক্স-আইটেম হিসেবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়: ১৯৭৫ সালে সামরিক চক্র কর্তৃক ক্ষমতাদখলকালে নিহত পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন; এমন কী যে সরকারের মোকাবিলা করবেন তার শক্তিকে তিনি বাধা বলে গণ্য করবেন না। তিনি বলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেসব কাজ অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য বলে আমি বিবেচনা করি, তার মধ্যে থাকবে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।’ নিজের কর্তব্য পালনে তার পিতার অবদান সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন। ‘তার (বঙ্গবন্ধুর) প্রতি বাংলাদেশের জনগণের প্রীতি ও ভালোবাসা ছিল অপরিমিত’ বলেন শেখ হাসিনা। ‘আমাকে (আওয়ামী লীগের) সভানেত্রী নির্বাচিত করে পরোক্ষভাবে তাকেই সম্মান দেখানো হয়েছে। আমি তার অসমাপ্ত কর্মকা- সম্পন্ন করতে পারব।’ [নিউজউইক, ১১ মে ১৯৮১]
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। বিদেশে অবস্থানের কারণে ঘাতকদের হাত থেকে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
এ পর্যন্ত ৪০টির অধিক আন্তর্জাতিক ডিগ্রি ও পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৯৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব ল’ ডিগ্রিতে ভূষিত করে। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট জন্ ওয়েসলিং নিম্নে প্রদত্ত প্রমাণপত্র ‘সাইটেশান’ পাঠ করেন :
“বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
আপনার পিতা বাংলাদেশের জন্য নিজের জীবন বিসর্জস দিয়েছেন। আর আপনিও বারবার নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে এবং নিজের জীবনকে বিপন্ন করে দেশে গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম ঘটিয়েছেন।
সরল অথচ তীক্ষ্ণ বাগ্মিতা দিয়ে আপনি দেশের জনগণের জন্য আপনার সংগ্রামের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন। তা হলো ‘ভাত ও ভোটের অধিকার’। প্রায়ই দেখা যায়, তৃতীয় বিশ্বের জনগণকে ভোটের বিনিময়ে ভাতের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কিছুই পায় না। অথচ, আপনার সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণের ভাত ও ভোট দুটোর নিশ্চয়তাই পাবে।
বাংলাদেশের জনগণের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তাদের সাহস, আর এই সাহস কেবল তাদের ধৈর্যের পরিচায়কই নয়, এর দ্বারা নিজেদের সমৃদ্ধিও বয়ে এনেছে তারা।
যে-বছর আপনি জন্মগ্রহণ করেন, সে-বছর জনগণ ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হলেও পাকিস্তানের নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। আর সেই কারণে আপনার পিতা সিকি শতাব্দী ধরে বাংলার স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন করেন। কিন্তু তাঁকে ও তাঁর জনগণকে একসঙ্গে স্বাধীনতার ফল ভোগ করার সুযোগ বেশি দিন দেওয়া হয়নি। যেসব অফিসার আপনার পিতা, মাতা ও তিন ভাইকে হত্যা করেছে, তারা ভেবেছিল, বাংলার মানুষের প্রতি আপনার পরিবারের সেবা-ভালোবাসার সুযোগ তারা খতম করে দিয়েছে এবং দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আশা সুদূরপরাহত করতে পেরেছে। কিন্তু আপনাকে তারা গণনায় আনতে ব্যর্থ হয়েছিল।
আপনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরবর্তী বছরগুলোতে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল ধারায় প্রকাশ্য ও গোপন সামরিক শাসকদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। আর এই অস্থির প্রেক্ষাপটের বিপরীত ধারায় ছিল দুটো জিনিস। প্রথমত; বাংলার জনগণ এবং দ্বিতীয়ত; শেখ হাসিনা। সে-সময় সেই গণতন্ত্রের কথা কেউ ভুলে যায়নি, যার পরিপ্রেক্ষিতেই জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের। আপনার সত্য কথা বলার অবিচল দৃঢ়তা আপনাকে অপশাসকদের কাছে বিপজ্জনক করে তুলেছিল। তারা আপনাকে আপনার পিতার বাসভবনে বন্দী করে রাখলেও আপনার উদ্যমকে, আপনার চেতনাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিশাল দুর্গের মতো পৈতৃক বাড়ি ও তার উত্তরাধিকারের মধ্যে আটকে থাকলেও আপনার বসবাস ছিল সেই মুক্তির মধ্যে, যে মুক্তি হলো সাহসিকতার মুক্তি। আর আপনার পিতার একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার সিকি শতাব্দী পর আজ আপনি সেখানে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন।
শেখ হাসিনা একজন মহান পিতার সুযোগ্য কন্যা, একটি যোগ্য জনগোষ্ঠীর মহান সেবক। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় গর্বের সঙ্গে আপনাকে ডক্টর অব ল ডিগ্রি প্রদান করছে।”
[দৈনিক ভোরের কাগজ, ঢাকা : ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭]
প্রতিবছর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করলেও এবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৯:০৮ ৬৪০ বার পঠিত #প্রত্যাবর্তন দিবস #প্রধানমন্তীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন #শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যবর্তন