স্বপন চক্রবর্তী, বঙ্গ-নিউজ: মানুষ গৃহবন্ধীতে অভ্যস্থ কোন প্রাণী নয়। ইচ্ছায় হোক বা বাধ্য হয়েই হোক তাদেকে লকডাউনে থাকতে হচ্ছে। একদিন নয় দুই দিন নয় দিনের পর দিন,। সপ্তাহ এরপর মাস। মানুষ ক্রমান্বয়ে অসহ্য হয়ে বিদ্রোহী হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ লকডাউনে হাঁফিয়ে ওঠা ইউরোপের দেশগুলো নানা প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা সহজ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এতে এসব দেশের মানুষ বন্দিদশা থেকে আপাত মুক্তি পেয়ে কিছুটা হাঁফ ছাড়লেও বিধিনিষেধ শিথিলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও চোখ রাঙাচ্ছে।
সোমবার নাগাদ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশ সুস্থ হয়ে উঠলেও প্রাণঘাতী এই ভাইরাস নিষ্প্রাণ করেছে ২ লাখ ৪৮ হাজার জনকে।
এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়েও ভেঙে পড়া অর্থনীতি সচলে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশ ধীরে ধীরে যেভাবে অবরুদ্ধ অবস্থা শিথিল করছে, তা তুলে এনেছে বিবিসি।
কোভিড-১৯ রোগে সবচেয়ে বেশি ৩২ হাজার মানুষ মারা গেছে যুক্তরাজ্যে; তাই সবাইকে বলা হয়েছিল ঘরে থাকতে।
কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি দেখে সাত সপ্তাহ পর বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলছেন, এখন সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্ত হয়ে কাজে ফেরা জনসন রোববারই ব্রিফিংয়ে অর্থনীতি সচল করতে নতুন পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
যুক্তরাজ্যে যারা বাসায় থেকে কাজ করতে পারছেন তাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে। যাদের অফিসে না গেলেই নয়, তারা যেতে পারবেন, তবে তাদের গণপরিবহন এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর অফিসগুলোকে ‘কোভিড-১৯ নীতিমালা’ অনুসরণ করতে হবে, যা পরে প্রকাশ করা হবে।
সূর্যস্নান, হাঁটাচলাসহ নানা কাজে ঘরের বাইরে এখন আরও সময় থাকতে পারবেন যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা; তবে ২ মিটার দূরত্ব রেখে চলতে হবে। তবে খেলার মাঠ ও জিমগুলো বন্ধই থাকবে।
শপিং সেন্টারগুলো জুনে খোলা হতে পারে, তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতিমালা মেনে। সেলুনগুলো বন্ধই থাকবে আপাতত।
সুরক্ষা নিশ্চিত করে গণপরিবহন দ্রুতই চালু করতে চায় সরকার। তবে সবাইকে হেঁটে, সাইকেলে কিংবা নিজের গাড়িতে গন্তব্যে যেতে বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা (৭৫০০) তুলনামূলক কম হলেও আক্রান্তের সংখ্যা জার্মানিতে কম নয়, ১ লাখ ৭১ হাজার।
সেই জার্মানিতে সব দোকানপাটই খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে, আর সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মানতে হবে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতেই প্রথম মাঠের ফুটবল শুরু হচ্ছে। আগামী ১৬ মে বুন্ডেসলিগার ম্যাচ শুরু হতে যাচ্ছে। তবে তা হবে দর্শকশূন্য মাঠে।
ক্ষুদে শিশুদের স্কুলগুলো খুলেছে, বড় শিক্ষার্থীদের যে সব স্কুলে পরীক্ষা চলছে, তারাও খুলতে পারবে।
দুই বাড়ির মানুষ এখন একসঙ্গে মিলিত হতে পারবেন। তবে বড় ধরনের জমায়েত বা উৎসবের নিষেধাজ্ঞা আগামী অগাস্টের আগে উঠছে না।
করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল ফ্রান্স; দেশটিতে পৌনে ২ লাখ আক্রান্তের মধ্যে ২৬ হাজার জন মারা গেছে।
নাজুক পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ অবস্থা ব্যাপক কঠোর ছিল ফ্রান্সে; তখন কারও বাইরে বের হতে হলে অনলাইনে আবেদন করতে হত, তার অনুমোদন মিললে তার প্রিন্ট কপি নিয়ে তবেই কেবল বের হওয়া যেত।
ফরাসিদের এখন সেই ‘ট্রাভেল সার্টিফিকেট’ লাগছে না ঘর থেকেত বের হতে, সোমবার থেকে ইচ্ছা মতো বের হতে পারছেন তারা। ১০ জনের কমে জমায়েত হতেও এখন বাধা নেই।
চারদিকে ৬২ মাইলের মধ্যে নিজের গাড়ি নিয়ে ভ্রমণেও নিষেধ আর নেই। তবে তার বেশি দূরত্বে যেতে হলে অনুমোদন লাগবে।
তবে প্যারিসে ব্যস্ত সময়ে ভ্রমণে কর্মস্থলের অনুমোদন কিংবা যৌক্তিক কারণ দেখাতে হবে।
নার্সারি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে গেছে; মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলবে ১৮ মে। তবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার স্থান দূরত্ব রেখে হবে, আর পরতে হবে মাস্ক। কলেজ জুনের আগে খুলছে না।
ফ্রান্সে সব দোকানপাটই খুলে দেওয়া হয়েছে। অবকাশ কেন্দ্র ও কবরস্থানগুলোর তালাও খুলেছে। তবে বার ও রেস্তোরাঁগুলো আপাতত বন্ধই থাকছে।
ইউরোপের বিপর্যস্ত আরেক দেশ স্পেন মূলত দুই ভাগ হয়ে গেছে বিধি নিষেধ তোলার ফলে। বেশিরভাগ এলাকায় বিধিনিষিধ শিথিল হলেও মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, গ্রানাডা, মালাগাসহ উত্তর-পূর্বের কিছু অঞ্চলে কঠোর লকডাউনই থাকছে।
এক মাসের বেশি সময় গড়িয়ে শিশুদের বাইরে বের হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর ২৬ মে থেকে স্কুলগুলোও আংশিকভাবে খুলছে।
বার ও রেস্তোরাঁগুলো ১০ জুনের আগে সম্পূর্ণ খুলছে না। তবে এখন বারের বাইরে দাঁড়িয়ে বিয়ার কেনা যাচ্ছে। তবে তাও সামাজিক দূরত্ব মেনে।
২৬ মে থেকে সিনেমা হল, থিয়েটার ও প্রদর্শনী কেন্দ্রগুলো খুলছে স্পেনে; তবে ধারণ ক্ষমতার ৩০ শতাংশ দর্শকের বেশি ভেতরে ঢোকানো যাবে না। বাইরে কনসার্টও করা যাবে সর্বোচ্চ ৪০০ দর্শক নিয়ে, তবে সেখানেও সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মানতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৫:১৫ ৫২৬ বার পঠিত # #করোনা ভাইরাস #মহামারি আকারে করোনা ভাইরাস #সারা বিশ্বে করোনা